ডাবের পানির উপকারিতা
ডাব
কচি নারকেলকে ডাব বলা হয়। ডাবের পানি হলো কচি ডাবের ভেতরের রস। ডাব নারিকেল হওয়ার সাথে সাথে ডাবের পানি কমে যায় এবং তার জায়গায় নারিকেলের খোসা ভিতরে জমে যায়।
ডাবের পানির স্বাদ মাটির মানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার ডাব মিষ্টি, কিন্তু ব্রাজিলের ডাব একটু পানশে। আবার, বাংলাদেশের ডাবের পানি বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদ।
যেসব দেশে স্যালাইন পাওয়া যায় না, সেখানে পানিশূন্যতা রোধে ডাবের পানি প্রায়ই শিরায় স্যালাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গরমে ঠাণ্ডা হতে ডাবের পানির বিকল্প নেই। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি শীতের সময় ডাবের পানি পান করার অভ্যাস অনেকেরই আছে। কিন্তু জানেন কি, গরম বা ঠাণ্ডা যে কোনো আবহাওয়ায় ডাবের পানি পান করলে শরীরে পরিবর্তন আসে?
পুষ্টির ভালো উৎস
ডাবের জলে ৯৪ শতাংশ পানি এবং খুব কম চর্বি থাকে। এক কাপ বা ২৪০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে ৬০ ক্যালরি ছাড়াও ১৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৮ শতাংশ চিনি, প্রতিদিনের চাহিদার ৪ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৪ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ২ শতাংশ ফসফরাস এবং ১৫ শতাংশ পটাশিয়াম রয়েছে।
ডাবের পানি পানের ওপর জোর দিচ্ছেন সকল চিকিৎসকরাই। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শুধু গরমে নয়, সারা বছর নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে পারলে অনেক রোগ শরীরের ধারে কাছেও আসতে পারে না। শুধু তাই নয়, পানিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং জিঙ্ক নানাভাবে শরীর গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানগুলি আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন।
ত্বকের উন্নতি
ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক টোনার, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি ত্বকের সার্বিক উজ্জ্বলতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি, এই প্রাকৃতিক উপাদানটি ব্রণ ব্রেকআউট কমাতেও সাহায্য করে।
ওজন কমানো
ডাবের পানিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারী এনজাইম হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। ফলে শুধু খাবার খেলেই তা এত ভালোভাবে হজম হয় যে শরীরের অন্দরে হজম না হওয়া খাবার চর্বি হিসেবে জমা হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। ডাবের পানি শরীরে লবণের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলস্বরূপ, পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
ডাবের পানিতে উপস্থিত ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাশিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রেখে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই যাদের এই রক্তচাপ রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের নিয়মিত ডাবের পানি পান করা উচিত।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে
গবেষণায় দেখা গেছে যে ডাবের পানিতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবার ইনসুলিনের ক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থায়ামিন এবং পাইরিডক্সিনের মতো উপকারী উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি এতটাই বেড়ে যায় যে জীবাণুরা ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
শরীরে পানির ঘাটতি দূর করতে
ডাবের পানি শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই পানির ঘাটতি দূর হবে। এছাড়াও, এতে উপস্থিত ইলেক্ট্রোলাইট কম্পোজিশন ডায়রিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পরে শরীরে খনিজ ঘাটতি পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই ডাক্তাররা গরমে প্রতিদিনের সঙ্গী হিসেবে ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেন।
হার্ট টনিক হিসেবে
শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে, ডাবের পানি পানের বিকল্প নেই। শুধু তাই নয়, ডাবের পানি পান শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মাথাব্যথা দূর করতে
ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের আক্রমণ হলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি পান করুন। এমনটা করলে দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমে যাবে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরের বয়স কমবে
বয়স বাড়লেও কি শরীরের বয়স ধরে রাখতে চান? তাই আজ থেকেই ডাবের পানি পান করা শুরু করুন। সুবিধা দেখতে পাবেন। আসলে, ডাবের পানিতে সাইটোকিনিস নামক অ্যান্টি-এজিং উপাদান থাকে, যা শরীরে বার্ধক্যের লক্ষণ দেখাতে বাধা দেয়। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে
উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন দূর হয়, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
মানসিক চাপ কমায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কলের পানিতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম একদিকে যেমন মানসিক চাপ কমায়, তেমনি পেশীর গতিশীলতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, ডাবের পানিতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।