November 9, 2024
রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে সাপ নিধনের হিড়িক, ডেকে আনতে পারে যে হুমকি

রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে সাপ নিধনের হিড়িক, ডেকে আনতে পারে যে হুমকি

রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে সাপ নিধনের হিড়িক, ডেকে আনতে পারে যে হুমকি

রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে সাপ নিধনের হিড়িক, ডেকে আনতে পারে যে হুমকি

রাসেল ভাইপার সাপের বিস্তার নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাসেল ভাইপার সাপের ভয়ে রাসেল ভাইপার সাপের এর সাথে বিভিন্ন ধরনের সাপ পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।

তবে প্রাণিবিদরা বলছেন, সাপ জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যান্য প্রাণীর মতো সাপও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।এদিকে রাসেল ভাইপার সাপের প্রাদুর্ভাব নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আর মানুষ ভয়ে যেসব সাপ মেরে ফেলে সেগুলোর বেশিরভাগই অ-বিষাক্ত এবং পরিবেশের জন্য উপকারী।

রাসেল ভাইপার সাপ হঠাৎ বেড়ে গেল

রাসেল ভাইপার গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে একটি। রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোরা সাপ নামে পরিচিত।

এই সাপ একসময় বাংলাদেশে বিলুপ্ত বলে ধারণা করা হতো। কিন্তু ১০-১২ বছর আগে আবার সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায়। সাপ গবেষকরা জানান, ২০১৩ সাল থেকে এই সাপ বেশি দেখা যায়।

২০২১ সালে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি জেলা এবং চারণভূমিতে চন্দ্রবোড়া বা রাসে ভাইপার সাপের কামড়ে দুজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছিল।

চলতি বছর আবারও মানিকগঞ্জে গত তিন মাসে সাপের কামড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই কৃষক বলে জানান তারা। কারণ এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। ফলে ফসলের ক্ষেত স্বাভাবিকভাবেই সাপের উপদ্রব হয়

এদিকে, রাজশাহীতে সাপের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই ধান কাটার মৌসুমে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন পদ্মা তীর এলাকার কৃষকরা।

এদিকে, রোববার (২৪ জুন) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় পদ্মার পাড়ে পুলিশ একাডেমি চত্বর থেকে আটটি শিশু রাসেল ভাইপার উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা সাপের বাচ্চাগুলোকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

এমনকি সম্প্রতি, ফরিদপুরের স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে প্রতিটি রাসেল ভাইপার সাপের মারার  জন্য ৫০,০০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। পরে তিনি সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করেন।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাসেল ভাইপারের হুমকিতে শঙ্খ, অজগর, ঘরগিন্নি, তাশ, ধোঁড়া, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ মারা যাচ্ছে। তারা রাসেল ভাইপার সাপ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য আনে। কিন্তু এসব উপকারী সাপ মারা হচ্ছে।

তারা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে অ-বিষাক্ত প্রজাতির সাপ ও সরীসৃপকে হত্যা করছে। যে কোনো সাপ দেখলেই এখন  মেরে ফেলা হচ্ছে ।

এ প্রসঙ্গে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী সংবাদমাধ্যম বলেন, “রাসেল ভাইপার আক্রমণাত্মক সাপ নয়। তাকে আঘাত করলেই সে কামড়দেয়। সাপ মারতে হবে না। সতর্ক হোন। আমরা সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি।”

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চিকিৎসা সেবার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর সাপের কামড়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে একশ বিশটি রাসেল ভাইপারের কামড়ে মারা গেছে।

মোঃ আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, “ফসল ক্ষেতে প্রচুর সাপ আছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা সাপ নিধন প্রতিরোধ ও কৃষকদের সচেতন করতে কাজ করছেন। কারণ সচেতনতা বাড়লে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচার কমলে কয়েকদিনের মধ্যেই তা কমে যাবে।”

কারণ সাপ পরিবেশের জন্য উপকারী

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাপের ভূমিকা অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে, সাপ প্রকৃতির বন্ধু এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি অবিচ্ছেদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষ মাংসাশীদের মধ্যে রয়েছে সাপ ।

মোঃ আবু সাইদ ও মোঃ ফরিদ আহসানের “বাংলাদেশের সাপ ও সাপের কামড় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা” বইতে বলা হয়েছে, সাপ খুবই অলস ও নিরীহ প্রাণী। সাপ মানুষকে ভয় পায়, তাই মানুষকে দেখলেই প্রাণ বাঁচাতে সাপ পালিয়ে যায়। কিন্তু সাপের দ্বারা আক্রান্ত হলে সাপ মানুষকে কামড়ায় শুধুমাত্র  আত্মরক্ষার জন্যই । বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় সাপ একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে।

বইটির লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ফরিদ আহসান  বলেন, “এই চক্রে সাপ শিকারী এবং শিকার উভয়ই হতে পারে।কারণ সাপ যেমন অন্য প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে তেমনি সাপও অন্য প্রাণীর খাদ্য হয়ে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।”

read more…
সাপের স্যুপ শীতের মজাদার খাবার যে আজব দেশে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X