হজ্জের যাত্রী কোটার চেয়েও অর্ধেক কমে গেছেঃ পারছেন না খরচের সাথে পাল্লা দিতে
হজ, ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, সমস্ত সক্ষম-শরীরী মুসলমানের জন্য একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান প্রতি বছর পবিত্র হজ পালনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। তাদের কেউ কেউ সরকারি ব্যবস্থাপনায় মক্কায় চলে যান। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও হজ করার সুযোগ রয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাওয়া বাংলাদেশে এবার হজের কোটা অর্ধেক পূরণ হয়নি এখনো। দুইবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কোটা পূরণের আগেই বৃহস্পতিবার হজ নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, অবশেষে ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ হজে নিবন্ধন করেছেন। আমরা সময় বাড়ানো হবে না।
তিন বলেন, গতবারের তুলনায় এবার হজে এক লাখ টাকা খরচ কমলেও আগের মতো সাড়া পাওয়া যায়নি।
১৫ নভেম্বর নিবন্ধন শুরুর পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ১১৫ জন নিবন্ধন করেছেন। সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনকে হজ করার অনুমতি দিয়েছে। হজ চুক্তি অনুযায়ী এখনো ৭৪ হাজার ৮৩টি কোটা শূন্য রয়েছে। ফলে মোট কোটার ৫৮ শতাংশ শূন্য রেখে হজ নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
প্রথম দফা হজ রেজিস্ট্রেশন ছিল ১৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর। পরে সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। হজযাত্রীদের সাড়া না পাওয়ায় শেষ রেজিস্ট্রেশনের তারিখ বাড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি করা হয়।
মোট ৫৩ হাজার ১১৫ জন হজযাত্রীর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৩ হাজার ৮০২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। কোটায় ৪২ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের জন্য দুটি প্যাকেজের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজের দাম ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার সর্বনিম্ন প্যাকেজের দাম কমেছে ১ লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে, নিবন্ধিতদের সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানানো হবে এবং অবশিষ্ট কোটা বাংলাদেশে ফেরত দেওয়া হবে। তবে সৌদি আরবের দেওয়া কোটার অর্ধেকও এখনও পূরণ হয়নি।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর কোটা রয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৬৪ হাজার ৪৫ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৩ হাজার ৯৭৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬০ হাজার ৬৯ জন নিবন্ধন করেছেন। সে অনুযায়ী এখনও ৬৩ হাজার ১৫৩টি কোটা শূন্য রয়েছে।
চলতি বছরের হজ নিবন্ধন গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১০ ডিসেম্বর। প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় প্রথম মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে সময় বাড়ানো হয় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং তৃতীয় ধাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 1 ফেব্রুয়ারি।
এদিকে আসন্ন হজ মৌসুমে মক্কায় প্রায় ২০ লাখ লোকের যোগদানের পরিকল্পনা তৈরি করছে সৌদি আরব। মক্কা সিটি মেয়রের কার্যালয় ৪০০০ ভবনের লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যেখানে ৫ লাখ কক্ষ থাকবে। আর এসব কক্ষে থাকবেন ২০ লাখ তীর্থযাত্রী। ইতিমধ্যে এক হাজার ভবনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। গত বছর ১৮ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরির ৯ই জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
গতবারও একই অবস্থা হয়েছিল। কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নিবন্ধন কম ছিল। তবে গতবারের তুলনায় এবার সাড়া অনেক কম।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এইচএবি) সভাপতি এস শাহাদাত হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর হজ খরচ এক লাখ টাকা কমেছে, তবে তা করোনার আগের তুলনায় অনেক বেশি। , ওমরার খরচ খুবই কম।সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার মধ্যে ওমরাহ করা যায়।ফলে খরচ বাঁচাতে অনেকেই এখন ওমরাহ করতে ঝুঁকছেন।
এ ছাড়া সৌদি আরব হজ নীতিতে অনেক পরিবর্তন এনেছে, এতে খরচ বাড়ছে। তাদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে তারা মুসলিম দেশ থেকে হজযাত্রীদের তাদের ব্যবস্থাপনায় নেবে। তারা পুরো ব্যবসা করতে চায়। তারা এখন অমুসলিম দেশগুলো থেকে সরাসরি অনলাইনে হজ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে ওমরাহ করেছেন। হজ সম্পূর্ণভাবে অনলাইনেও করা যেতে পারে। কোটা থাকলেও হজ এজেন্সির কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানান হাব সভাপতি।
বাংলাদেশে ১২৫০ টি হজ এজেন্সি রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাভেল এজেন্টরাও তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে লেনদেন করে। তাদের হজযাত্রী কমে গেলেও ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য খরচ আগের মতোই রয়েছে। তিনটি নির্ধারিত এয়ারলাইন্সের জন্য টিকিট বিক্রিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে হজ ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। কিছু এজেন্সি ইতিমধ্যে হজকেন্দ্রিক ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে।
২০১৮-১৯ সালের তুলনায় হজের ব্যয় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এটা সব দেশেই আছে। সেই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে। একজনের হজের খরচে ছয়জন ওমরাহ করতে পারবেন। ফলে ওমরাহর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এখন প্রতি বছর পাঁচ লাখ মুসলমান ওমরাহ করতে যান।
তিনি বলেন, সুদ কমে যাওয়ায় আমরা ট্রাভেল এজেন্টরাও লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি। টিকিট বিক্রি অর্ধেকেরও কম কমেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, “এখন সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে, ১৭ শতাংশ ভ্যাট যোগ করা হয়েছে। সেখানে অনেক বাড়ি ভাঙার কারণে বাড়িভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। খরচ বেড়েছে।তবুও গত বছরের তুলনায় এক লাখ টাকা কমিয়েছি।কমানো সম্ভব নয়।
তাঁর মতে, এটি একটি ব্যক্তিগত ইবাদত। তারপরও, আমরা নানাভাবে উৎসাহিত হই। কিন্তু না গেলে কিছু করার নেই। তবে যারা ওমরাহ করতে যাচ্ছেন তাদের ওমরার খরচ কম। তাই দিন দিন বাড়ছে ওমরাহযাত্রী।
3 Comments