November 26, 2024
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছর

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছর

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছর

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছর

১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে হাজার বছরের সংগ্রামের পর স্বাধীনতা অর্জন করে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গৌরবময় সূচনার দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত হয় নতুন নাম- বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী জনতা স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। আজ সেই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তে অর্জিত এই স্বাধীন ভূমি। স্বাধীনতার আনন্দে এবং সমৃদ্ধির শপথে মুষ্টিবদ্ধ একটি দিন। আজ সারাদেশে নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে সমগ্র জাতি।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস-স্বাধীনতার ইতিহাস অর্জিত হয়েছে সশস্ত্র জনগণের সংগ্রামের মাধ্যমে । সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিদের দীর্ঘ সংগ্রাম। এই ইতিহাস ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগ এবং কোটি বাঙালির আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের গৌরবগাথা। আজ ২৬শে মার্চ সেই গৌরবময় ইতিহাসের সূচনা, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

সংসদ ভবন এদিন আলোয় আলোকিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত বর্ণাঢ্যভাবে পালিত হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিনটি ৩১ বন্দুকের স্যালুটের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। সূর্যোদয়ের সময়ই সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। জাতীয় স্টেডিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের র‌্যালি, কুচকাওয়াজ, প্রদর্শনী ও শারীরিক কসরত থাকে ।

আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার ডাক আসে। বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা। বাংলার সাহসী ছেলেরা তাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্ত করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাসের অনেক ত্যাগ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। জাতি অর্জিত হয় একটি দেশ, একটি জাতীয় পতাকা ও একটি জাতীয় সঙ্গীত। আজ সরকারি ছুটির দিন।

সমগ্র জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের। আমরাও স্মরণ করব বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যারা ৯ মাসে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এছাড়া সারাদেশ আজ স্বাধীনতা উৎসব উপভোগ করবে।

পলাশী প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যাস্তের পর দীর্ঘ সংগ্রাম-সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের মানুষ পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি পৃথক দেশ লাভ করে। এরপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বাঙালিকে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে থাকে। তবে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। স্বাধীনতার প্রত্যয়ে প্রবল বাঙালিদের সামনে যুদ্ধের কোনো অস্ত্র দাঁড়াতে পারেনি। বাঙালি হয়ে ওঠে সংগ্রাম, আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা অর্জনের অনন্য দীপ্তির প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের এই মহান মন্ত্রে জাতিকে উজ্জীবিত করে সেক্টর কমান্ডার, রণাঙ্গনের ফোর্স কমান্ডার এবং প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী  বীরগণ ধাপে ধাপে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরেন।

১৯৪৮ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন, ১৯৫ সালের জাতীয় ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়, ১৯৫৬ সালের সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৫৮ সালের শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনের পথ অনুসরণ করে। ১৯৬২, ১৯৬৬ সালের বাঙালি স্বাধীনতা সনদের ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান, সব- পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে সারাদেশে তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। সেদিনই সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী এই মুক্তিযুদ্ধে একদিকে রচিত হয় ইতিহাসের মহান অধ্যায়, অন্যদিকে বাংলার মানুষের স্বাধীনতা চেয়েছিল বীরত্ব; অন্যদিকে ছিল হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের কলঙ্কিত অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বিশ্বের মানচিত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X