November 21, 2024
মরুজাহাজ উট সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন

মরুজাহাজ উট সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন

মরুজাহাজ উট সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন

মরুজাহাজ উট সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন

যুগে যুগে সাধারণ মানুষ তাদের সত্য জীবনবিধানের সত্যতার প্রমাণ হিসাবে নবীদের কাছ থেকে অলৌকিক ঘটনা দাবি করেছে। উত্তরে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক লক্ষণের প্রতি মনোযোগ দিতে বলেছেন। যেমন মেঘ থেকে বৃষ্টি, পাহাড়ের সৃষ্টি, গাছ থেকে ফল, মাতৃগর্ভে মানব সন্তানের বিকাশ। তিনি একটি নিদর্শন সম্পর্কে আরও বলেন যে

তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না, (সৃষ্টি কুশলতায় ভরপুর ক’রে) কী ভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? (সূরা গাসিয়া, আয়াত-১৭) ।

শারীরিক গঠন ও আচরণ রয়েছে যা মরুভূমির জন্য খুবই উপযোগী এবং মহান সৃষ্টিকর্তার একটি বিস্ময়কর নিদর্শন।

উট আল্লাহর নিদর্শনগুলোর একটি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উটের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যে উট সম্পর্কে একটু চিন্তা করবে সে আল্লাহকে চিনবে। রবের পরিচয় জানতে পারবে। বস্তুত, এর অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীদেরও অনেক ভাবিয়ে তুলেছে।

যার উচ্চতা ৩০ ইঞ্চি এবং ওজন ৩৬০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এটা তার খাদ্যভাণ্ডার যার বদৌলতে সে এক মাস খাবার ছাড়া এবং দুই-তিন সপ্তাহ পানি ছাড়া চলতে পারে। এই অবস্থায়, উট  তার শরীরের ওজনের ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত হারাতে পারে। কিন্তু একই অবস্থায় একজন মানুষ যদি তার ওজনের ৮ শতাংশ কমিয়ে ফেলেন, তাহলে তিনি ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে মারাও যেতে পারেন।

বাইরের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে উটের শরীরের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। বাইরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে উটের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। (১১ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত) ।  এটাই  মরুভূমিতে উট তাদের শরীরের  পানি সংরক্ষণ করার প্রধান উপায়। মরুভূমির চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় উটের শরীরের তাপমাত্রা রাতে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে এবং দিনে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

পানিশূন্যতা: উটের ক্ষেত্রে খুব কম পানি রক্ত থেকে বের হয়, ফলে রক্ত তরল থাকে। । উট ৩০শতাংশ পর্যন্ত ডিহাইড্রেশনে চলাচল করতে সক্ষম, উটের শরীরের পানি পূরণ করার ক্ষমতাও দুর্দান্ত। উট একা এক মিনিটে ১০-২০ লিটার পানি পান করতে পারে। পানিশূন্যতায় , উট অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় কম শ্বাস নেয়, যাতে পানি শরীর থেকে বের হতে না পারে ।

একটি উটের অনুনাসিক ঝিল্লি নিঃশ্বাসের সাথে নিঃশ্বাসের জলীয় বাষ্পের বেশিরভাগ অংশ আটকে ফেলে এবং শরীরে ফিরে আসে। এভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত পানি কমে যায়।

এটি ৫৩ ডিগ্রি তাপ এবং -১ ডিগ্রি ঠান্ডায় দিব্বি বেঁচে থাকে। উত্তপ্ত মরুভূমির বালিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা রেখে। মাসের পর মাস পানি না খেয়েই চলে। বড়   মরুভূমির কাঁটাযুক্ত  ক্যাকটাস খেয়ে থাকে। সে  তার পিঠে ১৫০ কেজি ওজন নিয়েও  শত মাইল হাঁটতে পারে । উটের মতো অসাধারণ ডিজাইনের প্রাণী প্রাণীবিদদের নিনকট  একটি বিস্ময়।

মানুষ সহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৭ °C (৯৮.৪ °F) হয়। যদি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রী (১০০ ফারেনহাইট) এর উপরে বাড়ে তবে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির ক্ষতি শুরু হয়। এটি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) এর বেশি হলে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।৪১ ডিগ্রি (১০৫ ফারেনহাইট) এ, শরীরের কোষগুলি মারা যেতে শুরু করে।

উটের শরীরে একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সকালে এর শরীরের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি। তারপর যখন আবহাওয়া উষ্ণ হয়, তখন  তার ভিতরের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি (১০৪  ফারেনহাইট) বেড়ে যায়। তারপর থেকে ঘাম শুরু হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত এটি পানি  ধরে রাখে। এভাবে প্রতিদিন উট স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে চরম জ্বর পর্যন্ত সহ্য করে। এর শরীরকে এমনভাবে সজ্জিত করা হয়েছে যাতে কয়েকদিন ধরে তীব্র জ্বর সহ্য করার পরেও এটি তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির বড় ক্ষতি না করে।

উটের রক্ত বিশেষভাবে প্রচুর পরিমাণে জল ধরে রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। একবার একটি উট পান করা শুরু করলে, এটি ১০ মিনিটে প্রায় ১০০-১৩০  লিটার  পানি পান করতে পারে, যা তিনটি গাড়ির জ্বালানী ট্যাঙ্কের সমতুল্য। অন্য কোনো প্রাণী যদি এই বিপুল পরিমাণ পানি পান করে তাহলে রক্তের অতিরিক্ত পানি অসমোটিক চাপের কারণে রক্তকণিকাগুলো ফুলে যায় এবং ফেটে যায়। কিন্তু উটের রক্তকণিকায় একটি বিশেষ আবরণ থাকে, যা অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে পারে। এই বিশেষ রক্তের সাহায্যে উটের পক্ষে একবারে এত পানি পান করা সম্ভব হয়।

উটের চোখের পাপড়ির দুটি স্তর থাকে। যার কারণে মরুভূমিতে ধুলো ঝড়েও চোখ খোলা রাখতে পারে। মরুভূমির উত্তপ্ত রোদ থেকে চোখকে রক্ষা করতে এবং চোখের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এই বিশেষ পাপড়ি ব্যবস্থা সানগ্লাস হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এটি ধুলো আটকানোর জন্য বিশেষভাবে বাঁকা।

উটের নাসারন্ধ্রে আর্দ্রতা বিশোষণের জন্য এক বিশেষ ঝিল্লী স্তর রয়েছে যা শ্বাসত্যাগকালে তার সাথে আতা বেরিয়ে যেতে দেয় না আর কোন পশুর দেহে এ ধরনের ঝিল্লীর অস্তিত্ব কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। উটের নাসারন্ধ্রে এ ধরনের ঝিল্লী থাকার কারণে, অন্যান্য পশুর শ্বাসত্যাগের সাথে সাথে অনিচ্ছাকৃতভাবে যে পরিমাণ আর্দ্রতা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়, তার ৬৮% রক্ষা করা সম্ভব হয়। গবেষকরা উটের নাসিকার ব্যবচ্ছেদ করে দেখেছেন সেখানে ১০০০ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৪০০ বর্গ ইঞ্চি পরিমিত জায়গা জুড়ে একাভিমুখী এক ঝিল্লীর অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের ঝিল্লীর আয়তন মাত্র ১২ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৪.৮ বর্গ ইঞ্চি।

উটের কুজ হচ্ছে চর্বির আধার। চর্বি উটকে শক্তি এবং পুষ্টি যোগায়। আর পানি শরীরের যাবতীয় আভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সচল রাখে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। একবার যথেষ্ট খাবার এবং পানি নেওয়ার পর একটি উট ছয় মাস পর্যন্ত কোনো খাবার বা পানি পান না করে টিকে থাকতে পারে।

ডগমাটিক বিবর্তনবাদীদের মনগড়াভাবে  তৈরি অনেক নিয়ম ভেঙে এই প্রাণীটি কোনো না কোনোভাবে নিরীহ, শান্ত, মানুষের বশ্যতাপূর্ণ হয়ে ওঠে। আল্লাহ তায়ালা যদি উটকে মানুষের উপযোগী না করতেন, তাহলে মানুষের পক্ষে মরুভূমিতে সভ্যতা গড়ে তোলা অসম্ভব ছিল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X