March 4, 2025
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ যে আমলগুলো জীবন বদলে দিবে

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ যে আমলগুলো জীবন বদলে দিবে

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ যে আমলগুলো জীবন বদলে দিবে

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ যে আমলগুলো জীবন বদলে দিবে

রহমত, ক্ষমা আর নাজাতের অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের দুয়ারে উপস্থিত হয় রমজান মাস। কুরআন অবতরণের রমজান মাস পাওয়া হলো মানব জীবনের অনন্য সৌভাগ্য। রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিশেষ ফজিলতের মাস। এই মাসে আল্লাহ প্রতিটি কাজের জন্য ৭০ গুণ বেশি সওয়াব দান করেন। এজন্যই আমাদের এই বিশেষ মাসে আরও বেশি করে আমল করতে হবে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যা সম্পাদন করে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারি।

পিতামাতার সেবা ও তাদের জন্য দোয়া করা

এটি রমজান মাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল এবং এটি প্রতিটি সন্তানের উপর ফরজ, তাই রমজান মাসে তাদের সেবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সীমাহীন সুযোগ রয়েছে। যদি তাদের কেউ মারা যান, তাহলে নিয়মিত তাদের জন্য দোয়া করুন এবং নৈতিকভাবে নিজেকে সংশোধন করে তাদেরকে পরকালের কষ্ট থেকে মুক্তি দিন।

আল্লাহ বলেন,

 وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا . وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا .

‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। আর মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং বলো, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’।

অধীনস্থদের সাথে সৌজন্য ব্যবহারের উন্নতি করতে শেখা

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ বানিয়েছেন। অতএব, যার কোন ভাই আছে যাকে আল্লাহ নিজের অধীনস্থ বানিয়েছেন, সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে খায় এবং যা সে পরে তাই তাকে পরায়। এবং তার উপর তার সামর্থ্যের বাইরে কোন কাজ চাপিয়ে না দেয়। যদি তার উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপানো হয়, তাহলে তাকে যেন সাহায্য করে ।” (বুখারী ও মুসলিম)

সবগুলো রোজা পালন

রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। সকল আমলের আগে রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন -‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।’

সুরা আল-বাকারাহ: ১৮৫

সময়মতো নামাজ আদায় করা

এই পবিত্র মাসে, রোজার পাশাপাশি, আপনার উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা। আর এই রমজান মাসে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে আপনি যত বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন, ততই ভালো। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই, নির্দিষ্ট সময়ে মুমিনদের উপর নামাজ ফরজ।’

সূরা আন-নিসা: ১০৩

কুরআন সঠিকভাবে শেখা এবং বেশি বেশি তেলাওয়াত করা

মহান গ্রন্থ আল-কুরআন পবিত্র রমজান মাসে নাজিল হয়েছে। অতএব, এই মাসের একটি আমল হল কুরআন বেশি বেশি শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’

সূরা আল-আলাক: ১

কুরআন মুখস্থ করা বা হিফজ করা

কুরআন মুখস্থ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মহান আল্লাহ নিজেই কুরআন মুখস্থ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি মূলত তাঁর বান্দাদের কুরআন মুখস্থ করার মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালন করেন। কুরআনে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই এর রক্ষক।’

সূরা আল-হিজর: ৯

কুরআন বোঝা এবং তার উপর আমল করা

কুরআনের এই মাসে কুরআন বোঝা এবং তার উপর আমল করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরআন অনুসারে  জীবন গড়ে তোলা। কুরআন এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে: ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।’

সূরা আল-আ’রাফ: ৩

সেহরি খাওয়া

সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং এটি রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: ‘সেহরি খাও। কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।’

(সহিহ মুসলিম)

ইফতার করা ও ইফতার করানো

রমজান মাসে ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা একটি মহান পুণ্য। একই সাথে,

রোজাদারদের ইফতার করানো  একটি মহান সওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজন রোজাদারকে ইফতার করতে সাহায্য করার চেষ্টা করা উচিত। হাদিসে বলা হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার রোজার সমান সওয়াব পাবে, কিন্তু তাদের সওয়াব থেকে কোন হ্রাস পাবে না।’

সুনান ইবনে মাজাহ

সৎকাজে বেশি অংশগ্রহণ করা

এই মাসে একটি সৎকাজ অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে উত্তম। এজন্য যতটা সম্ভব সৎকাজ করা উচিত।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “এই মাসের প্রতি রাতে একজন আহবানকারী ডেকে বলেন, ‘হে কল্যাণকামী, এগিয়ে যাও! হে মন্দের অনুসারী, ভুল পথ অনুসরণ করা বন্ধ করো। তুমি কি জানো এই মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ কত লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন?’ (সুনান তিরমিযী)

নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়

তাহাজ্জুদের নামাজের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ, অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ।’

(সহীহ মুসলিম)

বেশি বেশি দান সদকা করা

পবিত্র রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: : ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তাঁর এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ [সহীহ আল-বুখারী]

ই’তিকাফ

রমজান মাসের অন্যতম ইবাদত হলো ই’তিকাফ। ই’তিকাফের অর্থ অবস্থান। যেকোনো সলিটারি প্লেস এ অবস্থান করাই ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য। তবে সাধারণত পুরুষরা মসজিদে বিশেষ করে রমজান মাসের শেষ দশ দিন পুরুষের  জন্য মসজিদ হওয়া প্রয়োজ। ন আর মহিলাদের জন্য তাদের নিজের ঘরের খাস কামরা হতে হয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি রমজানের শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তু তাঁর জীবনের শেষ রমজানে তিনি বিশ দিন ই’তিকাফ করতেন। দশ দিন ই’তিকাফ করা সুন্নত।”

(সহীহ আল-বুখারী: ২০৪৪)

দ্বীনের দাওয়াতের কাজে অংশগ্রহণ

রমজান মাস হলো নেক কাজের মাস। আর দ্বীনের দাওয়াত  সবার উপর বাধ্যতামূলক ফরজ নেক কাজ। দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে মহান আল্লাহর দিকে ডাকা হয়। পথভ্রষ্ট বান্দা মহান স্রষ্টার দিকে ফিরে আসে। কুরআন ঘোষণা করে: ‘তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎকর্ম করে এবং বলে, ‘আমি মুসলিমদের  একজন।’

সূরা হা-মীম আস-সাজদা: ৩৩

শেষ দশকের রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা

পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি বরকতময় রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। কুরআনে বলা হয়েছে: ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’

সূরা কদর: ৪

এই মহিমান্বিত রাতটি পাওয়া একটি বিরাট আশীর্বাদ। একটি হাদিসে আয়েশা (রাঃ) বলেছেন: ‘আল্লাহর রাসূল (সাঃ) রমজানের শেষ দশ দিনে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতেন।’

(সহীহ মুসলিম: ১১৭৫)

তাকওয়া অর্জন

তাকওয়া এমন একটি গুণ যা আল্লাহর ভয়ে একজন ব্যক্তিকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণ অর্জনের জন্য একটি বিশেষ মৌসুম। কুরআনে বলা হয়েছে: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’

সূরা আল-বাকারা: ১৮৩

ফিতরা প্রদান

রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণের জন্য এই মাসে ফিতরা প্রদান করা ফরজ। ইবনে উমর (রা.) বলেছেন: আল্লাহর রাসূল (সা.) ঈদের নামাজের আগে ফিতরা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

(সহীহ আল-বুখারী)

আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন

আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এগুলো সংরক্ষণ করাও একটি ইবাদত। এ প্রসঙ্গে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন:

فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ . أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ

“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন”।

সূরা মুহাম্মাদ: ২২-২৩

জীবন গড়ার এই মাসে আমাদের জীবনকে সাজিয়ে নেয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

আরও পড়তে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X