November 25, 2024
হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন, কী করবেন না

হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন, কী করবেন না

হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন, কী করবেন না

হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন, কী করবেন না

অনেক সময় একটু অসাবধানতায় সব স্বপ্ন ভেস্তে যেতে পারে। প্রতিদিন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত আগুন কখনও কখনও ভয়ানক দুর্ঘটনা বা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আর অগ্নিকাণ্ডের পরপরই কিছু ভুলের কারণে হতাহতের বা মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নিজেকে স্থির রেখে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক আগুন লাগলে কী করবেন আর কী করবেন না।

প্রতিদিন আগুন ছাড়া যেমন মানুষের জীবন চলে না, তেমনি এই আগুন অনেক বিপদের কারণ। একটু অসাবধানতা সব শেষ করে দিতে পারে। তবে সচেতন হলে অনেক ক্ষেত্রেই আগুন এড়ানো যায়। আর আগুন লাগলে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ বলছে, অসাবধানতাই আগুনের মূল কারণ। আর সচেতন হলেই আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।

আগুন নেভাতে হলে প্রথমেই আগুনের ধরন জানতে হবে। কারণ পানি দিয়ে গ্যাসের আগুন নেভাতে পারবেন না। আগুনের উৎপত্তি, পোড়া যাওয়া উপাদান… এগুলোর ভিত্তিতে আগুন সাধারণত ৪ প্রকার-

১.  কঠিন আগুন (কাঠ, বাঁশ ইত্যাদির আগুন)
২. তরল আগুন (তেল, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি আগুন)
৩. গ্যাসের আগুন (গ্যাসের লাইন, গ্যাসের চুলা, ইত্যাদি)
৪. ধাতব আগুন (সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদির আগুন)

অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা হল আগুনের ধরন বুঝে তা নিভানোর ব্যবস্থা নেওয়া। হঠাৎ কোথাও আগুন লাগলে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে হবে। তারপর নিরাপদ স্থানে চলে যান এবং ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুনের ধরন বুঝে আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন।

১. কঠিন অগ্নি নির্বাপক

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ছিটিয়ে এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

২. তরল অগ্নি নির্বাপক

এই ধরনের আগুন জল দিয়ে নেভানো যায় না। পরিবর্তে, জল ব্যবহার করা হলে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাই এই ধরনের আগুনে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস, ফোম, শুকনো পাউডার… এগুলো বেশি কার্যকর। কিন্তু এগুলোর কোনোটি না থাকলে, হাতে বালি থাকলে তা ছিটিয়ে এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

৩. গ্যাস অগ্নি নির্বাপক

এই ধরনের আগুনে জল সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর। এই আগুন নেভাতে হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, শুকনো গুঁড়া ইত্যাদির সাহায্যে।

৪. ধাতু অগ্নি নির্বাপক

ধাতব আগুন জল দিয়ে নেভানো যায় না। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, শুকনো গুঁড়া, ফেনা, বালি ইত্যাদি ব্যবহার করে এই ধরনের আগুন নেভানো যায়। তবে হাতের কাছে কম্বল, ছালার বস্তা, ভারী বস্তা বা কম্বল থাকলে চাপ প্রয়োগ করে এই আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাদের এবং আগুনে রাখার আগে সেগুলি ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। তাহলে দ্রুত কাজ হবে।

আগুন এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

১. বাড়িতে বা যেকোনো বাণিজ্যিক জায়গায় রান্না করার পর গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে চুলা না ফুঁকিয়ে গ্যাসের চাবি বন্ধ করে দিতে হব।

২. বাড়িতে ডিশওয়াশার ছোট বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন। তাদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে বিরত রাখুন।

৩. আগুন লাগার উপযোগী জায়গায় মোমবাতি বা মোমবাতি না রাখা এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ না খোলার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। একেবারে প্রয়োজন হলে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করুন। মোমবাতি বা মোমবাতি জ্বালিয়ে কখনই ঘুমাবেন না।

৪. গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে সবসময় রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিন।

৫. নতুন বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করার সময় নিম্নমানের পণ্য এড়িয়ে চলুন। একজন যোগ্য ইলেকট্রিশিয়ানের সাহায্য নিন।

৬. বাড়িতে বা ব্যবসায় অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখুন। যদি তা সম্ভব না হয়, দুটি বালতি বা বালি স্টকে রাখুন। আপনার যদি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকে তবে এটি নিয়মিত পরীক্ষা করুন।

৭. বাড়ি বা ব্যবসার বৈদ্যুতিক সংযোগের মেইন সুইচ খোলা রাখুন। যাতে আগুন লাগার ক্ষেত্রে মেইন সুইচটি বিনা বাধায় বন্ধ করা যায়।

৮. বৈদ্যুতিক সুইচ বা মাল্টিপ্লাগের কাছে কাগজপত্র বা অনুরূপ বস্তু রাখবেন না। টিভি, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মোবাইল ফোনের চার্জার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক আউটলেটে লাগিয়ে রাখবেন না। শেষ হয়ে গেলে, সুইচটি বন্ধ করুন এবং এটি আনপ্লাগ করে রাখুন।

৯. ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখার চেষ্টা করুন এবং সেটা ব্যবহারবিধি ভালোভাবে আয়ত্তে রাখুন।

আগুন লাগলে করণীয়

১. সতর্কতা অবলম্বন করা হলেও আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে প্রথমে মাথা ঠান্ডা রেখে আগুন কোথা থেকে শুরু হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি একটি ছোট আগুন আছে, একটি অগ্নি নির্বাপক ব্যবহার করে এটি নিভিয়ে ফেলুন. কাছের ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিন। প্রয়োজনে জরুরি পরিষেবা নম্বরে কল করুন।

২. আগুন লাগলে প্রথমে নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করুন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করুন। আগুন বড় হলে ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে ক্রাউচ করে বা হামাগুড়ি দিয়ে বের হতে হবে। মুখ পুরোপুরি ঢেকে ধোঁয়ার নিচে বেরিয়ে আসতে হবে।

৩. রান্নাঘরে আগুন লাগলে সাথে সাথে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করুন।

৪. সিঁড়িতে ধোঁয়া দেখতে পেলে কখনও উপরে যাবেন না। পরিবর্তে, একটি খোলা বারান্দা বা জানালায় যান এবং বাইরের লোকের সাহায্য নিন।

৫. ধোঁয়াটে রাস্তা এড়িয়ে চলুন। ধোঁয়া বাড়ার সাথে সাথে নীচের বাতাসে অক্সিজেন বেশি থাকে।

৬. বহুতল ভবনে জরুরি বহির্গমন (নিরাপদভাবে ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প উপায়) থাকতে হবে। সেন্ট্রালাইজড ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমের সাথে বহনযোগ্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকতে হবে।

৭. আগুন লাগার ক্ষেত্রে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয়। ধোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন।

৮. নাকে-মুখে ভেজা রুমাল বা কাপড় পেঁচিয়ে ভবন থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে বের করতে হবে। আশেপাশে কাঁচের জানালা ও দরজা থাকলে সেগুলো ভেঙে বাতাস চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। এতে করে ধোঁয়া বেরিয়ে যাবে।

৯. আগুন লাগলে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস বা জরুরি সেবার নম্বরে কল করা জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X