November 21, 2024
ইসলামী কথনঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় গুরুতর অপরাধ

ইসলামী কথনঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় গুরুতর অপরাধ

ইসলামী কথনঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় গুরুতর অপরাধ

ইসলামী কথনঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় গুরুতর অপরাধ

আপনার পক্ষের অথবা বিপক্ষের যে শক্তি দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালনা হোক না কেন।  আপনি রাষ্ট্রের একজন আমানতদার । রাষ্ট্রের একেবারে ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোন স্থানেই আপনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করতে পারবেননা। তা আপনার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমনকি রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক আল্লাহতালার পক্ষ থেকে বড় আমানত।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের ধর্মীয় দায়িত্ব। কারণ এটা পবিত্র আমানত। প্রত্যেক নাগরিকের উচিত এই আমানত রক্ষা করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আদেশ করছেন আপনার আমানত প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিতে। (সূরা নিসা: আয়াত ৫৮ )।

পেয়ারা নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যার আমানদারিতা নেই, তার ঈমান নেই। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পাহাড়, মাটি, বন, বালি ইত্যাদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। (বনি ইসরাইল: আয়াত ২৭)।

আমাদের দেশে অনেক সরকারি বেসরকারি জমি আছে, যেগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদের অন্তর্গত। সেখানে অবৈধ নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বন উজাড়, সন্দেহ নেই এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘা জমি দখল করে, কিয়ামতের দিন তার গলায় সাত স্তর জমি ঝুলানো হবে।” ।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা বড় মাপের গুনাহ। ফলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘যারা আত্মসাৎ করে, তারা কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত সম্পদ নিয়ে হাজির হবে। এবং সবাই তার উপার্জনের ফল ভোগ করবে। (আল কোরআন)।  আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহর সুনানে হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) বর্ণনা করেন, “খায়বার যুদ্ধে এক ব্যক্তি কিছু আত্মসাৎ করেছিল। পরে যখন তিনি ইন্তেকাল করেন, তখন রাসুল কারিম (সা.) তাঁর জানাজা করেননি। বরং তিনি বলেন, সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাশি করে তাতে একটি রেশমী কাপড় পেলাম।যার মূল্য হয়তো দুই দিরহাম হবে।

সহীহ মুসলিম ও বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে, একবার রাসুল (সা.) বায়তুল মালের অর্থ সংগ্রহের জন্য ইবনে লুতবিয়াকে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে সংগৃহীত অর্থকে দুই ভাগে ভাগ করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ, আর এগুলো আমার সম্পদ। মানুষ আমাকে যা উপহার হিসেবে দিয়েছে। তার কথা শুনে রাসুল (সাঃ) খুব রেগে গেলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, আমি তোমাদের একজনকে দান-খয়রাতের জন্য পাঠালে সে ফিরে এসে বলে, ‘এগুলো রাষ্ট্রের এবং এগুলো আমার সম্পদ, যা মানুষ আমাকে উপহার হিসেবে দিয়েছে।’ তার ভাবা উচিত যে তিনি যদি বাড়িতে থাকতেন তবে লোকেরা তাকে উপহার দিত না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর কসম! যারা রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করে না, আমানতের খেয়ানত করে, তারা কেয়ামতের দিন উট কাঁধে নিয়ে উঠবে। সে আমার কাছে সাহায্যের জন্য চিৎকার করবে, কিন্তু আমি সেদিন তাকে সাহায্য করব না। আলোচ্য কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা ঈমানদারের ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। সে দায়িত্ব পালনে আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সদা সচেষ্ট থাকব।

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X