বিশ্বমঞ্চে নতুন পদচারণা যেমন হলো বাংলাদেশের
প্রায় সকল দেশের প্রধানরা এবং তাদের সফর সঙ্গীরা ড. ইউনুসকে ভালোবেসেই গ্রহণ করেছেন প্রভাত আলোর মত স্পষ্ট। আর ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সারা বিশ্ব থেকে জানানো হয়েছে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। এবং শহীদ ও আহতদের প্রতি বিশ্ব নেতারা জানিয়েছেন সমবেদনা। আর ড. ইউনুসের চিন্তাভাবনার সাথে সকলেই পজেটিভ হয়ে ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনে যোগদান শেষে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও সরকার প্রধান ঢাকায় ফিরছেন। মুহাম্মদ ইউনূস। তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মতে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের যেকোনো সরকার প্রধানের সফরের মধ্যে এই সফর সবচেয়ে সফল।
শফিকুল আলম যথেষ্ট জোরালো যুক্তির ভিত্তিতে এই দাবি করেছেন; কারণ চার দিনের এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আইএমএফ প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টালিনা জর্জিভা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোজিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু, নেপালের প্রধানমন্ত্রী মো. কেপি শর্মা অলি, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে দেখা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সহ ৪০ টি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টার এই সফর আগে থেকেই বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমত, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এবং ছাত্র জনতার সঙ্গে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ এ বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়েছে।
তাছাড়া এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা অনেক দেশের মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েন ছিল। বাংলাদেশের পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ফলে এ সম্মেলনকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রেক্ষাপট হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় এই অধিবেশনটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রধান উপদেষ্টার সফরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই সফর থেকে যা যা অর্জন বা প্রাপ্তি ছিল তার প্রায় সবই পূরণ হয়েছে। জাতিসংঘ অধিবেশনের আগে রোহিঙ্গা, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একাধিক বৈঠক করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে জাতিসংঘের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর মন্ত্রীদের সঙ্গে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন তিনি। পাচারকৃত অর্থ ফেরত দিতে তিনি মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি সাথে জ্বালানি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একটি বৈঠক করেছেন। একই বিষয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাই ডেনের সঙ্গে তিনি বিরল যে বৈঠক করেছেন তা প্রায় পুরোটাই ছিল বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে। পোশাক খাতে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত রপ্তানি শুল্ক কমানো ও জিএসপি সুবিধার দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমেরিকা বিরোধী নীতির কারণে এখন পর্যন্ত এসব দাবি তোলা সম্ভব হয়নি।
নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার বক্তৃতায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ প্রজন্ম তাদের পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ শাসনকে বিদায় জানিয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্রদের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার গঠনের পর ১৫ আগস্ট ড. ইউনূসের এটাই প্রথম বিদেশ সফর।
জাতিসংঘের প্রধান উপদেষ্টার অধিবেশন দেখছিলেন বিশ্ব নেতারা। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক সবাইকে অবাক করেছে। জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকরা বলেছেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বৈঠক একটি আশ্চর্য ঘটনা! আর বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল স্বপ্নের মতো, যেটা সম্ভব করেন একমাত্র নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর ফর মুহাম্মদ ইউনূস।