November 23, 2024
সহকর্মীদের সাথে ব্যবহারে ইসলাম

সহকর্মীদের সাথে ব্যবহারে ইসলাম

সহকর্মীদের সাথে ব্যবহারে ইসলাম

সহকর্মীদের সাথে ব্যবহারে ইসলাম

মানুষের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাল অতিক্রম করতে হয় তার কর্মক্ষেত্রে। আর সে কর্মক্ষেত্রের বেশিরভাগ স্থানেই সহকর্মীদের সাথে চলাফেরা উঠা বসা এবং সবকিছু শেয়ার করেই চলতে হয় । এবং সেখানে সবাই কামনা করে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং সবাই সবাইকে সহযোগিতা করতে ভালোবাসে । সেখানে প্রয়োজন হয় মানবিক গুণাবলির । যে গুণগুলো ইসলাম সমর্থন করে এবং চমৎকারভাবে  কোরআনে এবং  মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন ।

কারণ ভালো গুণসম্পন্ন ব্যক্তি সবার কাছে প্রিয়। শান্তি, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা সুন্দর গুণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। আর সোহার্দ্যপূর্ণ ও প্রেমময় কর্মক্ষেত্র তৈরিতে ভালো গুণের ভূমিকা অপরিসীম।

সহকর্মীদের সাথে সুন্দর ও ভদ্র, দায়িত্বশীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ যেমন একজন কর্মচারীকে অনেক দূরে নিয়ে যায়, তেমনি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ মানুষকে লাইনচ্যুত করে ,সবার কাছে বিরক্তিকর ও  ঘৃণিতও  করে তোলে  । এ জন্য ইসলাম সহকর্মীদের সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে।

তাই সহকর্মীদের সাথে সৌন্দর্য মন্ডিত এবং ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে যে গুণগুলা প্রয়োজন,  তার কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ  মানবিক গুণ নিম্নে উল্লেখ করছি।

অধীনস্থদের সাথে ভালো ব্যবহার: অধীনস্থদের  (কর্মচারী-কর্মকর্তা)সাথে খারাপ ব্যবহার করা ইসলামে হারাম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তিরমিযী:)

অন্যের দোষ প্রচার করবেন না: মানুষের দোষ-ত্রুটি প্রচার করা নিন্দনীয় স্বভাব। বিশেষ চাহিদা এবং অক্ষমতা ছাড়া একজন বিশ্বাসী অন্যদের দোষ প্রকাশ করবে না রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।” (তিরমিযী)

গোপনীয়তা রক্ষা: কেউ গোপনীয়তার অনুরোধ করলে তা গোপন রাখা জরুরী। কেউ যদি কোনো কথা গোপন রাখার অনুরোধ করেন তবে তা গোপন রাখবে। একান্ত অপারগতা ও সামগ্রিক কল্যাণ ছাড়া তা প্রকাশ করবে না। রাসুল (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর আশপাশে তাকালে তার ওই কথা শ্রবণকারীর জন্য আমানত বলে গণ্য হবে।’ (তিরমিজি)

অযৌক্তিক ধারণা পোষণ না করা: সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে কু-কল্পনা পোষণ করা নিষিদ্ধ। খারাপ ধারণা কর্মক্ষেত্রের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “সুতরাং মন্দ চিন্তা করা থেকে দূরে থাকো।” কারণ মন্দ চিন্তাই সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ (তিরমিযী)

আরও পড়ুন

পরিবারের সদস্যদের আনন্দ দেওয়া মহানবীর সুন্নত

যেসকল আমলে বরকত বৃদ্ধি পায়

গীবত: পরিণাম ভয়াবহ

হাসিমুখে সাক্ষাৎ: শুরু থেকেই ইসলাম মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্য ইসলাম পারস্পরিক বৈঠকে হাসিমুখে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত, আবুজর (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “তোমার ভাইয়ের সামনে হাসিমুখে হাজির হওয়া তোমার জন্য সদকা।” (তিরমিযী)

সুন্দরভাবে কথা বলা: সহকর্মীদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলাও সদকার সমতুল্য। সুন্দর কথা মানুষের হৃদয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক দিন সূর্য উদিত হলে মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সদকা করা ওয়াজিব। দুজনের মধ্যে বিবাদ নিরসন করা সদকার সমতুল্য। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সদকা। সুন্দর কথা বলা সদকা। নামাজে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকা।’ (মুসলিম )

শালীনতা এবং ভদ্রতা: ব্যক্তি  ভদ্র আচরণের মাধ্যমে সহকর্মীদের কাছে নিজেদের পছন্দনীয়  করে তোলে । বিনয় ও কোমলতার স্পর্শে মন খুশি হয়ে ওঠে। তাই রাসুল (সাঃ) সবার সাথে খুব নম্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ ভদ্রতা পছন্দ করেন। আল্লাহ কোমলতার বিনিময়ে যা দেন, কঠোরতার কারণে তা দেন না।’ (বুখারি)

ভালো ধারণা: সহকর্মীদের প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করা। অন্যদের প্রতি খারাপ চিন্তা কলুষতা এবং ঘৃণার দিকে পরিচালিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, অধিকাংশ ধ্যান-ধারণা করা পরিহার কর। কারণ অনেক ধারণাই  পাপ।’ (সূরা হুজরাত : ১৩ )

ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক: কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কের ভারসাম্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নৈকট্য এবং দূরত্ব কখনও কখনও ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে মানুষের জন্য বিপজ্জনক। হাদিস শরিফে আছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘নিজের বন্ধুর সঙ্গে ভালোবাসার আধিক্যতা প্রদর্শন করবে না। হয়তো সে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। তোমার শত্রুর সঙ্গেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়তো সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।‘ (তিরমিজি )

কোনো বিশেষ পছন্দ নয়: বৈধ কারণ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে কোনো সহকর্মীকে অগ্রাধিকার না দেওয়াই ভালো। বিশেষ করে যদি কেউ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে বসে থাকেন। হাদিস শরিফে আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সভায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে তার পাওনা বুঝিয়ে দিতেন। যারা তার সভায় যোগ দিতেন তারা সবাই নিজেদেরকে সবচেয়ে সম্মানিত মনে করতেন।

শোনা কথায় কান না দেওয়া: শোনা কথায় কান দিলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই কিছু শুনলে তা যাচাই করার আগে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! যদি কোনো অন্যায়কারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা যাচাই-বাছাই করবে। যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি না করে বস  এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মে অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা হুজরাত : ৬)

একে অপরের সাথে সহযোগিতার মনোভাব থাকা: পারস্পরিক সহযোগিতা কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত করে এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমরা পরস্পরকে সৎকাজ ও আল্লাহকে ভয় করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। (সূরা মায়িদাহ : ২৮)

অপ্রয়োজনীয় কথা বলা এড়িয়ে চলা: ইসলাম মানুষকে কম কথা বলার পরামর্শ দেয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, লজ্জা ও শালীনতা ঈমানের দুটি শাখা। অশ্লীলতা এবং বাগ্মিতা নিফাকের  মুনাফিকির  দুটি শাখা’ (তিরমিযী)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ মেনে সহকর্মীদের সাথে ভালো ও মজাদার  ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X