দেশে ১কোটি ৩১লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জনসচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। অর্থাৎ ভালোভাবে জানা থাকলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এদিকে দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়ছে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। দেশের মানুষ তীব্র ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবিষ্যতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) এ তথ্য জানায়। বিইএস ‘আপনার ডায়াবেটিস ঝুঁকি এবং কর্ম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বিইএসের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শাহজাদা সেলিম বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের হার দিন দিন বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ নিয়মিত ব্যায়াম না করা এবং খাদ্যাভ্যাস। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। শহরগুলিতে, পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গা (ওয়াকওয়ে) দিতে হবে শুধুমাত্র মাঠ থাকলেই হবেনা । স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরাও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এর সচেতনতা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের একটি ডায়াবেটিস প্রবণ দেশ এবং প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ। বর্তমানে শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। তাই গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
তারা আরও বলেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অন্যদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিক রোগীর যত্নের সকল স্তরে সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা এবং সহযোগিতামূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে তারা বলেন, দেশের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ রোগী জানেন না যে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কারণ বেশিরভাগ রোগীই নিয়মিত ডায়াবেটিস চেকআপ করান না। তাই প্রত্যেকের ডায়াবেটিস আছে কি না তা বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা জরুরি। খাবারে চিনির পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি মাংস ও শাকসবজি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ফাস্টফুডসহ ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলা, নিয়মিত হাঁটা, খেলাধুলা করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেড় কোটিতে পৌঁছতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিইএস-এর প্রধান উদ্যোক্তা অধ্যাপক ডা. মোঃ ফারুক পাঠান, সভাপতি (নির্বাচিত) অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি ডা. ফারিয়া আফসানা, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আহসানুল হক আমিন, দপ্তর সম্পাদক ড. মারুফা মোস্তারীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯১সালে, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF) ১৪ নভেম্বরকে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। ২০০৭ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার ১৪ নভেম্বরকে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য জাতিসংঘের কাছে প্রস্তাব দেয়। ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ -এ এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘে গৃহীত হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির মতে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আগামী চার বছরে এই সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে হিসেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে একটি ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে, প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিক রোগীর মৃত্যু হয় এবং নতুন দুইজন ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত হয়!
আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস, ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক প্রভাবের সর্বশেষ পরিসংখ্যান এবং ডেটা দেখায় যে ২০২১ সালে ৫৩ কোটি ৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪ কোটি ৩ লাখ এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে ৭৮ কোটি ৩ লাখে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ জানেন না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত। ১২ লাখেরও বেশি শিশু ও কিশোর (০-১৯ বছর) টাইপ-১ রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০২১ সালে বিশ্বের ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ২০২১ সালে ডায়াবেটিস ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করে, যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৯ শতাংশ।
আরও পড়তে
ডেঙ্গু পরিস্থিতি রাজনৈতিক ব্যস্ততার ফাঁদে অবহেলিতঃ প্রকোপ মৃত্যু ও আক্রান্ত চলছেই