রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার
রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প নেই। বিশেষ করে ইফতার ও সেহরীর সময় । যদিও আমরা মজাদার ও মুখরোপচক খাবারে অভ্যস্ত। তারপরেও কতিপয় স্বাস্থ্যকর খাবারের পরামর্শ দেওয়া হলো। রোজায় স্বাস্থ্য ঠিক রেখে পর্যাপ্ত পরিপূর্ণ ইবাদত গ্রহণের জন্য এ সকল খাদ্য অপরিহার্য।
প্রতিবছরের মতো সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান রমজান পালন করছেন। এই রমজান মাসে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নাজিল হয়েছে। এই সময়ে মুসলমানদের জন্য এক মাসব্যাপী রোজা বাধ্যতামূলক এবং এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।
সাধারণত সুস্থ মানুষের রোজা রাখার বিধান রয়েছে। অসুস্থ, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু, গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী মা বা ঋতুস্রাবকারী মহিলা এবং ভ্রমণকারীদের জন্য রোজা ছাড় দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু রোজা রেখে কোনো খাবার বা পানীয় খাওয়া যাবে না, সেহেতু রোজা শুরুর আগে সেহরি এবং শেষ করার জন্য ইফতার এই মাসজুড়ে ভলোভাবেই আনুষ্ঠানিকতা পায়।
রমজান মাস এলেই মুসলমানদের কাছে মিষ্টি খাবারের পাশাপাশি ভাজা খাবারের চাহিদা আকাশচুম্বী। কিন্তু এই সব খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে শরীর খারাপ হতে থাকে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে রমজানের কিছু প্রয়োজনীয় টিপস অনুসরণ করতে পারেন।
সেহরিতে কী ধরনের খাবার থাকতে পারে?
রোজার প্রস্তুতি শুরু হয় সেহরির মাধ্যমে। এর জন্য সঠিক ধরনের খাবার খাওয়া জরুরী যা সারাদিন ক্ষুধার লড়াইয়ে সাহায্য করবে।
- রমজানে দিনের শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সেহরি ও ইফতারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- প্রধানত পুষ্টিকর কিন্তু খুব ভারী নয়, উন্নত খাবারের উপর জোর দিন।
- দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, শসা-টমেটো সালাদ, ফল, স্যুপ, অলিভ অয়েল বা কম তেলে রান্না করা সবজির মতো খাবারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে ।
- মাছ, মাংস এবং শাকসবজি ছাড়াও অনেক পুষ্টিবিদ ‘দাই-চিরা’ জাতীয় খাবারকেও প্রাধান্য দিতে হবে ।
- শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন প্রায় সবাই।
- ভোরের সেহরিতে জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়া ভালো, বিশেষ করে গোটা জাতীয় শস্য। কারণ এই ধরনের খাবার ধীরে ধীরে শরীরে শক্তি জোগায় যা সারাদিনের জন্য উপকারী।
- আরেকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত যে খাবারগুলিতে উচ্চ ফাইবার রয়েছে কিনা? কিছু গবেষণা দেখায় যে মটরশুটি, মসুর বা ছোলা জাতীয় খাবার ৩০ শতাংশেরও বেশি পূর্ণতার অনুভূতি বাড়ায়।
- আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে ডাল, খোসাসহ রান্না করা আলু বা মূল শাকসবজি, বাদাম, তৈলবীজ এবং ফল অন্তর্ভুক্ত থাকে। আটার রুটি ছাড়াও ব্রাউন রাইসেও ফাইবার থাকে।
- যাইহোক, পর্যাপ্ত পানি পান করার পাশাপাশি, পুষ্টিবিদগণ বিশেষভাবে লবণাক্ত খাবার সম্পর্কে সতর্ক করে কম খেতে বলেন ।
- লবণাক্ত খাবার তৃষ্ণা বাড়ায় এবং সারাদিন পানি পান করতে পারে না এমন পরিস্থিতিতে কেউ থাকতে চায় না।
- সেহরির সময় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতারে কি ধরণের খাবারথাকতে পারে?
ইফতারের খাবারের ধরনও দেশ ভেদে এবং সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ভাজা খাবার বাংলাদেশে খুব সাধারণ যা সাধারণত খুব স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষ করে তেল ভালো না হলে আরো খারাপ। স্বাস্থ্যগত কারণে ভাজা খাবার ত্যাগ করবে এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
- রোজা ভাঙার সময় শরীরকে শক্তি জোগাতে প্রাকৃতিক শর্করা যুক্ত খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার পান করা জরুরি। এই চাহিদা মেটাতে নবীর সময় থেকেই মানুষ খেজুর খেয়ে আসছে।
- শক্তি সংরক্ষণ করতে এবং শরীরের পানির ঘাটতি পূরণের জন্য খেজুর এবং পানি ইফতার করার একটি দুর্দান্ত উপায়।”
- এছাড়া ডাল, শিম বা শিম, বীজ ও সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপকে পুষ্টিবিদরা চমৎকার বলে উল্লেখ করেন। কারণ এটি গ্যাসের অনুভূতি ছাড়াই শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং ফাইবার সরবরাহ করে।
- সারাদিন না খাওয়ার পরে ভারী খাবার দিয়ে শুরু করা আপনাকে ক্লান্ত, অলস এবং অসুস্থ বোধ করতে পারে।
- তাই এ ধরনের খাবার পুরোপুরি বাদ না দিলেও পরিমিত পরিমাণে খেতে বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
- তবে ইফতারের খাবার ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত। যেমন স্টার্চি বা চিনিযুক্ত খাবার, ফাইবার সমৃদ্ধ শাক-সবজি-ফল, দুগ্ধজাত খাবার, প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ-মাংস বা ডিম ভারসাম্য রেখে খেতে হবে।
- মিষ্টি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এতে ওজন বাড়তে পারে।
- কিছু পুষ্টিবিদ ইফতারের খাবারকে একবারে বেশি না খেয়ে দুই ভাগে ভাগ করার পরামর্শ দেন। কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বদহজমের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
- ইফতারে সপ্তাহে একদিনের বেশি খাওয়া ঠিক আছে, তবে এটি প্রতিদিন হওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল বোধ করবেন এবং পরের দিন রোজা রাখতে কম অনুপ্রাণিত হবেন।’
- সেক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, পানি দিয়ে ইফতার শুরু করুন এবং খেজুর ও কিছু ফল খেয়ে নামাজ শেষ করুন। তারপর বাকিটা খেয়ে নিন। খাবার যাই হোক না কেন, নিশ্চিত করুন এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং সবজি আছে।