ফেরেশতাগনের দায়িত্ব
ফেরেশতারা পাখা বিশিষ্ট নূর বা আলোর তৈরি আল্লাহর এক অপরূপ সৃষ্টি। ফেরেশতাদের উপরে অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে। কারণ সাতটি বিষয়ের ঈমানের বাধ্যকতার মধ্যে ফেরেশতা ও একটি বিষয়। তাই ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাসের কোনরূপ এর-ফের হলে অবশ্যই ঈমান চলে যাবে । এবং এই ব্যক্তি মুসলমানই থাকবে না।
যদিও পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল কিছুই নিজ দায়িত্বে করে থাকেন এবং সকল কিছু কি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তত্ত্বাবধানে রেখে কার্য পরিচালনা করেন । এরপরেও ফেরেশতাদেরকে বিভিন্ন কাজ বন্টন করে দিয়েছেন । আর আখেরাতের চিত্র, দুনিয়ার হাল হাকিকত এবং দুনিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ এগুলোকে চিন্তায় এনে বুঝার জন্যই ফেরেশতাদের দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করছি ।
‘ফেরেশতা মূলত একটি ফার্সি শব্দ। ফিরিশতা বা ফেরেশতা (আরবি: ملاءكة ) (ইংরেজি: Angels) ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী ফেরেশতা দূত । আরবীতে ফেরেশতাদেরকে একবচনে মালাক এবং বহুবচনে মালাইক বলা হয়। তাদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা মানুষের মতোই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি।
দিনরাত তারা অক্লান্তভাবে আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করে এবং আল্লাহর নাফরমানি করার ক্ষমতা তাদের নেই। ফেরেশতারা আলো (নূর) দিয়ে তৈরি। তারা পবিত্র স্থানে অবস্থান করে । তারা যে কোন জায়গায় ভ্রমণ এবং আকৃতি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।
তবে ফেরেশতাগন রেশনাল এনিমেল নয়, তারা শুধু রেশনাল ক্রিয়েশন। অর্থাৎ তাদের ভিতরে জৈবিক কোন চাহিদা দেয়াই হয় নাই। তাই তারা সকল রূপ মানবিক চাহিদার বাহিরে অবস্থান করে। এবং তাদের ভিতরে সেক্সুয়াল ডিমান্ড একেবারে দেয়াই হয়নি। তাই তারা জৈবিক চাহিদার বাহিরে থেকে সব সময় আল্লাহর হুকুম শতভাগ পালন করে থাকেন । দায়িত্ব পালনে তাদের ক্লান্তি ও অবাধ্যতা নেই । এটাই মানবসহ অন্যান্য সৃষ্টি থেকে ফেরেশতাদের মূল পার্থক্য।
কোরানে ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
” …ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। [কোরআন আত-তাহরিম .৬ ]
আল্লাহ ফেরেশতাদের বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন। তাদের কাজের কিছু বর্ণনা কুরআন ও হাদিসেও পাওয়া যায়। এ ছাড়া আল্লাহর অনেক ফেরেশতা রয়েছেন, যাদের সংখ্যা ও কর্মকাণ্ড সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। নীচে ফেরেশতাদের কিছু উল্লেখযোগ্য শ্রেণী এবং তাদের কার্যাবলী রয়েছে:
ফেরেশতার সংখ্যা অগণিত। কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ ফাংশনের উপর ভিত্তি করে ফেরেশতাদের বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করেছেন।
- জিবরাঈল (আ.):
তাঁর কাজ হল নবী ও রসূলদের কাছে ওহী বা ঈশ্বরের বাণী পৌঁছে দেওয়া।
পবিত্র কোরানে উল্লেখ আছে, ‘বলুন, যে ব্যক্তি জিবরাইলের শত্রু এ জন্য যে সে আল্লাহর নির্দেশে তোমার অন্তরে কোরআন পৌঁছিয়ে দিয়েছে, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যা মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৭)
- মিকাইল (আ.):
তার কাজ বৃষ্টি এবং উদ্ভিদ উৎপাদন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহঃ) লিখেছেন, ‘মিকায়েল আল্লাহর নিকটতম ও মর্যাদাবান ফেরেশতাদের একজন।তিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল
(আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া)
- ইসরাফিল (আ.):
আল্লাহ তাকে সিঙ্গার দায়িত্ব অর্পণ করেন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ‘ইসরাফিলকেসিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সমস্ত পৃথিবীর সকল কিছু চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার জন্য, কবর থেকে উঠার জন্য এবং হাশরের ময়দানে পুনরুত্থিত হওয়ার জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন।’
- আজরাইল (আ.):
আল্লাহ তাকে মৃত্যুর ফেরেশতা হিসেবে মনোনীত করেছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘বল, তোমার জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমার প্রাণ কেড়ে নেবে। অবশেষে তোমাদের প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন করা হবে।’ (সূরা সাজদা, আয়াত: ১১)
আরও পড়ুন
উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে আল কোরআনে শেখানো দোয়া
পরিবারের সদস্যদের আনন্দ দেওয়া মহানবীর সুন্নত
দেবর-ভাবী, শ্যালিকা-দুলাভাই দেখা-সাক্ষাত পর্দা । কি বলে ইসলাম?
- রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতা:
আল্লাহর ফেরেশতাদের একটি দল সব পরিস্থিতিতে বান্দাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে। বলা হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তার আগে ও পেছনে একজন পাহারাদার থাকে; আল্লাহর নির্দেশে তারা তা রক্ষণাবেক্ষণ করে।’ (সূরা রাদ, আয়াত: ১১ )
- ভাগ্য লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা:
সন্তান গর্ভে মাংসে পরিণত হওয়ার পর একজন ফেরেশতা তার ভাগ্য লিখে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তখন আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠালেন। আর তাকে চারটি বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে। তাকে তার আমল, জীবিকা, আয়ু এবং সে পাপী নাকি পুণ্যবান হবে তা লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়। তখন তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়।’ (সহীহ বুখারী)
- ভালো-মন্দ কর্ম লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা:
তারা ফেরেশতাদের একটি দল যারা মানুষের ভাল এবং খারাপ কাজ রেকর্ড করে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, “তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন কথা ও পরামর্শ সম্পর্কে অবগত নই?”অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তাদের সঙ্গে থেকে সব কিছু লিপিবদ্ধ করে।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৮০)
- আরশ বহনকারী (হামালাতুল আরশ):
একদল ফেরেশতা যারা আল্লাহর নিকটবর্তী তারা আল্লাহর আরশ বহন করছে। বলা হয়, ‘যারা সিংহাসন (আল্লাহর আরশ) ধারণ করে এবং যারা এটিকে ঘিরে রাখে’ (সূরা আল-মুমিন, আয়াত ৭)
- মুনকার-নকির:
ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর, মুনকার-নকির নামে দুইজন ফেরেশতা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসবেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন মৃত ব্যক্তি বা তোমাদের কাউকে কবরে রাখা হয়, তখন তার কাছে কালো রঙের এবং নীল চোখের দুইজন ফেরেশতা আসে। তাদের একজনকে মুনকার এবং অপরটিকে নকীর বলা হয়।’ (সুনানে তিরমিযী)
- জান্নাতের দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেশতা:
জান্নাতের অভিভাবক ফেরেশতারা জান্নাতীদের স্বাগত জানাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর জান্নাতের রক্ষকরা তাদের বলবে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং স্থায়ী আবাসের জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সূরা জুমার, আয়াত ৭৩)
- মালিক ফেরেশতা:
জাহান্নামের অভিভাবক ফেরেশতা: যে ফেরেশতা জাহান্নামীদের আগুনে পোড়ানোর দায়িত্বে দায়িত্ববান থাকবে সেই মালিক ফেরেশতা।
আল্লাহ বলেন ,
” হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। (কোরআন আত-তাহরিম .৬)
আল্লাহতালা অসংখ্য ফেরেশতা তৈরি করেছেন। যার সংখ্যা বা গণনা একমাত্র রাব্বুল আলামিন জানেন। তাই তাদের কর্মের উপর ভিত্তি করে উপরে বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো । আল্লাহ আমাদেরকে তাদের এ দায়িত্ব জানার পর সুচারুরূপী আমাদের দ্বীন-দুনিয়ার কর্মগুলো করার তৌফিক দান করুন।আমীন।