October 31, 2024
মায়ানমারে বিদ্রোহ-সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

মায়ানমারে বিদ্রোহ-সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

মায়ানমারে বিদ্রোহ-সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

মায়ানমারে বিদ্রোহ-সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নিরাপত্তাজনিত কারণে  সীমান্ত ঘেঁষা ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তারমধ্যে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২ টি মাদ্রাসা।করেছে প্রশাসন। গতকাল বান্দরবান জেলা প্রশাসক  বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রি রতন চাকমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘুমধুম ও তুমব্রুর সীমান্তবর্তী ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- বাইশফারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভজবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সূত্রমতে,  জানা যায়  মায়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি, আরএসও বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং মায়ানমার জান্তা সরকারের গোলাবর্ষণের ফলে আশেপাশের মানুষ এবং স্কুল ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কারণ ওপাশ থেকে ছোড়া কামানের গোলাগুলি সীমান্তের ভিতরে চলে আসে। সীমান্ত মায়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মায়ানমার দিক থেকে তিন দিনে অর্ধশতাধিক মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর সীমান্ত পিলারে কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এলাকা। শেল আর এই কম্পনে আতঙ্কিত সীমান্তবাসী। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, গতকাল সকালেও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে রয়েছে সীমান্তে বসবাসকারী বাসিন্দারা। ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, আমরা যারা এখানে বাস করছি ভয়ে আছি, আমরা জানি না কখন কী হবে। স্থানীয় লোকজনকে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে তীব্র  লড়াই চলছে। থ্রি ব্রাদার্স, দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির একটি জোট, গত বছরের অক্টোবর থেকে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে জান্তা বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। তাদের অভিযানের মুখে কাবু জান্তার সৈন্যরা। একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা সক্রিয় রয়েছে। শান, রাখাইনসহ অনেক প্রদেশের শহর এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। বিদ্রোহীদের দাবি, গত তিন মাসে তারা ৩৩টি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি মঙ্গলবার মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি জান্তা যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এটি দ্বিতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনা। অন্যদিকে রাখাইন সেনাবাহিনীর দাবি, শত শত জান্তা সেনা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। একটি সেনা ঘাঁটিও ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

একের পর এক বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে হেরে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা দুই দিনে একটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর, ফাইটার প্লেন এবং শত শত সৈন্য হারিয়েছে। এই খবরের পাশাপাশি, অনলাইন সংবাদমাধ্যম  ইরাবদি বলছে যে গত দুই দিনে, পিপলস ডিফেন্স ফোর্স এবং কিছু জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশে শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ তীব্র করেছে। এটি শান, চিন, রাখাইন রাজ্য এবং সাগাইং অঞ্চলে ঘটেছে। কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সামরিক যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। কেআইএ তথ্য কর্মকর্তা কর্নেল নাও বু নিশ্চিত করেছেন যে কেআইএ সৈন্যরা মঙ্গলবার শান রাজ্যের নামপাকা গ্রামে ঘটনাটি চালিয়েছে। কেআইএ এবং তার সহযোগীরা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কুটকাইয়ের একটি মূল ঘাঁটি দখলের চেষ্টা করছে। ৩ জানুয়ারি, কেআইএ কাচিনের ওয়াইংমাও শহরে একটি ফ্রন্টলাইন ঘাঁটিতে যাওয়ার পথে একটি সামরিক পরিবহন হেলিকপ্টারকে গুলি করে। এতে অন্তত ৬ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।

আরাকান আর্মি রাখাইনের কাউকতাও শহর দখল করে। মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৩৯ এর একটি সম্পূর্ণ ইউনিট আরাকান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

তাদের মধ্যে ওই ইউনিটের সদস্যদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আরাকান আর্মি লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন এবং আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন ৩৭৭কে টার্গেট করে। রবিবার আরাকান আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন দখল করেছে। তারা ব্যাটালিয়নকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়। কিন্তু সামরিক জান্তার সমর্থকরা লড়াই চালিয়ে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার তাদের ঘাঁটি থেকে সাদা পতাকা ওড়ানো হয়। এর অর্থ আত্মসমর্পণ। ফলস্বরূপ পরাজয়ের পর, সোমবার মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অন্তত ১০০ সৈন্য আরাকান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের মধ্যে একজন কৌশলগত কমান্ডারও রয়েছেন।

আরাকান আর্মি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের একটি সদস্য দল। ব্রাদারহুড মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশে শাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তাদের আক্রমণে ওই প্রদেশের সেনাবাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে অভিযান সম্প্রসারিত করেছে। এরপর থেকে তারা অন্তত ১৫০টি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। প্রতিবেশী চিন প্রদেশের পালেতোয়া শহর দখল করে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X