October 6, 2024
বিমানবন্দর-বিহীন দেশগুলো

বিমানবন্দর-বিহীন দেশগুলো

বিমানবন্দর-বিহীন দেশগুলো

বিমানবন্দর-বিহীন দেশগুলো

আশ্চর্যজনক হলেও পৃথিবীর কয়েকটি দেশে বিমানবন্দর নেই। বিমান এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছানোর সবচেয়ে নিরাপদ এবং দ্রুততম উপায়। আজকাল এই অপূর্ব বাহনে চেপে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টায় দূর দেশে পৌঁছানো যায়।এখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বিমানবন্দর রয়েছে। কিন্তুনা।  কারণ পৃথিবীতে এখনো এমন দেশ আছে যেখানে কোনো বিমানবন্দর নেই।আবার এই দেশগুলো পর্যটনের দিক থেকে বেশ জনপ্রিয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব দেশ যেখানে বেড়াতে গেলেও বিমানবন্দরে নামতে পারবেন না-

কিন্তু এই ২০২৪ সালেও, যদি আপনাকে শুনতে হয় যে বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে কোনও বিমানবন্দর নেই, তবে আপনি অবশ্যই অবাক হবেন। একটি-দুটি নয়, বিমানবন্দরবিহীন দেশের সংখ্যা ৫ টি। যদি প্রশ্ন করেন বিমানবন্দর নেই কেন, তাহলে বলতে হবে এই দেশগুলো আয়তনে খুবই ছোট। কোনো কোনোটিতে জায়গা থাকলেও পাহাড়ি ভূ-সংস্থানের কারণে তাদের সীমানার মধ্যে বিমানবন্দর স্থাপন করা কঠিন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব দেশের সাথে যাদের বিমানবন্দর নেই।বিমানবন্দরগুলি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রগতির সবচেয়ে বড় প্রতীক। কিন্তু বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে যেখানে বিমানবন্দর নেই! দেশগুলি প্রমাণ করছে যে বিমানবন্দরগুলি সর্বদা প্রয়োজনীয় নয়।

এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বিমানবন্দর-বিহীন ৫ টি দেশের সবগুলো দেশই ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত

লিচেনস্টাইন:

জাতিসংঘের মতে, লিচেনস্টাইনের জনসংখ্যা প্রায় ৪০,০০০। রাটিকন পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত ছোট পাহাড় এবং ২,৫৯৯ মিটার উচ্চ শৃঙ্গ গ্রসপিটজের জন্য এটির আলাদা সুনাম রয়েছে। ১৬০ বর্গকিলোমিটারের এই ছোট্ট দেশটির মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশই  দখল করে আছে ছোট ছোট পাহাড়। একটি ছোট দেশ, তারপর আবার পাহাড়ি অঞ্চল,

পশ্চিমে রাইন নদী, পশ্চিমে অস্ট্রিয়ার পাহাড়—সব মিলিয়ে লিচেনস্টাইনের কোনো বিমানবন্দর ছিল না। তবে দক্ষিণ লিচেনস্টাইনের ব্লেইজারস গ্রামে একটি হেলিপোর্ট আছে। আর কাছেই আছে ছোট্ট দুটি বিমানবন্দর। ২টি হলো সুইজারল্যান্ডের স্যান্ট গ্যালেন-অ্যাল্টেনরাইন এয়ারপোর্ট ও জার্মানির ফ্রেডরিচশ্যাফেন এয়ারপোর্ট। সহজে প্রবেশযোগ্য প্রধান বিমানবন্দর জুরিখ বিমানবন্দর ১২০ কিমি দূরে। এটি লিচেনস্টাইন থেকে গাড়ি বা বাসে পৌঁছানো যায়। কিন্তু যদি এটি আকারে ছোট হয় তবে আল্পস পর্বতের অংশটি দেশের সীমানার মধ্যে আছে বলে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এর আলাদা নাম রয়েছে।

মোনাকো:

লিচেনস্টাইনের মতো, মোনাকো এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। এর আয়তন শুনলে অবাক হবেন, মাত্র দুই বর্গকিলোমিটার। যা পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ।   অন্য কথায়, স্বাধীন দেশগুলির মধ্যে শুধুমাত্র ভ্যাটিকান সিটি তার চেয়ে ছোট। এবং তাই, মোনাকো একটি স্বল্প জনসংখ্যার দেশ হলেও, এটি একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত মোনাকো ফ্রান্সের তিন দিক দিয়ে ঘেরা। ইতালীয় সীমান্ত খুব বেশি দূরে নয়, মাত্র ১০ মাইল। ২.১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটা ছোট হলেই বা কী, প্রায় পুরোটাই পাহাড়ি, এই মোনাকো পর্যটকদের কাছে প্রিয় গন্তব্য। ছোট আকারের এবং পাহাড়ি ভূখণ্ডের কারণে দেশে কোনো বিমানবন্দর নেই। বিমানবন্দর না থাকলেও মোনাকো পৌঁছানোর জন্য একটি ক্যাব ভাড়া করে বা নৌকায় করে ফ্রান্সের নিস কোট ডি জিও বিমানবন্দরে নামতে পারেন।

ভ্যাটিকান সিটি:

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ অনুসারে, ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা প্রায় ৫০০ এরও কম। ভ্যাটিকান সিটি জনসংখ্যা এবং আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট স্বীকৃত রাষ্ট্র। ইতালির রোমের মধ্যে অবস্থিত দেশটির আয়তন ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার।

এখানে প্লেন অবতরণ করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। নদী বা সমুদ্রও নেই। এমনকি অন্য কোনো পরিবহন ব্যবস্থাও নেই। আপনি পায়ে হেঁটে ছোট দেশটি ঘুরে দেখতে পারেন। ভ্যাটিকান সিটির ভ্যাটিকান প্যালেসে পোপের বাসভবন। যাইহোক, স্বাধীন দেশটি ইতালির রোমের ভিতরে  এটিকে দেশের মধ্যে অন্য স্বাধীন দেশ বলতে পারেন। তাই ভ্যাটিকানের বাসিন্দাদের খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না! রোমের Ciampino এবং Fiumicino বিমানবন্দর কাছাকাছি। ভ্যাটিকান সিটি থেকে ট্রেনে আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছা যায়।

উল্লেখ্য, ভ্যাটিকান সিটি যখন ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন ইতালিতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সিস্টিন চ্যাপেল, সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার, এবং সেন্ট পিটার ব্যাসিলিকা হল পোপের বাসস্থান এবং এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান ছাড়াও দর্শনীয় স্থান।

সান মারিনো:

ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত এই ছোট দেশটির জনসংখ্যা জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ৩৩ হাজার ৬৪৪ জন। আয়তন ৬১ বর্গ কিলোমিটার। পুরো দেশকে ঘিরে রেখেছে ইতালি। আর সেখানে পানি দিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এই ছোট্ট দেশে বিমানবন্দরের উপযুক্ত জায়গা নেই। তবে পাহাড়-সমভূমির মিশেলে দেশে রাস্তার অভাব নেই। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এসব সড়ক দিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে যানবাহন চলাচল করে।

এখান থেকে ইতালির রিমিনি বিমানবন্দর খুব কাছে। ফ্লোরেন্স, বোলোগনা, ভেনিস এবং পিসা বিমানবন্দরগুলিও সান মারিনো সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয়। দেশটিতে আসা পর্যটকরা এবং বাসিন্দারা প্রায়শই ভ্রমণের জন্য এই বিমানবন্দরগুলি ব্যবহার করে। দেশটি,মধ্যযুগের বিভিন্ন স্থাপত্যে মাস্টারপিসের জন্য বিখ্যাত।

এন্ডোরা:

এন্ডোরা তালিকার অন্য চারটি দেশের তুলনায় এটি বেশ বড়। ৪৬৮ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে অন্তত একটি বিমানবন্দর থাকতে পারতো । কিন্তু সমস্যা হলো পুরো দেশটাই পাহাড়ী। ফ্রান্স এবং স্পেনের মধ্যে অবস্থিত, অ্যান্ডোরা পিরেনিস পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। প্রায় ৩০০০ মিটার উচ্চতার একটি শিখরও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই এলাকায় উড়ে যাওয়াটা মোটেও সহজ নয়। তাই ইউরোপের এই দেশে কোনো বিমানবন্দর নেই।

তাই এন্ডোরার বাসিন্দাদের চিন্তা করতে হবে না। বার্সেলোনা, লেরিডা বা গিরোনার মতো শহরগুলি অ্যান্ডোরার ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।  একটি বাস বা একটি গাড়ী চেপে এবং সেখানে প্লেন এর দেখা পাওয়া সম্ভব।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X