ভারতকে কাঁদিয়ে ষষ্ঠ শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার
নিজের মাঠ, সাজানো পিজ, দর্শকদের উৎফুল্লতা, অপরাজিত ফাইনাল লিগ, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আর ২০ বছরের উপরে গড়া আইপিএল কোন কিছুই যেন আপন হয়ে উঠেনি ভারতের খেলোয়াড়দের । তারা বড় অসহায়ের মত কম রানের পুঁজি করে অস্ট্রেলিয়ার মতো দুর্দান্ত প্লেয়ারদের কাছে ছেলে খেলায় পরিণত হয়ে কঠিনভাবে হারলেন ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল । বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষ আনন্দিত । আনন্দিত সারা বিশ্ব ।
প্রতিপক্ষের কান্না দেখার নির্মল আনন্দ খেলাধুলায় শেষ পর্যন্ত আসলে জায়েজ । প্রতিপক্ষের আঙিনায় পা দিয়ে জেতার কোনো মানে হয় না। প্যাট কামিন্স বলেছেন, ‘ভর্তি গ্যালারি দমিয়ে ফেলার চেয়ে আনন্দ আর কিছুই নেই।’ আহমেদাবাদের ১৩২০০০ ধারণক্ষমতার নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া ঠিক সেটাই করেছে।
তরঙ্গহীন, গতিহীন, স্থবির নীল জলের ‘প্রশান্ত মহাসাগর’ হিসাবে নীল জার্সিতে আচ্ছাদিত গ্যালারিটি নিশ্চুপ করে দিল অস্ট্রেলিয়া । ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটের বড় জয় লিখে দিয়েছে আহমেদাবাদের ট্র্যাজেডি। ষষ্ঠ শিরোপা পূর্ণ করেছে ‘মিশন হেক্সা’।
একটা প্রবাদ প্রবণতা আছে যে,ফাইনাল খেলতে হয়না, ফাইনাল জিততে হয়। আর অস্ট্রেলিয়া সেটাই প্রমাণ করেছে। প্রথমেই এক জোড়া পরাজয় নিয়ে শুরু করা আজিরা একমাত্র অপরাজিত দল এবং স্বাগতিক ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জিতেছে।
প্যাট কামিন্সের দল ঘরে বসে প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজার দর্শককে কাঁদিয়ে শিরোপা উদযাপন করেছে । ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে কামিন্স বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দর্শককে নীরব করা।” আর সেটাই দেখিয়েছেন কামিন্স।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায়। প্রথমে ব্যাট করে ওভারে ২৪০ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। দলের পক্ষে বিরাট কোহলি ৬৩ বলে ৫৪ এবং লোকেশ রাহুল ১০৭ বলে ৬৬ রান করেন।
২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দলের ১৬ রানে ৩ বলে ৭ রান করে আউট হন ডেভিড ওয়ার্নার।
এরপর ক্রিজে এসে মিচেল মার্শকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন ট্র্যাভিস হেড। তবে দলের ৪৭ রানের মধ্যে আরও দুটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
১৫ বলে মার্শ ১৫ ও স্টিভেন স্মিথ ৯ বলে ৪ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। এরপর ক্রিজে এসে মার্নাস লেবুশানেকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন হেড।
দেখে দেখেই ব্যাটিং করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন হেড। ফিফটির পরই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালিয়ে তিনি। অন্যদিকে একটু ধীরগতিতে ব্যাটিং শুরু করেন লেবুশানে।
মারমুখী ব্যাটিংয়ে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি করেন হেড। এরপর ফিফটি পূর্ণ করেন লেবুশানে। এই দুই ব্যাটসম্যান ভারতীয় বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়েই দলকে জয়ের বন্দরে ধরে রাখেন।
তবে জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে ১২০ বলে ১৩৭ রান করে আউট হন হেড। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে আসায় অস্ট্রেলিয়া ৪২ বল হাতে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় পায়। সেই সঙ্গে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে আজিরা।
সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে শিশিরের প্রভাব বাড়বে। তা জেনে আউজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স টসে জিতে বোলিং করেন। গ্রুপ পর্বের মতো ফাইনালেও বল হাতে ভারতীয় শিবিরে আঘাত হানে বোলাররা। শুরুতেই শুভমান গিলকে (৪) ফেরান মিচেল স্টার্ক। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির জুটি ভাঙলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৩১ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন অধিনায়ক রোহিত। চারটি চার ও তিনটি ছক্কা মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় অস্ট্রেলিয়া। তারা ১০.২ ওভারে ৮১ রানে ভারতের ৩ উইকেট তুলে নেয়।
সেই চাপ সামলানোর চেষ্টায় সফল হননি বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল। ৬৭ রানের জুটি গড়েন তারা। কোহলি ৬৩ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৫৪ রান করেন। হতবাক মোদি স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে ফিরে আসেনি কোনো প্রাণ। ১৪৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের শেষ বলে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। উইকেটে থাকার চেষ্টাও করতে পারেননি কেএল রাহুল। মাত্র একটি চারে ১০৭ বলে ৬৬ রান করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়াও জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সপ্তম ওভারে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। একে একে ফিরে যান ডেভিড ওয়ার্নার (৭), মিচেল মার্শ (১৫) ও স্টিভ স্মিথ (৪) । তাদের দিকে ফিরে, ভারত ‘হোম গ্রাউন্ড নাহি দেব খুত’ বার্তা পাঠিয়েছিল, তবে ওপেনার ট্র্যাভিস হেড এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ম্যাচের বাকি অংশের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন।
ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বের অর্ধেক ম্যাচ খেলতে না পারা এই ব্যাটসম্যান ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫টি চার ও চারটি ছক্কা। দারুণ এক ইনিংসে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন হেড। ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ইনিংসের কথা মনে করিয়ে দেয়।
কিন্তু ক্রেডিট দিতে হবে মার্নাস লাবুসচ্যান্ডকে। শুরুতেই উইকেট হারানোর পুরোনো চাপ কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। হেড শট খেলার সাহস নিয়ে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ১১০ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ধরে রাখেন তিনি। এর আগে ভারতকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার। স্টার্ক নেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন কামিন্স ও হ্যাজেলউড।
আরও পড়ুন
ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের খাবারের মেনুতে নেই গরুর মাংস
1 Comment