মসজিদের নিচে আর মন্দির খোঁজা চলবে না,আদালতের হুঁশিয়ারি ভারতে!
ভারতের উত্তর প্রদেশে মুঘল আমলে নির্মিত সাম্বল শাহী জামে মসজিদকে ঘিরেও বেশ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ৬ জন মুসল্লিকেও হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতে মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজার উন্মাদনা দেখা দিয়েছে। আর মোদীও আছে এই তালেই। কট্টরপন্থী হিন্দুরা বিভিন্ন স্থানে যেখানে ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আছে সেখানে সমীক্ষার অনুরোধ করছে, দাবি করছে যে, সেখানে মন্দির ছিল। ভারতীয় আদালতও সে অনুযায়ী সালিশ আদেশ জারি করছে। যদিও দেশটির সুপ্রিম কোর্ট, ভারতীয় উপাসনালয় আইনের বেশ কয়েকটি ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একাধিক আপিলের শুনানিতে সম্প্রতি বলেছে যে, আপাতত উপাসনালয় নিয়ে নতুন কোনও মামলা করা যাবে না।
মোহন ভাগবত, যিনি নিজে একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের নেতা, তিনি এখন এই ‘অধার্মিকতার’ বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক আধাসামরিক সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’ (আরএসএস) এর নেতা ভাগবত বলেছেন, “রাম মন্দির ছিল বিশ্বাস ও আস্থার বিষয়। এবং হিন্দুরা মনে করেছিল যে এটি অবশ্যই নির্মাণ করা উচিত। কিন্তু, যেভাবে। একই ইস্যু বেশ কয়েকটি নতুন জায়গায় উত্থাপিত হচ্ছে এবং যে ঘৃণা ও শত্রুতার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।”
পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশজুড়ে নতুন ধারা শুরু হয়েছে। ছোট-বড় হিন্দু সংগঠন বা যেকোনো হিন্দু নেতা বা ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মসজিদ জরিপের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই, ওই মসজিদের জায়গায় কোনো মন্দির ছিল কিনা তা যাচাই করা। এ কারণে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অশান্তি এমনকি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
এমন আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এই ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
মহারাষ্ট্রের পুণেতে আয়োজিত ‘বিশ্বগুরু ভারত’ কর্মসূচির মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত
বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের পুনেতে ‘বিশ্বগুরু ভারত’ অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতায় ভগবত বলেন, “সম্প্রতি কিছু হিন্দু নেতা দেশের বিভিন্ন স্থানে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের মতো ‘বিবাদ’ বাড়াতে চাইছেন। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ”
ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে ভাগবত বলেন, “ভারতের এমন একটি উদাহরণ স্থাপন করা উচিত যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি থাকতে পারে।”
এটি লক্ষণীয় যে, সম্প্রতি, কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্মীদের একটি অংশ উত্তর প্রদেশের সম্বলের জামে মসজিদ এমনকি রাজস্থানের আজমির শরিফের সমীক্ষার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে।
সেই প্রসঙ্গে মোহন ভগবত বলেন, “ভারতকে তার অতীতের সমস্ত ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তবেই ভারত বিশ্বের মানচিত্রে ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের প্রমাণ করতে হবে কীভাবে আমাদের বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও একসাথে থাকতে হয়।”
যদিও ‘অযোধ্য়ার রাম মন্দিরের বিষয়টি ছিল স্বতন্ত্র’- এমন মন্তব্য করে ভাগবত বলেন, “তার সঙ্গে অন্যান্য ঘটনা গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
ভাগবত বলেন, “সমাজে এই ধরনের বৈষম্য ও বিবাদ নিরসনের সর্বোত্তম উপায় হল প্রাচীন সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া।
মোহন ভাগবত বলেন,”চরমপন্থা, আগ্রাসী মনোভাব, জবরদস্তি এবং অন্য ধর্মের উপাসকদের অপমান করা আমাদের সংস্কৃতি নয়। ”
তারপর, কার্যত ঘোষণামূলক সুরে তিনি বললেন, “এখানে সাংখ্যগুরু, সাংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। আমরা সবাই এক। এ দেশে প্রত্যেকেরই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ঈশ্বরের উপাসনা করার সুযোগ পাওয়া উচিত।”