পরিবেশবান্ধব উপায়েই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, ঢাবি অধ্যাপকের গবেষণা
সাধারণ এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হবে না। তবে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে।
- এডিস একটি প্রজাতির মশা। যেহেতু এই প্রজাতির মশাই ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে, তাই এর কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে।
- এডিস মশা মাঝারি আকারের মশা। এগুলো খালি চোখে দেখা যায়। এটিকে অন্যান্য মশা থেকে সহজেই আলাদা করা যায় কারণ এর শরীরে সাদা ডোরা থাকে। এডিস মশার মাথার উপরে দুটি অ্যান্টেনা থাকে। অ্যান্টেনা লোমযুক্ত। পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার তুলনায় লোমশ হতে দেখা যায়। তারা মাটির সমান্তরালে বসে।
- এডিস মশা দিনে কামড়ায়। এই মশাগুলি সকালে বা সূর্যোদয়ের ৩-৪ ঘন্টা পরে এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। রাতে তারা বিশ্রাম নেয়। তখন তারা কামড়ায় না। তবে অনেকের মতে, এডিস মশা দিনের বেলায় নয়, উজ্জ্বল আলোতে সক্রিয় থাকে। অতএব, ঘরে আলো থাকলে তারা রাতে কামড়াতে পারে।
- অনাবৃত শরীরের যে কোনো জায়গায় কামড় দিতে পারে।
- ডেঙ্গু রোগীর রক্ত পান করা একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দিলে ডেঙ্গুর জীবাণু তার শরীরে প্রবেশের সুযোগ থাকে। তাই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
পরিবেশবান্ধব উপায়ে এডিস মশার লার্ভা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে মেরে ফেলা যায়। এ পদ্ধতিতে কোনো রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হবে না। এই পদ্ধতিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাকিলা নার্গিস খানের গবেষণার ফলাফল।
ডাঃ শাকিলা নার্গিস খান রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে জীবাণু থেকে উৎপন্ন টক্সিন ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে গবেষণা পরিচালনা করেন। উৎপন্ন এই টক্সিন ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে এডিস মশার লার্ভা মেরে ফেলতে সক্ষম।এটি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই গবেষক।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোমোজোম গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনটি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.নিয়াজ আহমেদ খান।
এই গবেষণা ছাড়াও সেমিনারে আরও দুটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলঃ
১. ডাঃ কিশওয়ার জাহান সিঁথি জিংক-ফর্টিফাইড ধানের জাতের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই গবেষণা ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২. আবিরা খান অটোইমিউন রোগের জেনেটিক অ্যাক্টিভেশন নিয়ে গবেষণা করেন। এই গবেষণাটি হাশিমোটোর থাইরয়েডাইটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন গবেষক।
উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান গবেষকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, পাঠদানের পাশাপাশি মৌলিক গবেষণা কাজ পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমিত বাজেটের মধ্যেও আমাদের শিক্ষকরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এই কাজটি করে যাচ্ছেন। সময়োপযোগী গবেষণা কাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে এক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকে সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে তিনি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী তাদের গবেষণাকর্ম যথাযথভাবে উপস্থাপন করার আহ্বান জানান।
ক্রোমোজোম রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. আখতার হোসেন খান এবং বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো: এনামুল হক বক্তব্য রাখেন।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. শাকিলা নার্গিস খান, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কিশওয়ার জাহান সিঁথি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবিরা খান তাদের নিজ নিজ গবেষণা কাজের ফলাফল তুলে ধরেন। সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।