November 21, 2024
খেজুর রসঃ এক অনন্য স্বাদের শক্তিশালী পানীয়

খেজুর রসঃ এক অনন্য স্বাদের শক্তিশালী পানীয়

খেজুর রসঃ এক অনন্য স্বাদের শক্তিশালী পানীয়

খেজুর রসঃ এক অনন্য স্বাদের শক্তিশালী পানীয়

খেজুরের রস খুবই সুস্বাদু একটি পানীয়। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে এক মগ রস থেকে চুমুক দেওয়ার স্বাদ অতুলনীয়। বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে খেজুরের রস। গ্রামীণ জীবনের নিত্যদিনের এই উৎসব শীতকাল জুড়ে চলে আসছে বহুদিন ধরে।শীতকালে শহর থেকে মানুষ খেজুরের রস পান করতে গ্রামে ছুটে যায়। খেজুরের রসের বিশেষত্ব হল এটি ঠান্ডা হওয়ায় এটি মিষ্টি।

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। প্রতি বছর ঋতু চক্রে আসে শীত । এই মৌসুমে খেজুর গাছ মানুষের ক্ষুধা মেটায়। খেজুর গাছ গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। বলা হয়, ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’। তাল গাছকে মধু গাছ বলা হয়।

শীতের আগমন শুরু হলেই মধু গাছের ডালপালা পরিষ্কার করার পর পর্যায়ক্রমে গাছ কেটে ফেলেন বাগান মালিকরা। ধারালো দা হাতে মোটা দড়ি কোমরে বেঁধে পাখির মতো গাছি ঝোলেন গাছে। এরপর গাছ কেটে তাতে মাটির ভাড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে বসানো হয় কঞ্চির নল। যা দিয়ে খেজুর গাছের মিষ্টি রস ঝুলে থাকা মাটির পাত্রে পড়ে।

খেজুরের রস বা খেজুরের রস হল খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস। খেজুরের রস সাধারণত মাটির বর্তনে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আজকাল অনেক ক্ষেত্রে মাটির পরিবর্তে প্লাস্টিক বর্তনে বা পাত্রে সংগ্রহ করা হয়। খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পিঠা ও খেজুরের রসের গুড় দিয়ে  এবং গাঢ় রস দিয়ে মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি তৈরি করা হয়। খেজুরের রস পান করলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়। এতে উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক চিনি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে।

সাধারণত খেজুরের চারা চার বছর বয়সের পর শুরু হয় যখন গাছে ১২-১৫টি পাতা থাকে। খেজুরের চিনির পরিমাণ, গুণমান ইত্যাদি মাটি, জলবায়ু ও খেজুরের প্রকারের উপর নির্ভর করে। পুরুষ গাছপালা স্ত্রী গাছের চেয়ে বেশি রস উৎপাদন করে এবং রসও তুলনামূলকভাবে মিষ্টি।

আশ্বিনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত (অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি) রস সংগ্রহ করা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ এবং কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল পর্যাপ্ত রসের জন্য সহায়ক। এ সময় প্রাপ্ত রসের স্বাদও ভালো হয়। পৌষ-মাঘ মাসে (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি) সর্বাধিক পরিমাণে রস পাওয়া যায়। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে রসের পরিমাণ ও গুণমান হ্রাস পায়।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে খেজুর গাছের উপরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ পদ্ধতিতে ছোট-বড় কলসিতে রস সংগ্রহ করা হয়।

শীতের মৌসুমে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে গাছের মাথার সাদা অংশ পরিষ্কার করে হাড়িগুলো গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সকালে সেই হাড়ি নামিয়ে আনা হয়। রস দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে সাধারণত বিক্রি করা হয়।

খেজুরের রসের উপকারিতাঃ

খেজুরের রসের উপকারিতা জানলে এখন থেকে প্রতি শীতে প্রতিদিন নিয়মিত এক গ্লাস জুস পান করবেন। তো চলুন শুরু করা যাক খেজুরের রসের উপকারিতার দিক থেকে:-

  • প্রকৃতির এনার্জি ড্রিংকস খেজুরের রস
  • খেজুরের রস রক্তস্বল্পতা দূর করে
  • পেশী মজবুত করে
  • ক্লান্তি দূর করে
  • হাড় মজবুত করে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • ভিটামিনের অভাব দূর করে
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • হজমশক্তি বাড়ায়
খেজুরের রসের কিছু অসুবিধাঃ
  • ডায়াবেটিস রোগীদের খেজুরের রস খাওয়া উচিত নয়।
  • খেজুরের রস পান করলে কিডনি রোগীদের সমস্যা হতে পারে। রসে থাকা পটাশিয়াম কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • রক্তের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জুস খাওয়া উচিত নয়।
  • হাঁপানি বা হাঁপানি রোগীদের ঠান্ডা রস পান করা উচিত নয় কারণ এটি শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কখন খাবেনঃ

খেজুরের রস সকালে খাওয়া ভালো। সারারাত রস জমে থাকার পর সকালে এই জুস পান করলে উপকার পাওয়া যায় বেশি ।

কতটুকু পরিমাণ রস পান করবেনঃ

একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস খেজুর-জুস পান করতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেলে কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু এটি একটি এনার্জি ড্রিংক, তাই শরীরে শক্তি জোগাতে পরিমাণমতো রস খাওয়াই ভালো।

কিভাবে খাবেনঃ

রাতে বা সকালে জুস খেতে পারেন অথবা জুস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন। তবে খোলা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় বলে এতে জীবাণু থাকতে পারে। এটা অস্বাস্থ্যকর। এ কারণে হালকা আঁচে বা ফুটিয়ে রস সেবন করা ভালো। এ ছাড়া জুস জ্বালিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে পারেন।

খেজুরের রস সংগ্রহের আগে কিছু সতর্কতাঃ

রসের পাত্রটি জাল বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাদুড় পাত্রের ভিতর মুখ ঢুকিয়ে রস খায়। এ থেকে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই খেজুরের রস সংগ্রহে নিরাপদ থাকা উচিত ।

এখন শীতকাল। এ সময় গাছিরা খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত। তারা খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে খেজুরের গুড় তৈরি করে এবং খেজুরের রসও বিক্রি করে।

গাছিরা বিকেলে খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ি বসিয়ে আসে। মাটির হাঁড়ি সর্বত্রই খোলা। রাতে বাদুড় এসে সেই খোলা খেজুরের রসের পাত্রে বসে রস পান করে। তারপর বাদুড়ের মুখ থেকে লালা মিশে যায় রসের সঙ্গে। আর এভাবেই নিপাহ ভাইরাস বাদুড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে আক্রমণ করে। নিপাহ ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথমেই জ্বর আসে। খিঁচুনি, পরে বড় বিপদও  ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দূর করতে খাবারগুলো খেতে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X