ভারতে ৫০০ বছরের প্রাচীন মসজিদ কেন্দ্রিক পুলিশের গুলি: নিহত ৬
মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা এবং মসজিদের স্থানে মন্দিরের পুরাকৃতির দাবি করা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের স্বভাবগত সাম্প্রদায়িক দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই দাবি চার – পাঁচশত বছর আগের করা মসজিদগুলো কেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটা ভারত এবং হিন্দুদের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।
শাহী জামে মসজিদ সম্বলের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। সম্রাট বাবরের নির্দেশে ১৫২৬ সালে মীর বেগ এটি নির্মাণ করেন। এই মসজিদের প্রথম পাথর বাবর নিজেই স্থাপন করেছিলেন। মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন এবং এটি এলাকার একটি প্রধান পর্যটক আকর্ষণ। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ১৯২০ সালে মসজিদটিকে একটি সংরক্ষিত ভবন হিসাবে ঘোষণা করেছিল। ১৯৭৬ সালে, এই মসজিদের ইমামকে একজন ব্যক্তি হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনায় সে সময় সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
উত্তরপ্রদেশের সম্বলে প্রাচীন মসজিদ, শাহী জামে মসজিদ নিয়ে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষে অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সরকারি সংস্থা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) একটি দল স্থানীয় আদালতের নির্দেশে মসজিদটি তদন্ত করতে গেলে স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে রাস্তায় সংঘর্ষ বেধে যায়।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চেরাগ গোয়েল দাবি করেছেন যে, ছয়জন নিহত হয়েছেন তারা সবাই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ক্রসফায়ারে ধরা পড়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ শুধু কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। নিহতরা ঘরোয়া বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন।
হিন্দু ধর্মযাজক কর্তৃক মামলা দায়েরের পর সংঘর্ষ শুরু হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের জায়গায় মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। গত ১৯ নভেম্বর প্রথম ধাপের তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। চার দিন পর দ্বিতীয় ধাপের তদন্তে ভিডিও ও ছবি তোলা হলে আরও উত্তেজনা তৈরি হয়।
ঐতিহাসিকরা দাবি করেন যে শাহী জামে মসজিদটি ১৫২৬ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
রোববার সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়। পরে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, মুঘল আমলে হিন্দু মন্দির ভেঙে বেশ কয়েকটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। সম্বলের ঘটনা তার সঙ্গে মিল রয়েছে।
এর আগে, ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে সারা দেশে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যাতে প্রায় ২,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই মুসলমান।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে হিন্দু আধিপত্য জোরদার হয়েছে৷ এটি দেশের আনুমানিক ২১০ মিলিয়ন মুসলিম জনসংখ্যাকে তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি।
ভারতে প্রাচীন মসজিদ জরিপ নিয়ে সহিংসতায় ৩ জন নিহত হয়েছেন
উত্তরপ্রদেশের সম্বলে মুঘল আমলের একটি প্রাচীন মসজিদের জরিপ চালানোর নির্দেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণ ও পুলিশের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়।
এনডিটিভি অনলাইন জানিয়েছে, শহরের ‘শাহী জামে মসজিদ’ ঘিরে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাজ্যের হিন্দুত্ববাদী দলগুলির দাবি, একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির ভেঙে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। আজও মসজিদের স্থাপত্যে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হলে, আদালত সিনিয়র আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের নেতৃত্বে একটি সমীক্ষা দল গঠন করে। দলটি রবিবার সম্বলে পৌঁছেছে। স্থানীয় লোকজন এর বিরোধিতা শুরু করে। একপর্যায়ে জনতা পুলিশ ও জরিপ দলকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা আগুন দিতে শুরু করলে পুলিশ গুলি চালায়। এ ঘটনায় ৬জন নিহত হয়েছেন।
মোরাদাবাদ বিভাগীয় পুলিশ প্রধান অঞ্জনে কুমার সিং বলেছেন যে হামলায় জড়িত থাকার জন্য তিন মহিলা সহ মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শাহী জামে মসজিদ নিয়ে মামলাটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন। মামলায় তিনি দাবি করেন, এটি অতীতে হরিহর মন্দির ছিল। মুঘল আমলে এটি ভেঙ্গে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এই কাজটি ১৫২৬ সালে মুঘল সম্রাট বাবর করেছিলেন। আদালত বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের মামলার ভিত্তিতে মসজিদটি জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুলিশ মোতায়েন নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর প্রথম ধাপে জরিপ করা হয়। রোববার সরকারি কর্মকর্তারা দ্বিতীয় ধাপের জরিপের জন্য সেখানে যান।
আরো পড়তে