২৯ ফেব্রুয়ারি লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ: গল্পটা মজার
একটি অধিবর্ষে বছরে একটি অতিরিক্ত দিন থাকার জন্য আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান,কারণ একটা দিন বেশি পেলাম। তবে যারা চাকুরী করেন তারা হয়তো ভাবেন যে, তাদের বছরে একদিন বেশি কাজ করতে হবে কোন অতিরিক্ত বেতন ছাড়াই।
লিপ ইয়ার নিয়ে মজার মজার গল্প রয়েছে । সত্য গল্প । এবং রাজা মহাশয়দের দ্বারা নির্মিত হয়েছে সে ক্যালেন্ডার এর গল্পগুলো । সে সময়কার বিজ্ঞানীদের অবদান রয়েছে সে ক্যালেন্ডার রচনায়। সেখান থেকে জানার কিছু কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো।
লিপ ইয়ারঃবাংলায় একে বলা হয় অধীবর্ষ। যে বছরে ফেব্রুয়ারিতে ২৯ দিন থাকে তাকে অধিবর্ষ বলা হয়। এটা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। তবে লিপ ইয়ারের গল্পটা মজার।
প্রশ্ন উঠতে পারেলিপ ইয়ারের প্রয়োজনীয়তাগুলি কী ক?
আসলে আমরা ৩৬৫দিনে বছর গণনা করি। কিন্তু পৃথিবী একবার সূর্যের চারপাশে যেতে ৩৬৫ দিনের একটু বেশি সময় নেয়। এই সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। আমরা প্রতি বছর কয়েক ঘন্টা কম গণনা করি।
কম গণনা করা সময় কোথায় যাবে? সেই ধারণা থেকেই এসেছে লিপ ইয়ার। আমাদের হিসাবহীন সময় প্রতি চার বছরে একত্রিত হয়ে ২৪ ঘন্টা বা প্রায় এক দিন যোগ হয়। এ কারণে প্রতি বছর চার বছর পর পর একটি অতিরিক্ত দিন গণনা করা হয়। সে বছরে ৩৬৬ দিন থাকে। এই অতিরিক্ত দিনটি ফেব্রুয়ারি ২৯। আর এই ধরনের বছরকে বলা হয় অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার।
কোন বছর অধিবর্ষ?
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, যে বছরগুলি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাকে অধিবর্ষ বলা হয়। কিন্তু এর ব্যতিক্রম আছে। পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ঠিক ৩৬৫.২৫ দিন নেয় না, তার কিছুটা কম নেয় । সুতরাং আপনি যদি চার বছর পর প্রতি বছর একটি দিন বেশি গণনা করেন তবে প্রতি চারশ বছরে তিন দিন বেশি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, যে বছরগুলি ১০০ দ্বারা বিভাজ্য, কিন্তু ৪০০ দ্বারা নয়, সেগুলিকে অধিবর্ষ হিসাবে গণনা করা হয় না।
২০২৪ একটি অধিবর্ষ। সেই হিসেবে আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি লিপ ইয়ার এর একটি বিশেষ দিন।
এই অধিবর্ষ কোথা থেকে এসেছে?
রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার ৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অধিবর্ষের ধারণা চালু করেছিলেন। পূর্বে রোমান ক্যালেন্ডারে ৩৫৫ দিন গণনা করা হত এবং নির্দিষ্ট ঋতুতে নির্দিষ্ট উত্সব পালনের সুবিধার্থে প্রতি দ্বিতীয় বছরে একটি ২২ বা ২৩-দিনের মাস যোগ করা হত। জুলিয়াস সিজার এই নিয়মকে সহজ করার জন্য বিভিন্ন মাসে দিন যোগ করে ৩৬৪-দিনের বছর প্রবর্তন করেন, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। সিজারের রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোসিজেনেসের গণনা অনুসারে, প্রতি চার বছরে ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের পর একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করে এই চতুর্থ বছরটিকে একটি অধিবর্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার কিছুটা ভুল থেকে যায়। কারণ জুলিয়াস সিজার যেখানে বৎসরের ব্যাপ্তি ধরেছিলেন ৩৬৫.২৫ সৌরদিবস (৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা), প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে ৩৬৫.২৪২২ সৌর দিবস (৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড) যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে ১১ মিনিট ১৩ সেকেন্ড বা ০.০০৭৮ দিন কম। এই সামান্য গরমিলে কয়েক বছরে কোন প্রভাব না পড়লেও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৪৮৩ বছরে ১১ দিন অতিরিক্ত হয়। ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে দেখা যায় বসন্ত বিষুবন ২১ মার্চের পরিবর্তে ১১ মার্চে পড়েছে।
সেই বছর, রোমের ত্রয়োদশ পোপ সেন্ট গ্রেগরি (৮ম) জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। তিনি ১৫৮২ সালে হিসাব থেকে ১০ দিন অপসারণ করে ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন এবং জুলিয়ান পদ্ধতির সংস্কার করেন, উল্লেখ করেন যে ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য নয় এমন শতবর্ষকে ‘লিপ বছর’ হিসাবে গণনা করা হবে না। কারণ বছরের দৈর্ঘ্য৩৬৫.২৪২২ সৌর দিন, ১০০ নয় বরং ৯৭ লিপ ইয়ার প্রতি চারশ বছরে প্রয়োজন। তাই অধিবর্ষ বা অধিবর্ষ ধরা হলে প্রতি চার বছর পরপর চারশ বছরের মধ্যে ৩টি বাদ দিতে হবে। গ্রেগরিয়ান নিয়ম অনুসারে, চারশ বছরের অধিবর্ষ থেকে ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য বছরকে অধিবর্ষ হিসাবে গণনা করা হয় না এবং অবশিষ্ট ৩ টি অধিবর্ষ হিসাবে গণনা করা হয় না। এই কারণে ১৭০০, ১৮০০ এবং ১৯০০ সালগুলি অধিবর্ষ ছিল না; সেই হিসেবে ২১০০ , ২২০০ ও ২৩০০ সালও অধিবর্ষও হবে না, তবে ১৬০০ এবং ২০০০ ছিল অধিবর্ষ।
লিপ ইয়ার মানে বছরে একটি অতিরিক্ত দিন থাকে। এই বছর ২০২৪ টিও একটি অধিবর্ষ। কিন্তু যদিও২৯ শে ফেব্রুয়ারী সম্পূর্ণরূপে জ্যোতিষশাস্ত্রের কারণে একটি ‘লিপ ডে’, হলেও, এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ বেশ কমই দেখা যায়।