November 24, 2024
অনিয়ম আড়াল করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধাজ্ঞা দিয়েছেঃ সাংবাদিক ফোরাম

অনিয়ম আড়াল করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধাজ্ঞা দিয়েছেঃ সাংবাদিক ফোরাম

অনিয়ম আড়াল করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধাজ্ঞা দিয়েছেঃ সাংবাদিক ফোরাম

অনিয়ম আড়াল করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধাজ্ঞা দিয়েছেঃ সাংবাদিক ফোরাম

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছেন না সাংবাদিকরা। এক মাস ধরে এ অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সময়ে এই কঠোরতা আরোপ করেছে যখন আর্থিক খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ঋণে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আবার ঋণখেলাপিদের ক্ষমতা আগের মতোই রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক একত্রীকরণ শুরু হয়েছে।

এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন।

“বিভিন্ন অনিয়ম ও বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠী, স্বার্থান্বেষী মহল ও ব্যাংক ম্যানেজাররা সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা লুটপাটের ষড়যন্ত্র করছে। এর ফলে দেশের আর্থিক খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব অনিয়মের বিচার না করেই দেশের অনেক ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, যাতে প্রভাবশালীদের চাপে এসব তথ্য গণমাধ্যমে না আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ আরোপ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ভবনের সামনে ব্যাংক বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা এ মন্তব্য করেন।

ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা জানান, এখন পর্যন্ত একজন সাংবাদিক পাস ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসেপশন ডেস্কের রেজিস্ট্রার অ্যাকাউন্টে নিজের নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম ও মোবাইল নম্বর স্বাক্ষর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারতেন। গত ৫৩ বছর ধরে সাংবাদিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এভাবে প্রবেশ করে আসছেন।

কিন্তু গত এক মাস ধরে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে বিলম্ব করেছে। এখন বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ইকোনমি বিটের সাংবাদিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা অবস্থান করেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মির্ধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সমাধান দেননি গভর্নর ।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট অনুমতি (অ্যাক্সেস পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের পাস দিলেই কেবল ওই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে তারা আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে অবাধে প্রবেশ করতে পারবে না।

অর্থাৎ সরাসরি না জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তি-গোষ্ঠী, স্বার্থান্বেষী মহল ও ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এই বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। তারা দ্রুত এ ধরনের কালো সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের মতো সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দিয়ে আর্থিক খাতের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবেদনে সহযোগিতা করার দাবি জানান।

তারা বলেন, হলমার্ক, বেসিকের বাচ্চু ঋণ জালিয়াতি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, অ্যানোনটেক্স ও ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব লুটপাটের তথ্য জানার জন্য, দেশের জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া জরুরি।

ERF কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার দাবি করে

ইআরএফ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার থেকে তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তাদের বিনা বাধায় সাংবাদিকদের কাছে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য গভর্নরকে জোরালোভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইআরএফের একমাত্র দাবি অনুযায়ী বরাবরের মতো রিপোর্টারদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর। ‘তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চান, ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে পাস নিয়ে ঢুকতে হবে।’

ইআরএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫৩ বছর ধরে রিপোর্টাররা অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে কখনো তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে রিপোর্টারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়।

সার্বিক পরিস্থিতিতে রিপোর্টারদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ইআরএফের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইআরএফ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X