December 3, 2024
দেবর-ভাবী, শ্যালিকা-দুলাভাই দেখা-সাক্ষাত পর্দা । কি বলে ইসলাম?

দেবর-ভাবী, শ্যালিকা-দুলাভাই দেখা-সাক্ষাত পর্দা । কি বলে ইসলাম?

দেবর-ভাবী, শ্যালিকা-দুলাভাই দেখা-সাক্ষাত পর্দা । কি বলে ইসলাম

দেবর-ভাবী, শ্যালিকা-দুলাভাই দেখা-সাক্ষাত পর্দা । কি বলে ইসলাম?

আমাদের সমাজে একটি জনপ্রিয় ফাও প্রবাদ রয়েছে: “ভাবী মায়ের মতোই”। তাই ভাবীর সামনে পর্দার  প্রয়োজনই মনে করেন না দেবর! এসব অশ্লীল ও নোংরা কথা আমরা প্রায়ই শুনি।

আর এখানে-সেখানে ভাবিকে নেওয়ার কাজটা দেবরই  ভালোভাবে করতে পারে । এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজনও মনে করে যে, বড় বউ আমার ছোট ছেলেকে কিছুক্ষণ বাইরে গেলে নিয়ে যাবে তাতে কি। শুধু তাই নয়, সব ধরনের ইয়ার্কি-মুশকারা, দেবর-ভাবি, শ্যালিকা-দুলাভাই এর মধ্যে অশ্লীল ফাইজলামি – এগুলো খুবই সাধারণ ব্যাপার!

দেবর-ভাবীর মতো আরেকটি খোলামেলা সম্পর্ক হলো দুলাভাই আর শালী (শ্যালিকা)। দেখা যায়, যত ইচ্ছা  মজাদারি  আর শয়তানি চলতেই  থাকে দুলাভাই আর শালীর মধ্যে। সেইসাথে শালীর বড় বড় আবদার পূরণ করতেই  হয় দুলাভাইকে।  শপিং মলে কেনাকাটা থেকে শুরু করে মাসে অন্তত একবার রেস্তোরাঁয় খাওয়া সব কিছুর দায়িত্ব দুলাভাইয়ের। অন্যদিকে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ঘরের কাজকর্মের দায়িত্ব শালীর। মনে হয় দুলাভাইয়ের কাছে শালী তার নিজের স্ত্রীর মতো! আস্তাগফিরুল্লাহ। আল্লাহ মাফ করুন।

আনসারদের এক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, শ্বশুর গোষ্ঠির নিকটাত্মীয় (যেমন: দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, বেয়ায়-বেয়াইন ইত্যাদি ব্যক্তিগণ যারা পরষ্পরের জন্য মাহরাম নয়) সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বললেন: “সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)।”

মৃত্যু যেমন জীবনের জন্য ভয়ানক, অনুরূপভাবে চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই-বোন ও দেবর-ভাবি ও শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের সাক্ষাৎ ঈমান-আমলের জন্য তেমনই ভয়ানক। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা, পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতায় যথাসাধ্য পর্দা ও শালীনতা রক্ষা করা জরুরি।

দেবর-ভাবীর এবং শ্যালিকা-দুলাভাই দেখা-সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা সুস্পষ্ট। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা (মাহরাম নয়) নারীদের কাছে যাওয়া পরিত্যাগ করো। এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, দেবর সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বলেন, দেবর তো মৃত্যু সমতুল্য।’ (বুখারি ও মুসলিম)। ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, সেখানে স্বামীর ভাই – স্বামীর ছোট হোক বা বড় হোক সকল ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা একই।

প্রিয়নবী (সা.) এদের মৃত্যু বা মৃত্যুদূত বললেন কেন? এর কারণ হচ্ছে , এসব নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারে পর্দার কঠোরতাকে অবজ্ঞা করা সাধারণ মানুষের অভ্যাস এবং পারস্পরিক মেলামেশায় কোনো দোষ নেই বলে মনে করা। ফলে দেখা করার সুযোগ রয়েছে।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ ধরনের অবজ্ঞায় নৈতিকতা ও ধর্ম মরে যায়। হয়। এমনকি অনৈতিকতা ও আত্মসম্মানের দ্বন্দ্ব দাম্পত্য জীবনের মৃত্যু ঘটায়।

আল্লাহ বলেন;

(ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।) (সুরা নূর : আয়াত ৩১)

হাদিসে এসেছে-

(হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তিনি বলেন, একদিন আমি ও মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে ছিলাম। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পর্দার আড়ালে যাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি অন্ধ নয়? তিনি আমাদের দেখছেন না। জবাবে আল্লাহর রাসুল বললেন, তোমরা কি তাকে দেখছো না?) (আবু দাউদ, তিরমিজি)

অন্য বর্ণনায়, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে নারী গোপনযোগ্য। যখন  ঘর থেকে বের হলে শয়তান তার দিকে তাকিয়ে থাকে। (মিশকাত)

আরও খবর

হিজাব বা পর্দা সমাজকে নিরাপত্তা দেয়ঃ বেপর্দা করে ধ্বংস

মাহরাম কারা? তাদের পরিচয় জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্যই জরুরি

আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসঃ গুরুত্বপূর্ণ কয়টি বিষয়

পর-নারীর সঙ্গে বসবাস ইসলামে নিষিদ্ধ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি যখন তাদের কাছে কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাদের কাছ থেকে তা চাইবে। এই নীতি আপনার হৃদয় এবং তাদের বিশুদ্ধতা রক্ষা করার জন্য আরো দরকারী. (সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৩)

এই ধরনের ক্ষেত্রে মহিলাদের কথা বলা উচিত, শুধুমাত্র প্রয়োজন এবং শৃঙ্খলার জন্য। আল্লাহতায়ালা নারীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা কথা বলার সময় কোমল হয়ো না (যদি তা করো) তাহলে যার অন্তরে রোগ আছে সে তোমার প্রতি প্রলুব্ধ হবে (কিন্তু) তুমি (সব সময়) নিয়ম মাফিক  কথা বল…।” (সূরা আহযাব) আয়াত: ৩২)

নারী-পুরুষের অবাধ মিলনের পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে একা থাকে, শয়তান তাদের সঙ্গে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে যোগ দেয়।’

তাই এ সকল নন মাহরাম নিকটাত্মীয়দের মাঝে পর্দা বিহীনভাবে দেখা-সাক্ষাৎ, অবাধে উঠাবসা, হাসি-কৌতুক, দুষ্টুমি, নির্জনে বসে গল্প করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন, মেসেঞ্জার বা সরাসরি কথা বলা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কথা বললেও কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠ পরিত্যাগ করতে হবে। আর শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদি শ্বশুর গোষ্ঠির নন মহরাম নিকটাত্মীয়কে হাদিসের ভাষায় ‘মৃত্যু’ সমতুল্য বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X