November 22, 2024
খাদ্য অপচয় রোধে ইন্দোনেশিয়ার আশ্চর্যজনক সারপ্লাস অ্যাপ

খাদ্য অপচয় রোধে ইন্দোনেশিয়ার আশ্চর্যজনক সারপ্লাস অ্যাপ

খাদ্য অপচয় রোধে ইন্দোনেশিয়ার আশ্চর্যজনক সারপ্লাস অ্যাপ

খাদ্য অপচয় রোধে ইন্দোনেশিয়ার আশ্চর্যজনক সারপ্লাস অ্যাপ

খাদ্যঃ

সেই সমস্ত খাদ্যদ্রব্যকে খাদ্য বলা যেতে পারে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং তাপ শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন বা পুষ্টি, খনিজ লবণ এবং পানি খাদ্য ছয়টি উপাদান নিয়ে গঠিত। 

যথাসম্ভব মিতব্যয়ী হয়ে এবং কৃপণতা না করে সবাইকে নিয়ে খাদ্য খাইয়াই হল খাদ্য খাওয়ার উত্তম পন্থা । এবং মোটেও সেক্ষেত্রে অপচয় নয় । এমনকি সম্ভব হলে একটি কণাও অপচয় নয় ।

খাবার বেঁচে থাকার প্রধান মাধ্যম । একদিকে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে খাবারের স্তূপ ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে। একদিকে খাদ্য অপচয়ের মহোৎসব, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত মানুষ না খেয়ে মরছে। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদও খাদ্যের অপচয়ে পিছিয়ে নেই। গ্রামের মানুষ আগের মতো প্লেট চেটে-পুটে  খায় না।! ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম অনুযায়ী, প্রতি রাতে ৮২কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় বিছানায় যায়।

খাদ্য অপচয় হল আধুনিক সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইন্দোনেশিয়ায় একটি অ্যাপ এই ধরনের অপচয় কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার ভবিষ্যতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইছে।

নাসি গোরেং ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। তবে এই   খাবার প্রায়ই দেশের রেস্তোরাঁর মেজেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বরিলা সেন্টার ফর ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের আবর্জনার প্রায় ৪০ শতাংশই খাদ্য।

খাদ্যের পাইকারী বিক্রেতা, খাদ্য সরবরাহ পরিষেবা থেকে শুরু করে বাড়ির রান্নাঘর পর্যন্ত – এই ধরনের অপচয় সর্বত্র ঘটে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের খাদ্য অপচয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা সহজ নয়।

হ্যারিস সুইটস পুরি ম্যানসনের জেনারেল ম্যানেজার আন্তন রেজি মনে করেন, “হোটেলে খাবারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু কখনও কখনও এটি সম্পূর্ণরূপে সম্ভব হয় না। আমরা এখন খাদ্যের অপচয় কমাতে ‘সারপ্লাস অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারি।

আন্তন রেজির রেস্তোরাঁর উদ্বৃত্ত খাবার এখন বিক্রি করা হচ্ছে উদ্বৃত্ত অ্যাপের মাধ্যমে।

দোকান বা রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে বিক্রেতারা অ্যাপে খাবারের তালিকা প্রকাশ করে। সেই খাবার হয় তুলে নেওয়া হয়, অথবা কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই অ্যাপটি ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার ১২টি শহরে চালু হয়েছে। উদ্বৃত্ত অ্যাপের নেতা মুহাম্মদ আগুং সাপুত্রা বলেন, “আসলে, প্রায় ৮০ শতাংশ খাদ্য অপচয় বন্ধ করে এর পরিবর্তে উপার্জন করা সম্ভব। আমাদের অ্যাপের লক্ষ্য হল ব্যবহারকারীরা যাতে অতিরিক্ত খাবার সংরক্ষণ করে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করা।

তবে প্রতি বছর লাখ লাখ টন খাদ্য ফেলে দেওয়া হলেও সে দেশে অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। সরকার এ বিষয়ে সবে মাত্র  নড়েচড়ে বসেছে।  সালামেত নামের একজন সংসদ সদস্য বলেন, “খাদ্যের অপচয় নিয়ন্ত্রণের জন্য এই খসড়া আইনটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

আইনটি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, ইন্দোনেশিয়ার সরকার খাদ্যের অপচয় কমাতে দেশটির ছয়টি ধর্মের নেতাদের দূত হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

তাদের স্থানীয় জমায়েত এবং ধর্মীয় বার্তা প্রচারের সময় অপচয় এড়ানোর বার্তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও সরকার শীঘ্রই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আশা করছে।

বিশ্বে বছরে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন টন খাদ্য অপচয় হয়, যা মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই বিপুল পরিমাণ নষ্ট খাবারের এক-চতুর্থাংশ সংরক্ষণ করা গেলে ৮৭ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। খাদ্য অপচয়ের কারণে বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে খাদ্যের অপচয় বন্ধ হয় না। উন্নত দেশগুলিতে, বার্ষিক মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদনের হার ৯০০ কেজি। এর মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যক্তি পর্যায়ে মাথাপিছু অপচয়ের হার ৯৫ থেকে ১১৫ কেজি। এমনকি বিপণন পর্যায়ে পণ্যের গুণমান বিবেচনায় অনেক খাদ্য অপচয় হয়। শিল্পোন্নত দেশে বছরে ৬৮ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য অপচয়ের বাজারমূল্য ৩১ হাজার কোটি টাকা।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, ফসল সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ৪০ শতাংশ খাদ্য অপচয় হয়। এবং শিল্পোন্নত দেশগুলিতে, বিপণন এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ শতাংশ খাদ্য অপচয় হয়। ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সময় খাদ্যের ক্ষতি কৃষকের আর্থিক ক্ষতি বাড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X