December 12, 2024
ছানার পায়েশ, সুস্বাদু মিষ্টান্ন, জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের এই পায়েশ

ছানার পায়েশ, সুস্বাদু মিষ্টান্ন, জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের এই পায়েশ

ছানার পায়েশ, সুস্বাদু মিষ্টান্ন, জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের এই পায়েশ

ছানার পায়েশ, সুস্বাদু মিষ্টান্ন, জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের এই পায়েশ

শেরপুর সফরে গেলে সেখান থেকে ঐতিহ্যবাহী ভৌগলিক নির্দেশক জিআই নির্দেশক ছানার পায়েশ গলাধঃকরণ করে আসতে পারেন আর সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারেন এবং এটা খেলে সহজে ভুলতে পারবেনা আপনার জিহ্বা। সেটা নিয়েই আজকের কিঞ্চিৎ আলোকপাত।

শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মিষ্টি, ছানার পায়েশ, একটি ভৌগলিক নির্দেশ বা জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদে চানার পায়েসকে ৪৩তম জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গত বছর জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন কমিটির সভায় ছানার পায়েশকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে শেরপুর জেলার স্থানীয় সুগন্ধি চাল ও তুলসী মালাসহ দুটি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ আমলে জেলার ঘোষপট্টিতে প্রথম ছানার পায়েশ তৈরি হয়। সে সময় বাড়িওয়ালারা বিশেষ পদ্ধতিতে ঘোষপট্টিতে তৈরি ছানার পায়েস কলকাতায় নিয়ে যেতেন। এর বাইরে আত্মীয়-স্বজন বা অন্য বাড়িওয়ালাদের কাছে উপহার হিসেবে এসব ছানার পাঠাতেন তারা।

বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা এবং অতিথি অভ্যর্থনা সহ ছানার পায়েশ সর্বত্র বিখ্যাত। একসময় হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হলেও এখন জেলার অন্তত ৫০টি দোকান ছানার পায়েশ তৈরি করে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২০০-৪০০ কেজি ছানার পায়েশ বিক্রি হয়।

এই বিখ্যাত ছানার পায়েস দুধ, চিনি, ময়দা এবং এলাচ দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রথমে, ক্ষীর ঘন করার জন্য উচ্চ তাপে দুধ সিদ্ধ করা হয়। তারপর, দুধ থেকে চান্নার আলাদা করে কেটে তার সাথে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করা হয়। এই বলগুলিকে চিনি-মিশ্রিত সিরায় ভিজিয়ে পূর্বে প্রস্তুত করা ক্ষিরে রেখে কম আঁচে সিদ্ধ করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু চানার পায়েশ।

কারিগরদের মতে, এক কেজি চানার পায়েশতৈরি করতে দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, অল্প পরিমাণে ময়দা এবং ১০-১৫ গ্রাম এলাচের প্রয়োজন হয়। পৌরসভার নিউমার্কেটের ‘অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারে’র কালীপদ ঘোষ ৩৫ বছর ধরে মিষ্টি তৈরি করছেন।

তিনি বলেন, এখানে আমরা খাঁটি দুধ দিয়ে ছানার পায়েশ তৈরি করি। তাই স্বাদে একটু ভিন্নতা, চাহিদাও ব্যাপক। এক কেজি ছানার পায়েশ তৈরি করতে দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, অল্প পরিমাণ ময়দা এবং ১০-১৫ গ্রাম এলাচ প্রয়োজন।

অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক জানান, শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জেলার বাইরে থেকে কোনো মুসাফির শেরপুরে এলে ফেরার সময় ছানার পায়েশ সঙ্গে নিয়ে যায়। ছানার পায়েশ জিআই স্বীকৃতির সাথে সাথে এর মূল্য আরও বাড়বে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক।

বিক্রেতাদের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতি কেজি চান্নার বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েশ প্রচুর অর্ডার পাওয়া যায়। জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায়ও এই মিষ্টি পাওয়া যায়।

শেরপুরের হোটেল নুর রহমান, চারু সুইটস, অনুরাধা, দুর্গাচরণ মিষ্টির দোকান, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টির দোকান, নন্দ গোপাল, মা ভাবতারা মিষ্টির দোকান, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয় এবং বল্লব মিষ্টির দোকানে চানার পায়েস পাওয়া যাচ্ছে। শহর জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানেও বিক্রি হয় ছানার পায়েশ। শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, শেরপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে চানার পায়েসের সুনাম রয়েছে। এই মিষ্টি দেশে-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। ছানার পায়েশ তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে অনেকেই জড়িত। জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

আরো পড়তে

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X