পৃথিবী বয়স হল কত বছর?
সর্বপ্রথম মানুষ সকলের আদিপিতা হজরত আদম আলাইহি সালামকে আল্লাহ বলেছিলেন হে আদম তুমি পৃথিবীতে এসেছ তার বৃদ্ধাবস্থায় ।তাই এখানে যাই উৎপাদন করবে তার সবই উৎপাদিত হতে অনেক সময় লাগবে । পৃথিবী যখন তার যৌবনে ছিল অর্থাৎ কম বয়সী ছিল তখন তার মধ্যে উৎপাদিত সকল কিছুই খুব অল্প সময়ে হয়ে যেত । সেই থেকে বোঝা যাচ্ছে পৃথিবীর বয়স এখন অনেক বেশি যেখানে মানুষ এসেছে পৃথিবীর বুড়ো বয়সে । সেই নিয়েই আজকের কিঞ্চিৎ আলোকপাত।
পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে সঠিক তথ্য খোঁজা মানুষের জন্য সহজ কাজ ছিল না। ১৬ শতকের ইংরেজ পণ্ডিত জন লাইটফুট হঠাৎ একদিন বৈজ্ঞানিক মহলে ঘোষণা করলেন যে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল ২৬ অক্টোবর, ৪০০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঠিক রাত ৯টায়!
কিন্তু যখন মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে আরও জানল, তখন লাইটফুটের দাবি আর রাখা যায়নি। কারণ ডাইনোসররা পৃথিবীতে বাস করত প্রায় দুই কোটি বছর আগে।
ডাইনোসরের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করে এই তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সুতরাং, লাইটফুটের দাবি যে ভুল তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তাছাড়া পৃথিবীর জলবায়ু ও ভূগোল আমরা আজকে যেভাবে দেখছি, অনেক আগেও সেরকম ছিল না। সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল অগ্নিময় গোলক। বিলিয়ন বছর ধরে এর দীর্ঘ বিবর্তনের ফলস্বরূপ, এটি ধীরে ধীরে শীতল হয়। তাই বলা যায় পৃথিবী সৃষ্টি কোনো একদিনের ঘটনা নয়।
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ ± ৫ মিলিয়ন বছর (৪.৫৪ × ১০৯ বছর ± ১%) এই বয়সটি উল্কাপিণ্ডের রেডিওমেট্রিক ডেটিং থেকে প্রাপ্ত এবং তা প্রাচীনতম স্থলজ এবং চন্দ্র শিলাগুলির রেডিওমেট্রিক যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।।
২০ শতকের গোড়ার দিকে রেডিওমেট্রিক ডেটিং আবিষ্কারের পরে। ইউরেনিয়াম-সীসার বয়স নির্ণয় পদ্ধতিতে দেখা যায় যে, ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধ খনিগুলিতে সীসা থাকে যা ১ বিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরানো। এই ধরনের খনি থেকে উদ্ধার হওয়া প্রাচীনতম ছোট স্বচ্ছ বস্তু হল গোমেদ- পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক হিলস-এ পাওয়া রত্নটি কমপক্ষে ৪৪০.৪ মিলিয়ন বছর পুরোনো।
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি বছর। পৃথিবী যখন গঠিত হয়েছিল, তখন এটি একটি গ্যাসীয় গোলক ছিল। তারপর পৃথিবী তার তাপমাত্রা হারিয়ে শীতল হতে শুরু করে। তারপর এটি একটি শক্ত গোলকে পরিণত হয়। এই কঠিন পদার্থকে বলা হয় শীলা পাথর।
পৃথিবীর মাটির নিচে বিভিন্ন পাথরের স্তর পাওয়া গেছে। এতে লোহার মতো কঠিন পদার্থ আছে। এছাড়াও জৈব গ্যাস এবং তরল তেল আছে। এছাড়াও রয়েছে অনেক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ।
তেজস্ক্রিয়তা একটি আকর্ষণীয় উপাদান। এই পরমাণু থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়। একে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বলা হয়। তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন উপাদান গঠনের জন্য তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যায়। যেমন ইউরেনিয়ামের কথাই ধরা যাক। তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম বিকিরণ দ্বারা নেতৃত্বে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এই তেজস্ক্রিয় ক্ষয় একবারে ঘটে না, হয় একটি নির্দিষ্ট হারে। তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের এই হার প্রতিটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের জন্য আলাদা।
তেজস্ক্রিয় ক্ষয় অর্ধ-জীবন নামে একটি শব্দের সাথে আসে। একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধেক ক্ষয় হতে যে সময় লাগে তাকে অর্ধ-জীবন বলে। ইউরেনিয়ামের অর্ধ-জীবন৪৫০ কোটি বছর। ইউরোনিয়াম পরমাণু ক্ষয় হয়ে অর্ধেকে পরিণত হয় লাগে ৪৫০ কোটি বছর। তার মানে ৪৫০ কোটি বছরে লক্ষ পরমাণুর ক্ষয়ে ৫০ হাজার ইউরেনিয়াম অবশিষ্ট থাকে। বাকি ৫০ হাজার পরমাণু সীসার পরমাণুতে রূপান্তরিত হবে। এখানে এক লক্ষ কোনও ব্যাপার নয়। ১০০ পরমাণুর একটা ইউরেনিয়াম খণ্ড নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে ৪৫০ কোটি বছর পর ৫০ টি ইউরেনিয়াম অক্ষত আছে, বাকি ৫০ টি সীসায় পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ যত পরমাণুই নেয়া হোক তেজস্ক্রিয় ইউরোনিয়াম অর্ধেকে পরিণত হতে সময় লাগে ৪৫০ কোটি বছর। একে ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু বলে। অনেকেই ভাবছেন, সাড়ে চারশ কোটি বছরের হিসাব কীভাবে বের হলো? । একে বলা হয় ইউরেনিয়ামের অর্ধ-জীবন। অনেকেই ভাবছেন, কোটি বছরের হিসাব বের হলো কীভাবে? ভাববেইতো কারণ মানুষ তো আর অতদিন বাঁচেনা!
মানুষ বাঁচে না – এটা ঠিক। এখনও একটি উপায় আছে. একটি গাণিতিক সমীকরণ আছে। প্রতি সেকেন্ডে কত বিকিরণ ক্ষয় হচ্ছে? এটি গণনা করা হয় এবং সেটাকে গাণিতিক সমীকরণে বসানো হয়। সেখান থেকে যে ফল বের হয় সেটাই তার অর্ধ জীবন। সংক্ষিপ্ত অর্ধ-জীবন সহ তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষেত্রে এই সমীকরণটি সঠিক বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পদার্থের অর্ধ-জীবন কয়েক ঘণ্টা হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েকদিন এবং কয়েক বছরও হতে পারে । তাদের ক্ষেত্রে সমীকরণের সত্যতা প্রমাণিত হয়। সুতরাং ইউরেনিয়ানের ক্ষেত্রেও সেই সমীকরণটি সঠিক।
পৃথিবীর বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধ শিলা খণ্ডগুলির একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে তাদের সকলের মধ্যে একটি জিনিস মিল রয়েছে। এটি অর্ধেক ইউরেনিয়াম এবং অর্ধেক সীসার মিল । তার মানে বিশ্বের সমস্ত ইউরেনিয়াম শেল এখন অর্ধ-জীবনে। তার মানে তাদের বয়স ৪৫০ কোটি বছর। অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত করা যেতে পারে যে এই শিলাগুলি ৪৫০ কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল। শিলা সৃষ্টির সময়কে পৃথিবী সৃষ্টির সময় হিসেবে ধরলে এর বয়স হবে ৪৫০ কোটি বছর।
4 Comments