November 21, 2024
খাবারে শিষ্টাচার

খাবারে শিষ্টাচার

খাবারে শিষ্টাচার

খাবারে শিষ্টাচার

খাবার সৃষ্টিকর্তার অনন্য নেয়ামত। থেকে আবার গ্রহণ জীবন ধারণের অন্যতম অনুষঙ্গ।  তাই খাবার গ্রহণে প্রদানে মেহমান মেজবান এবং ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক ও   পারিবারিকভাবে রয়েছে কিছু চমৎকার শিষ্টাচার

খাবারে নির্দিষ্ট কতিপয়  আচার-আচরণ পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পারিবারিক, সামাজিক বা ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে শিষ্টাচারের অভাব আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। আশেপাশে অপরিচিত লোক থাকলেও শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। কারো আচরণে অন্য কেউ বিরক্ত হবে এটা একেবারেই কাম্য নয়।

অনেকেই অনেকেই হয়তো আমরা খাবারের  শিষ্টাচার জানিনা  বা আমলে নেইনা । কারণ প্রত্যেকেই ভিন্ন পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটে বেড়ে ওঠেছি।

যাইহোক, কয়েকবার  চেষ্টা করলে এই মৌলিক শিষ্টাচারগুলো আয়ত্ত করা সম্ভব। এগুলি মনে রাখাও সহজ।  খাবার গ্রহণে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে-

খাবার পরিবেশন

হোস্টের ডান দিক থেকে টেবিলে খাবার পরিবেশন করা উচিত। ডান  দিক থেকে খাবার নেওয়ার পর বাম  দিকে রেখে দিতে হবে। আর হোস্ট না থাকলে একজন আরেকজনকে দিতে পারেন। এভাবে সবাই সব খাবার নিয়ে যাবে। আপনি যে খাবারটি খেতে চান তা নাগালের মধ্যে না থাকলে, পাত্রটির কাছে থাকা মানুষটিকে অনুরোধ করুন পাত্রটি এগিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্যকে টপকে বা খাবার টেবিলে ভর দিয়ে পাত্রটি টেনে নিতে যাবেন না।

হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসা

আমরা সবাই ছোটবেলায় খাবার আগে হাত ধোয়া শিখেছি। আপনি যদি অন্যদের সাথে খেতে একই টেবিলে বসেন তবে আপনার হাত এবং মুখ ধুয়ে সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং পরিপাটি অবস্থায় আসুন।

চিবানোর আওয়াজ না করা

খাওয়ার সময় চিবানোর আওয়াজ অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে। মন যে রাখতে খাবার মজলিসে জোরে খাওয়া খারাপ আচরণ দেখায়। মুখ বন্ধ করে খেলে এই শব্দ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মুখ বন্ধ করে চিবিয়ে নিন। কাউকে মুখে খাদ্য থাকা অবস্থায় জোরে চিবাতে দেখলে শুধু খারাপই নয়, অভদ্র বলেও বিবেচিত হয়।

পড়ে থাকা খাবার তোলে খাওয়া

কখনো কখনো প্লেট বা বাটি থেকে খাবার নিচে পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে এটি তুলে নেওয়া, ময়লা পরিষ্কার করা এবং সম্ভব হলে খাওয়া ভালো। যদি না হয়, এটি একটি পশু দিয়ে দিন। আরেকটি নিয়ম হলো খাবার চেটেপুটে খাওয়া এবং পাত্রে খাবার না রাখা।

মুখে খাবার নিয়ে কথা বলবেন না

খাবার মুখে নিয়ে কথা বলতে যাবেন না। আগে মুখের খাবার শেষ করুন , তারপর কথা বলুন । খাওয়ার সময় অধিক কথা বলার দৃশ্য অন্যদের জন্য অপ্রীতিকর। এছাড়াও, মুখভর্তি খাবার নিয়ে কথা বলার সময়, মুখ থেকে খাবার বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, যা বিরক্তিকর এবং বিব্রতকর।

অনেকেই দারুণ আলোচনা করে রাতের খাবার টেবিল গরম করেন। ভাল, ইতিবাচক কথোপকথনে  থাকুন।   নেতিবাচকতা, সমালোচনা একেবারেই এড়িয়ে চলুন। রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় বেশি উত্তেজিত হবেন না। নিজে শান্তিতে খান, অন্যকেও শান্তিতে খেতে দিন।

পান করার সময় শব্দ করবেন না

অনেকে স্যুপ, ডাল, কফি, চা, জুস, দুধ এমনকি পানি পান করার সময় শব্দ করে। দয়া করে এমন শব্দ করবেন না। এই ধরনের শব্দ ভদ্র আচারের বাইরের কাজ।

অন্যদের জন্য অপেক্ষা করুন

টেবিলে বসার সাথে সাথে খাওয়া শুরু করবেন না। অন্য অংশীদার এবং সমস্ত খাবার টেবিলে না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আবার, তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠবেন না। এটি একটি খাদ্য প্রতিযোগিতা নয়। টেবিলে সবার সাথে একই  গতিতে খাওয়া সৌন্দর্য ।

হাড় বা কাঁটা হাড়ের প্লেটে রাখুন

হাড়, কাঁটা বা খাবারের অব্যবহৃত অংশগুলিকে টেবিলে না রেখে হাড়ের প্লেটে রাখুন। যদি টেবিলে কোন বোনপ্লেট না থাকে তবে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে টেবিলে হাড়ের প্লেট রাখতে বলুন।

প্লেট বা চামচ জিহবা দিয়ে চাটবেন না

খাবার যতই মজাদার হোক না কেন, প্লেট বা চামচ জিহবা দিয়ে  চেটে খাবেন না। খাবারটা অনেক মজার ছিল তা দেখানোর জন্যও অনেকে এটা করে থাকেন। আপনার জিহ্বা সবসময় আপনার মুখের ভিতরে থাকা উচিত, বিশেষ করে যখন অন্যদের মতো একই টেবিলে খাচ্ছেন।  একান্তই প্রয়োজন হলে  একা খাওয়ার সময় এটি করা যেতে পারে, তবে অন্যদের উপস্থিতিতে এটি বেশ লক্ষণীয় দোষ ।

ঢেকুর তুলবেননা

আপনি যদি খাওয়ার সময় ঢেকুর দেন, অনুগ্রহ করে ওয়াশরুম বা বারান্দায় যান এবং ঢেকুর দিয়ে আসুন । জনসমক্ষে খাবার  গ্রহণে  বা পেশাদার অনুষ্ঠানে ঢেকুর প্রদর্শন অনুচিত।

হাত পা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অনেকে খাবার টেবিলে পা ছড়িয়ে বসে। এটি টেবিলের নীচে অন্য লোকের পায়ের সাথে লেগে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অন্যরা তাদের পা আরামদায়কভাবে রাখতে পারে না। হাতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যদের সাথে খাবার শেয়ার করার সময় আপনার হাত ও পা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এই আচরণগুলি অন্যদের বিরক্ত করে।

মোবাইল ফোনের দিকে মনোযোগ কমিয়ে দিন

মোবাইল ফোন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় অসস্তিকর বস্তু হয়ে উঠছে । অন্য লোকের সাথে খাবার  গ্রহণে , তাদের সঙ্গ উপভোগ করুন, তাদের সাথে কথা বলুন। খাবার এবং সঙ্গীদের প্রতি মনোযোগ দিন। তখন মোবাইল ফোনের দিকে মনোযোগ কমিয়ে দিন

চামচ দিয়ে অতিরিক্ত আওয়াজ করবেন না

অনেকেই চামচ, ছুরি, কাঁটা দিয়ে খাওয়ার সময় অতিরিক্ত শব্দ করে। অনেকে আবার ছুরি বা কাঁটা দিয়ে দাঁত, নখ ঘষে। এটি অন্যের রুচি নষ্ট করে দে । এই এই বেখেয়াল কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকুন।

বসে খাবার খান আর পাত্রে ফুঁক দিয়েননা

বসে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন দাঁড়িয়ে খাবার না খাওয়াই ভালো। সেটা খাবার বা পানীয় জাতীয় যাই হোক না কেন বসে খাওয়া উচিত। এবং খাবারের প্লেটে,চায়ের কাপে বা পানির গ্লাসে কখনো ফুঁক দিবেন না

দাঁত নাক চক্ষু খোঁচাবেননা

খাবার গ্রহণের সময় দাঁতে মাংস অথবা কোন কিছু লেগে গেলে মানুষের সামনে দাঁত বের করে খোঁচাবেননা। হাত দিয়ে আড়াল করে নিন। চোখ এবং নাকের ময়লা ও খাবার খাওয়ানোর সময় হেয়ালের বসে খোঁচানোর চেষ্টা করবেন না।

মুখে ফুড়ুৎ না দেয়া
খাবারের কোন অংশ মুখ দিয়ে ছুড়ে মারবেন না বা মারবেন না । এটা দেখতে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু।
টিসু ব্যবহার করুন

একটি রেস্টুরেন্ট বা ইভেন্টে খাওয়া শুরু করার আগে আপনার হাতে  টিসু রাখুন। আপনি খাবারের মধ্যে আপনার মুখ হালকাভাবে মুছতে ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন। খাবারের মাঝে কাশি বা হাঁচি দিলেও টিসু ব্যবহার করুন।

টেবিল পরিষ্কার করতে সাহায্য করুন

রেস্টুরেন্ট বা ইভেন্টে খাওয়ার পর টেবিল পরিষ্কার করতে সাহায্য করার দরকার নেই। তবে বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে তা করতে পারেন। বাড়িতেও আপনার সঙ্গী বা মাকে টেবিল পরিষ্কার করতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তানকেও এই শিক্ষা দিন। পাশাপাশি বাড়ির অন্যান্য কাজে সাহায্য করুন।

উপরে উল্লিখিত পয়েন্টগুলি মৌলিক শিষ্টাচারের অংশ। বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের প্রায়ই কাজ এবং ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষের সাথে মিশতে হয়। তাই এই সাধারণ, মৌলিক এবং সহজ শিষ্টাচারগুলি অনুসরণ করলে সবার কাছে আপনার একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X