মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় যে অভ্যাসগুলো
মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং আমাদের স্মৃতি, অনুভূতি এবং চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্ক যত বেশি ব্যবহার করা হয়, এটি তত শক্তিশালী এবং কার্যকর হয়। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস আছে যা অজান্তেই মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। যেমন
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন কাজের অনেক পরিবর্তন এসেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে কাজ করছি কম্পিউটার, ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কম হয়। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক কার্যকলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য সপ্তাহে ৫ দিন আধা ঘণ্টা অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা জরুরি। এছাড়াও, একটানা বসে থাকবেন না এবং প্রতি ১৫থেকে ৩০ মিনিটে একটু একটু বিরতি নিন।
অপর্যাপ্ত ঘুম
অনেকেই তাদের ব্যস্ত জীবনে ঘুমের মূল্যকে উপেক্ষা করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, সারাদিন আপনাকে সক্রিয় রাখে। ভালো ঘুমের জন্য সময়মতো ঘুমাতে যেতে হবে, ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও, ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে সব ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন।
অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নারীদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ক্লান্তি এবং অনিদ্রার কারণ হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো, অত্যধিক স্ক্রিন টাইম শিশুদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। এই কারণে প্রত্যেকেরই স্ক্রিন টাইম সীমিত করতে হবে।
পানি কম পান
পানি মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। এই অভ্যাস আপনার স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ প্রভাবিত করতে পারে। তাই সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। বিশেষ করে শারীরিক ক্রিয়াকলাপের আগে এবং পরে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে জল পান করা অপরিহার্য।
সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া
সকালের নাস্তা মস্তিষ্ককে সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দেয়। কিন্তু অনেকেই সকালের নাস্তা করেন না। ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ একটি সুষম ব্রেকফাস্ট আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
জোরে গান শোনা
যদিও গান আমাদের মনের জন্য ভালো, তবে বেশি গান শোনা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। উচ্চস্বরে সঙ্গীতের দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। কখনও কখনও উচ্চ শব্দ শ্রবণশক্তি হ্রাস হতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
অতিরিক্ত চিনি, লবণ, চর্বি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করলে অ্যালঝাইমার মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে লাল মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারের সাথে আপনার ডায়েটে ফল, সবজি, গোটা শস্য, বাদাম, বীজ এবং মাছ অন্তর্ভুক্ত করুন।
জাঙ্ক ফুড, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা সহ বেশ কয়েকটি কারণ আপনার মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। সতেজ ও সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস
খাবার স্বাস্থ্যকর হলেও অতিরিক্ত খাওয়া হলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। এই খারাপ অভ্যাস চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে মানুষ মারাত্মকভাবে স্থূল হয়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো আলঝেইমার-সম্পর্কিত রোগের কারণ হতে পারে।
একাকীত্ব
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে চায়। ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আসলে মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সংখ্যা কম হলেও এই ধরনের মানুষরা বেশি হাসিখুশি এবং দক্ষ হয়। তাদের আলঝেইমার রোগের সম্ভাবনাও কম। আপনি যদি বাড়িতে একা বোধ করেন তবে আপনি আপনার বন্ধুদের ফোন করে যে কোনও আয়োজন শুরু করতে পারেন।
ব্যায়াম না করা
নিয়মিত ব্যায়াম না করলে ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শুধু মস্তিষ্কের রোগই নয়, এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়। আর এসবই আলঝেইমারের সাথে সম্পর্কিত। এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকে ম্যারাথন ব্যয়ামের দরকার নেই। পার্কে বা বাড়ির আশপাশে আধা ঘণ্টা হাঁটাই এর জন্য যথেষ্ট। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন হাঁটার অভ্যাস করুন।
ধূমপান ছাড়তে না পারা
ধূমপান মস্তিষ্কের আকার সঙ্কুচিত করতে পারে। এই অভ্যাসটি স্মৃতিশক্তি হ্রাসের জন্য দায়ী। এছাড়াও, ধূমপান ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে। এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রাকৃতিক আলোর অভাব
পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোর অভাবে বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা হতে পারে, যা মস্তিষ্ককে ধীর করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাকৃতিক আলো থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে।
আরও পড়তে
মানব মস্তিষ্কে সফলভাবে মাইক্রোচিপ স্থাপন করলো ইলেন মাস্কের নিউরালিংক