কাশি থেকে মুক্তি পেতে করণীয় এবং যা খাবেন
গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত যেকোনো ঋতুতেই সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, বুকে কফ জমে, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে পড়ে। ঠাণ্ডাজনিত অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
শীতের আগমনে শুরু হয়েছে সর্দি-কাশির প্রকোপ। । অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই কাশিতে ভুগছেন।
কাশির কারণ:
কাশির বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অনেক সময় ফুসফুসের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি কারণেও কাশি হয়।এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে কাশি চলতে থাকে এবং বুকে ব্যথা হয়। শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য নানা সমস্যাও দেখা দেয়। যদি তাই হয়, আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এছাড়াও কাশির আরও অনেক কারণ রয়েছে। যেমন সাইনাসের সমস্যা নাকের প্রদাহের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। আবার ধূমপানের কারণেও কাশি হয়। এই ক্ষেত্রে, আপনি যদি ধূমপান না ত্যাগ করেন তবে শুধু ওষুধে সাহায্য করবে না। ধূমপায়ীদের ধূমপায়ীর কাশি হয়। কাশি হয় কারণ তামাক ক্রমাগত শ্বাসযন্ত্রের ঝিল্লিকে জ্বালাতন করে। তাই কেউ যদি ধূমপানের কারণে কাশিতে ভুগে থাকেন তাহলে আজই ধূমপানকে না বলুন।
কেউ কেউ এটাকে ছোটখাটো সমস্যা মনে করে এবং উপেক্ষা করে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেউ কেউ সমস্যা এড়াতে ওষুধও খান। কিন্তু ঘরোয়া উপায়েই এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
এ সময় জ্বর, কাশি যাই হোক না কেন আইসোলেশনে থাকুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্ব-ওষুধ খাবেন না। কাশি কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন।
মধু:
মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য কাশি কমাতে সাহায্য করে। গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। অথবা মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লিকার চা পান করুন।
হলুদ:
হলুদে রয়েছে কারকিউমিন, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে। এক গ্লাস দুধে এক চা চামচ হলুদ এবং এক-অষ্টম চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
আদা:
আদার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আদা পিষে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করুন অথবা চায়ে আদা ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
তুলসি:
তুলসি পাতায় ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক থাকে, যা প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন তিন থেকে চারটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা তুলসীর রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন বা চায়ে দিয়ে পান করতে পারেন। এখন বাজারে তুলসী চাও পাওয়া যায়।
মসলা চা:
গরম মশলা যেমন লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি পানিতে মিশিয়ে সেই ভেষজ চা পান করুন। এটি গলার প্রদাহ কমিয়ে কফ দূর করবে।
রসুন:
রসুনের অ্যালিসিন উপাদান জীবাণু নিধনে উপকারী ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন সালাদের সাথে কিছু রসুনের লবঙ্গ খান বা গরম স্যুপে রসুনের লবঙ্গ মিশিয়ে নিন।
গরম দুধে হলুদের মিশ্রণ:
দুধ গরম করে তাতে সামান্য হলুদ মেশান। এই হলুদ মিশ্রিত দুধ কাশি দূর করতে খুবই উপকারী। গরম দুধ আমাদের গলা প্রশমিত করে এবং হলুদ আমাদের সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। তাই এই মিশ্রণটি খেলে আমরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারি।
মেনথল ক্যান্ডি:
মেন্থল দিয়ে তৈরি ক্যান্ডি বা চকোলেট কাশির জন্য উপকারী। এই ক্যান্ডিগুলি শক্ত কফকে নরম করতে পারে, গলা থেকে কফ অপসারণ করতে পারে এবং কাশি কমাতে পারে।
বাসক পাতা:
বাসক পাতা জলে সিদ্ধ করে, জল ছেঁকে দই গরম করে খেলে কাশি দূর হয়। প্রতিদিন সকালে এই পানি পান করুন। বাসক পাতার রস প্রতিদিন সন্ধ্যায় গ্রহণ করা ভাল। খুব ভালো ফল পাওয়া যায় ২-৩ দিনে। বাসকের তিক্ততা কমাতে রসের সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন।
গার্গল করা:
গার্গল বা গার্গলিং কাশি এবং গলা ব্যথা উভয়ই কমায়। এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে ১০-১২ মিনিট গার্গল করুন। বিরতি দিয়ে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন। কাশি কমাতে এটি খুবই কার্যকরী একটি ঘরোয়া উপায়।
এছাড়াও আপনার কাশি হলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করার চেষ্টা করুন। কাশি হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এটি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে কাশির জীবাণু দূর করে। উল্লেখিত সকল পদ্ধতিই কাশি কমাতে খুবই কার্যকরী। এই কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করার পরেও যদি দীর্ঘদিন ধরে কাশি না কমে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আরও পড়তে