November 21, 2024
আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস আজ

আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস আজ

আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস আজ

আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস আজ

আজ রমজানের শেষ শুক্রবার, আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। মুসলমানদের প্রথম কেবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার আন্দোলনের প্রতীকী দিন এটি। ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা অব্যাহত থাকা অবস্থায় বিশ্বজুড়ে এবার দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে।

১৯৬৭ সাল থেকে দখলদার ইসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে আছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকা ও জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নতুন করে গণহত্যা শুরু করে ইসরাইল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন ৭৪ হাজারেরও বেশি নাগরিক।

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী (রহ.) ফিলিস্তিন ইস্যুকে ইসলামিকরণ করেন এবং পবিত্র জুমআতুল বিদাহ আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস পালনের আহ্বান জানান। মুসলমানদের প্রথম কেবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার আন্দোলনের প্রতীকী দিন এটি। ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ, ইহুদি, ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ইসরায়েলের জেরুজালেম দখলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করাই এই দিবসের উদ্দেশ্য। আরবি ভাষায় জেরুজালেম শহরের আরেকটি নাম হল ‘কুদস’ বা ‘আল কুদস’।

ফিলিস্তিন দখলকারী ইহুদিদের হাত থেকে প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ এবং পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করতে মুসলমানদের জাগ্রত করাই এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়াও, এই দিনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, ইহুদি শাসন, শোষণ, নিপীড়ন এবং তাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অবসান ঘটাতে পারে।

পবিত্র শহর আল কুদস বা বায়তুল মুকাদ্দাস হল মক্কা মুয়াজ্জমা এবং মদীনা মুনাওয়ারার পরে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান এবং মুসলমানদের কাছে অন্যতম প্রিয় স্থান। ইসলামের প্রথম কিবলা, মসজিদ আল-আকসা, সেখানে অবস্থিত। বায়তুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেম শুধু মুসলমানদের কাছেই নয়, বিশ্বের ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছেও অত্যন্ত প্রিয় ও পবিত্র স্থান।

ইসলামের নবী, হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র মিরাজ সফরের সময় সমস্ত নবীদের সাথে মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় করেছিলেন। তিনি সকল নবী-রাসূলগণের ইমাম ছিলেন যারা নামাযে অংশগ্রহণ করতেন। এ ছাড়া বনী ইসরাঈলের নবী যেমন হজরত মুসা (আ.), হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলাইমান (আ.) এবং হজরত ঈসা (আ.) ছিলেন এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ধর্ম প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মাকবার (কবর) ফিলিস্তিনের আল-খলিল শহরে অবস্থিত। আল-কুদস, মসজিদ আল-আকসা এবং আশপাশের এলাকাগুলো হাজার হাজার নবী-স্মৃতি নিয়ে ফিলিস্তিনের ভূমিতে অবস্থিত।

হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববি এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদুল আকসা সফরকে বিশেষভাবে কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই মসজিদকে ঘিরে বহু নবীর দাওয়াতমূলক মিশন পরিচালিত হয়েছে। সুতরাং বায়তুল মুকাদ্দাস পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মত একটি সাধারণ স্থান নয়।

বায়তুল মুকাদ্দাস এবং এর আশেপাশের এলাকা এবং ফিলিস্তিনের সমগ্র ভূমি অনেক নবী ও রসূল (আ.)-এর স্মারক এবং সমগ্র ভূমিকে কুরআনে ‘আদে মুকাদ্দাস’ বা ‘পবিত্র ভূমি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে মসজিদুল আকসা, বায়তুল মুকাদ্দাস এবং ফিলিস্তিনের পবিত্র নামগুলো মুসলমানদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) মক্কায় কাবা নির্মাণের চল্লিশ বছর পর বায়তুল মুকাদ্দাসে মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন। এরপর হজরত সুলাইমান (আ.) বায়তুল মুকাদ্দাসের এই পবিত্র মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন।

কিন্তু হযরত মুসা (আ.)-এর জীবদ্দশায় ইহুদিরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস হারিয়ে মূর্তিপূজা শুরু করে  করেছিল এবং আল্লাহ্ তাআলার শাস্তি হিসেবে তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এরপর ইহুদীরা অনেক নবীকে হত্যা করে।

বায়তুল মুকাদ্দাসে হজরত সুলাইমান (আ.)-এর নির্মিত উপাসনালয়টি এখনও বিদ্যমান বলে দাবি করে ইহুদিবাদীরা।

কিন্তু এটি খ্রিস্টপূর্ব ৭০ সালের দিকে রোমান সেনাবাহিনী দ্বারা বিলীন হয়ে যায় এবং এর অবস্থান বর্তমান আল আকসা মসজিদ থেকে অনেক দূরে ছিল। ফিলিস্তিনে রোমান শাসনের সময় ঈসা (আ.) সেই অঞ্চলের মানুষের মুক্তিদাতা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বায়তুল মুকাদ্দাসের উপাসনালয়ে ঈসা (আ.)-এর সফরে তৎকালীন ইহুদি ধর্মযাজকরা ক্ষুব্ধ হন। কারণ, তিনি জনগণের কাছে একতাবাদী শিক্ষা প্রচার করেছিলেন। ক্রুদ্ধ ও বিপথগামী ইহুদি ধর্মযাজকরা রোমান শাসককে ঈসার (আ ) বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ করে এবং তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ হজরত ঈসা (আ.)-কে হেফাজত করেছিলেন এবং তাঁকে এখন পর্যন্ত অদৃশ্য অবস্থায় জীবিত রেখেছেন। কিন্তু খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে ঈসা (আ ) ক্রুশবিদ্ধ  মারা গেছেন। আর এ জন্য তারা ইহুদিদের ওপর ক্ষুব্ধ। ৭০ খ্রিস্টাব্দে হযরত ঈসা (আ.)-আল্লাহ কর্তৃক আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার পর খ্রিস্টানরা ভেবেছিলেন ঈসা নবী হয়ে মারা গিয়েছেন এরপর রোমানদের আক্রমণে বিধ্বস্ত ইহুদিরা গৃহহীন ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে, রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন নিজেই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।  এবং সেই সময়ে বেথলেহেমে ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান হওয়ায় বায়তুল মুকাদ্দাসকে খ্রিস্টানদের কেন্দ্রীয় শহর হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ১৩৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসে কিছুসংখ্যক ইহুদি বাস করত। তারপর নবুওয়াতের প্রথম চৌদ্দ বছর পর্যন্ত মসজিদুল আকসা ছিল মুসলমানদের প্রথম কেবলা। ইহুদীরা মুসলমানদের উপহাস করত কারণ মুসলমানরা ইহুদীদের কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। কেন শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ইহুদী বংশোদ্ভূত জন্মগ্রহণ করেননি তা ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদীদের ক্ষোভের একটি বড় কারণ। এমতাবস্থায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে আল্লাহর নির্দেশে পবিত্র কাবা মুসলমানদের কেবলা হয়ে যায়।

খুলাফায়ে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) তাঁর নেতৃত্বে ৬৩৮ খ্রি. তিনি পুরো ফিলিস্তিন জয় করেন এবং পরবর্তীতে মসজিদ আল-আকসা সহ সেই পবিত্র স্থানে বেশ কিছু মসজিদ ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। তারপর ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় ক্রুসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করার পর বায়তুল মুকাদ্দাসসহ বিভিন্ন ইসলামিক ভবনের ব্যাপক পরিবর্তন করে।  বিশেষ করে মসজিদ আল-আকসাকে গির্জায় পরিণত করে। । পরবর্তীতে, মুসলিম যোদ্ধা সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.) ১১৮৭ সালে জেরুজালেম শহরটি মুসলমানদের কাছে ফিরিয়ে আনেন। তারপর থেকে, খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা ফিলিস্তিনে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। ইহুদিরা ওই সময় থেকেই তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তৎকালীন উসমানীয় খলিফা সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের অনুমতি চায়। কিন্তু ইহুদিদের দেওয়া প্রস্তাব ও  তাদের এই অবৈধ আবদার প্রত্যাখ্যান করেন সুলতান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X