রুটি নাকি ভাত? সুস্থ থাকতে কী খাবেন?
রুটি আর ভাত আমাদের এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রধানতম খাদ্যের তালিকায় প্রথম স্থানে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে পরিমাণ মতো খেতে হবে এবং দুটোই শরীরের জন্য আবশ্যকীয় প্রয়োজনীয়। তাই আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি রুটি এবং ভাত নিয়ে।
আমরা বাঙ্গালী আর বাঙ্গালীরা দিনে একবার ভাত খাবো না, এটা হতে পারে না। অনেকেই দিনে তিনবেলা ভাত খান। কিন্তু আসল কথা হলো স্বাস্থ্যকর রুটি বা ভাত কোনটি খাবেন?
স্বাস্থ্য-সচেতনতাই প্রধান কারণ হলেও ভাত খেতে একেবারেই পছন্দ করেন না বলে অনেকেই রুটিকেই তাদের প্রধান খাবার মনে করেন। কিন্তু এটা কি ঠিক? কোনটা ভালো? রুটি না ভাত কি খাবেন?
রুটি এবং ভাতের মধ্যে পুষ্টির কতিপয় মিল
১. রুটি এবং ভাতে একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরি রয়েছে।
২. রুটি এবং ভাতের একই রকম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে।
৩. রুটি এবং ভাতে প্রায় সমান পরিমাণে আয়রন থাকে।
৪. রুটিতে ভাতের চেয়ে বেশি ডায়েটারি ফাইবার থাকে, তাই রুটি অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে পারে।
৫. অন্যদিকে স্টার্চ বেশি থাকায় ভাত খুব দ্রুত হজম হয়।
৬. আবার রুটিতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে ভাতের চেয়ে বেশি।
যেখানে ৩০ গ্রাম ভাতের ক্ষেত্রে
- কার্বোহাইড্রেট থাকে ২৩ গ্রাম। অন্যদিকে ৩০ গ্রাম আটার ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট থাকে প্রায় ২২ গ্রাম।
- মূলত ভাতে প্রোটিন থাকে ২ গ্রাম আর আটা বা রুটির ক্ষেত্রে প্রোটিন থাকে ৩ গ্রাম।
- ভাতে ফ্যাট থাকে ০.১ গ্রাম এবং আটা বা রুটিতে ফ্যাট থাকে ০.৫ গ্রাম।
- ভাতে ফাইবার থাকে ০.১ গ্রাম এবং আটা বা রুটিতে থাকে ০.৭ গ্রাম।
- ভাতে আয়রন থাকে ০.২ মিলিগ্রাম এবং রুটিতে থাকে ১.৫ মিলিগ্রাম।
- একই পরিমাণ ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে ৩ মিলিগ্রাম এবং আটাতে বা রুটিতে থাকে ১২ মিলিগ্রাম।
কোনটি রুটি না ভাত খাওয়া উচিত?
যদিও ভাত-রুটি একসঙ্গে খেলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ ১ বাটি ভাত খেলে শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি প্রবেশ করে, ২ টুকরো রুটি খেলেও একই রকম হয়। মূলত, এই দুটি খাবারের মধ্যে পার্থক্য মূলত ফাইবার সামগ্রীর ক্ষেত্রে। যেখানে রুটি খেলে শরীরে ফাইবারের চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও রুটি খেলে শরীরে চিনির মাত্রা বাড়ে না। আবার ভাত খেলে শরীরে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে সব চিকিৎসকই ডায়াবেটিস রোগীদের রুটি খেতে দেন।
রুটি এবং ভাত একসাথে খাওয়া উচিত?
কিন্তু আধুনিক চিকিৎসকদের কেউ কেউ মনে করেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের দুটি খাবার একসঙ্গে খেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এই দুটি খাবার একসঙ্গে খেলে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে এই দুটি খাবার একসাথে হজম করা শরীরের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বদহজম বা পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
সুস্থ থাকার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হল পরিমাণ এবং ভারসাম্য। তাই একটু রুটি এবং ভাত খেয়ে অর্থাৎ এই দুটি খাবার পরিমিত পরিমাণে খেলে আপনি সুস্থ থাকবেন নিশ্চিত।
ভাত এবং রুটি উভয়ই ফোলেট সমৃদ্ধ, যা নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শিশুদের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধেও কার্যকর। সেজন্য গর্ভবতী মায়েদের রুটির চেয়ে ভাত বেশি খাওয়া উচিত।
রুটি এবং ভাতে একই পরিমাণ আয়রন থাকে তবে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের পরিমাণ রুটির চেয়ে ভাতে কম থাকে।
সব মিলিয়ে ভাত ও রুটি উভয়েরই উপকারিতা রয়েছে। আর চিকিৎসকরা মনে করেন ভাত-রুটি দুটিই রুটিন করে খাওয়া উচিত। উভয় খাবারই শরীরের কিছু চাহিদা পূরণ করে।
রুটি এবং ভাতের কার্বোহাইড্রেট সামগ্রী
যদি আমরা রুটি এবং ভাতে ভাল এবং খারাপ কার্বোহাইড্রেট সম্পর্কে কথা বলি, চাল পালিশ করার সময় ফাইবার সরানো হয়। এটি খারাপ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়ায়। তাই বেশি করে ভাত খেলে শরীরে ইনসুলিন বাড়তে পারে। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, ভাতে উপস্থিত অ্যামাইলোপেকটিন হজম করা সহজ এবং শিশুদের জন্য এটি একটি পছন্দের হজমযোগ্য উপাদান।
এছাড়াও, রুটিতে ভাতের চেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে। রুটি ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। প্রোটিনের সংখ্যা সম্পর্কে কথা বললে, উভয়েই প্রায় সমান পরিমাণে পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলতে চাই ভাত না রুটি, কতটুকু খাব?
রুটি ও ভাত দুটোই স্বাস্থ্যকর। এই দুটি থেকে শরীর শক্তি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। তবে রুটি-ভাতের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে। আধা বাটি ভাত এবং চার টুকরো রুটি খাওয়া একটি ভাল বিকল্প। যেহেতু ভাতে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে, তাই এটি বেশি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।