তৃতীয় সন্তান জন্ম দিলে ১২ লাখ টাকা বোনাস, সঙ্গে ১ বছরের বেতনসহ ছুটি
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চীন দীর্ঘদিন ধরে ‘একক শিশু’ বা এক সন্তান নীতি অনুসরণ করে আসছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম এই দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তরুণদের তুলনায় দ্রুত হারে বাড়ছে। ফলে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে, চীনা সরকার এখন শ্রমের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে নাগরিকদের আরও বেশি সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। এ অবস্থায় কর্মীদের জন্য আকর্ষণীয় অফার দিয়েছে চীনের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি ঘোষণা করেছে যে তিন সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে কর্মীদের বেতন সহ এক বছরের ছুটি দেওয়া হবে। ১২ লাখ টাকা আর্থিক বোনাস দেওয়া হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হংকংয়ের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে। মূলত সরকার জন্মহার বাড়াতে উৎসাহ দেখানোর পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসছে।
আরেকটি চীনা মিডিয়া আউটলেট, বিজনেস ডেইলি, রিপোর্ট করেছে যে চীনে শিশুদের পিতামাতাদের বেতনের ছুটি, ট্যাক্স বিরতি এবং আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। চীন সরকার শিশুদের লালন-পালনের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনাও দিয়ে থাকে। সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে আকর্ষণীয় অফার নিয়ে এগিয়ে আসছে। সরকারের মতোই তারাও কর্মীদের উৎসাহিত করছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে যে বেইজিং-ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি দা বেই নং টেকনোলজি গ্রুপ সম্প্রতি কর্মীদের সন্তান জন্ম দিতে উৎসাহিত করার জন্য একটি আকর্ষণীয় অফার ঘোষণা করেছে।
কোম্পানির ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের কোম্পানিতে কর্মরত কর্মচারীরা যখন তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেবে তখন তাদের ৯০,০০০ইউয়ান (১৪,১২৪ মার্কিন ডলার) বোনাস দেওয়া হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া সন্তান প্রসবের পর নারী শ্রমিকদের বেতনসহ এক বছরের ছুটি এবং পিতা হওয়া পুরুষ শ্রমিকদের ৯ মাসের ছুটি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, দা বেই নং টেকনোলজি গ্রুপ প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের জন্য বোনাসও দিচ্ছে। প্রথম সন্তানের জন্য ৩০,০০০ইউয়ান প্রদান করা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলে ৬০ হাজার ইউয়ান বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
ইতিমধ্যে চীনের স্থানীয় প্রশাসন সন্তান জন্মদানকে উৎসাহিত করার জন্য একটি পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। পাঞ্জিহুয়া সিটি প্রশাসনের মতে, দুই বা তিনটি সন্তান জন্ম দিলে প্রতি মাসে ৫০০ ইউয়ান বা ৬৫০০ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, চীনের কেন্দ্রীয় সরকার 98 দিনের বেতনের মাতৃত্বকালীন ছুটিও মঞ্জুর করেছে।
এর আগেও দক্ষিণ কোরিয়া সন্তান হলে পাবেন ৭৫ হাজার ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮২ লাখ টাকার বেশি। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি কোম্পানি নারী শ্রমিকদের জন্য অভিনব ঘোষণা দিয়েছে। কম জন্মহার থেকে দেশকে বাঁচাতে কোম্পানির এমন পদক্ষেপ।
সিউল-ভিত্তিক কোম্পানি বুয়ং সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) একটি ইভেন্ট করেছে যেখানে ২০২১ সাল থেকে তাদের কোম্পানিতে কর্মরত মহিলারা ৭০ টি বাচ্চার জন্ম দেওয়ার জন্য মোট $ ৫.২৫ মিলিয়ন পুরস্কার পেয়েছেন।
“দক্ষিণ কোরিয়ার প্রজনন হার কমতে থাকলে, আমাদের দেশ আগামী ২০ বছরের মধ্যে একটি অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হতে পারে,” বলেছেন বায়ং কোম্পানির চেয়ারম্যান লি জং-কিউন৷
তিনি আরও বলেন, একটি পরিবারে সন্তানের সংখ্যা অনেক সময় পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় সন্তান লালন-পালন করতে গিয়ে এবং তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অর্থের যোগান দিতে না পারার কারণে অনেকেই বেশি সন্তান নিতে চান না। তাই আমরা কর্মীদের বোনাস দেওয়ার চিন্তা করেছি।
অনেক দক্ষিণ কোরিয়ার বহুজাতিক এবং স্থানীয় কোম্পানি, যেমন বুওং, সম্প্রতি দেশের জন্মহার বাড়াতে বোনাস প্রদানের এই নীতি গ্রহণ করেছে৷ কুমহো পেট্রোকেমিক্যাল, একটি বহুজাতিক কোম্পানি, বলেছে যে তারা তার অফিসে কর্মরত সমস্ত মহিলাকে প্রতি সন্তানের সর্বোচ্চ ১৫,০০০ ডলার বোনাস দেবে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৬৪৬,৪৩৬ টাকা।
কুমহো পেট্রোকেমিক্যাল আরও জানায়, প্রথম সন্তানের জন্য ৩ হাজার ৮০০ ডলার বা প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্য তা বেড়ে ৭ হাজার ৬০০ ডলার, তৃতীয় সন্তানের জন্য ১১ হাজার ডলার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪০৬ টাকা এবং চতুর্থ সন্তানের জন্য দেওয়া হবে ১৫ হাজার ডলার।
এদিকে, দেশটির ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম ইউহান কর্প প্রথম শিশুর জন্য $৭,৬০০ পুরস্কার ঘোষণা করেছে। যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে এটি দ্বিগুণ হবে। কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি HanmiGlobal সম্প্রতি তাদের কর্মীদের সন্তান ধারণের জন্য বোনাস ঘোষণা করেছে