November 21, 2024
শিশু জন্মের পর যে কাজগুলো সুন্নত

শিশু জন্মের পর যে কাজগুলো সুন্নত

শিশু জন্মের পর যে কাজগুলো সুন্নত

শিশু জন্মের পর যে কাজগুলো সুন্নত

দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কাজ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হতে  হবে। কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করতে পারা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহর ঘোষণা-“নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।”তাই মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত হওয়া চাই । সেই আলোকে, শিশুর জন্ম থেকেই কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন যাপন করা জরুরি। আর তা শিশুর অভিভাবককেই  লক্ষ্য রাখতে হবে।

সন্তানের জন্ম যেমন আনন্দের, তেমনি সুন্নতের আলোকে সেই সন্তানের প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করা আরও আনন্দের। কেননা এই সুন্নতের অনুসরণ সদ্য প্রসূত সন্তানকে সঠিক ও সুন্দর জীবনের দিকে নিয়ে যাবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিসে সন্তানের জন্মের পর পিতামাতার কর্তব্য বর্ণনা করেছেন। শিশুর জন্য এটি পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা হল-

  • সন্তানের জন্ম হলে আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করা এবং সন্তানের মঙ্গল কামনা করা। যেমন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দোয়া করেছেন-

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে ইসমাঈল ও ইসহাক দান করেছেন। নিঃসন্দেহে আমার পালনকর্তা প্রার্থনা শ্রবণকারী। হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্যে থেকে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমার প্রার্থনা কবুল করুন। হে আল্লাহ! হিসাব দিবসে তুমি আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করবে।’ (সূরা ইব্রাহিম: আয়াত ৩৯-৪১)

  • সন্তান জন্মের পর সর্বপ্রথম করণীয় হলো নবজাতকের ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া।

হজরত আবু রাফি রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যখন হাসান ইবনে আলী ফাতেমার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কানে আযান দিতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী)

  •  জন্মের প্রথম দিন বা সপ্তম দিনে নবজাতকের নাম রাখা সুন্নত।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আজ রাতে আমার একটি সন্তানের জন্ম হয়েছে, আমি আমার পিতা ইব্রাহিমের নামানুসারে তার নাম রাখলাম ইব্রাহিম। (মুসলিম)

অন্য হাদিসে নবজাতকের সুন্দর নাম রাখা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের নিজেদের নামে ডাকা হবে এবং তোমাদের পিতা ও দাদার নামে ডাকা হবে, তাই তোমরা তোমাদের (সন্তানদের) নাম সুন্দর কর।

  •  নবজাতকের বয়স ৭ দিন হলে আকিকা দিন।

হজরত সামুরা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক শিশুকে তার আকীকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রাখা হয়। সুতরাং সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে আক্বীকা কর, তার চুল কেটে তার নাম রাখ।’ মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী)

  •  নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে মাথা মাথা মুণ্ডন করে চুলের ওজনের সমপরিমাণ রূপা, সোনা বা (টাকা) দান করা।

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম দিনে হাসান ও হোসাইনের চুল কাটার নির্দেশ দেন এবং চুলের ওজনের সমান রূপা দান করেন। (তিরমিযী)

হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসানের পক্ষ থেকে একটি ছাগলের আক্বীকা দিয়ে বললেন, হে ফাতিমা, তার মাথা মুণ্ডন কর এবং তার চুলের ওজন রূপা দিয়ে দান কর। (তিরমিযী)

  • মাথা মুণ্ডন করার পর নবজাতকের মাথায় জাফরান লাগানোও সুন্নত।
  • তাহনিক করাঃ। অর্থাৎ নবজাতকের মুখে খেজুর চিবিয়ে তার অংশবিশেষ দেয়া  । ইমাম নাব্বি বলেন, সন্তান প্রসবের সময় খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত।

হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আবু তালহা যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাই। তিনি বললেন, তোমার সাথে কি খেজুর আছে? আমি বললাম হ্যাঁ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর চিবালেন, তারপর তা বের করে শিশুটির মুখে দিলেন। শিশুটি ঠোঁটের সাথে আটকে থাকা অংশটি চুষতে এবং চাটতে শুরু করে।

এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, দেখ! আনসারদের খেজুর কত প্রিয়!’ (মুসলিম)

হজরত আবু মুসা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, যখন আমার এক সন্তান জন্ম নেয়, আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাম রাখেন ইব্রাহিম।অতঃপর খেজুর দিয়ে তাহনিক করেন, তার জন্য বরকতের দোয়া করেন এবং আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)

  • জন্মের ৭ দিন পর খতনা বা মুসলমানি করানো সুন্নাতঃ

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম দিনে হাসান ও হোসাইনকে আক্বীকা দেন এবং তাদের খতনা করেন। (তাবারানী, বায়হাকী)

জন্মের ৭ দিন থেকে ৩ বছর পর্যন্ত নবজাতকের খৎনা করা ভাল। আর ৭ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই খতনা করা উত্তম। তবে বয়ঃসন্ধির আগে খতনা করা জরুরি।

আরও পড়তে পারেন

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে মুসলমান, পঞ্চাশ বছরের মধ্যে খ্রিস্টানদের ছাপিয়ে যাবে

৭০ বছর বয়সে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেন ফিলিস্তিনি নারী বেগম আয়েশা

ইসলামে হালাল উপার্জন

মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে উত্তপ্ত চীন, চলছে কঠোর বিক্ষোভ

হাদিসের আলোকে নবজাতকের উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথভাবে পালন করা মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি অভিভাবকের জন্য জরুরি।আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল  মুসলিম উম্মাহকে  আমাদের  সন্তানদের জন্য উল্লেখিত আমল করার তাওফিক দান করুন। আর কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সমাজ গঠনে এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X