উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার নীরব ঘাতক:রেহাই পেতে করণীয়
উচ্চ রক্তচাপের অপর নাম হাইপারটেনশন। । হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে উচ্চ রক্তচাপকে হাই ব্লাড প্রেশার বলে। উদ্বেগজনকভাবে, বেশিরভাগ লোকই জানেন না যে, তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিউরের মতো রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কোনো উপসর্গ থাকে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা জানার উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ পরিমাপ করার সময় স্পাইগমোম্যানোমিটার দ্বারা দুটি সংখ্যা রেকর্ড করা হয় অর্থাৎ রক্তচাপ দুটি সংখ্যা দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
১. সিস্টোলিক চাপ: দুটি রিডিংয়ের মধ্যে বড় সংখ্যা বা উচ্চতর মান হল সিস্টোলিক চাপ। হৃৎপিণ্ড থেকে প্রতিটি স্পন্দনের সাথে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ফলে এই চাপ তৈরি হয়।
২. ডায়াস্টোলিক চাপ: দুটি রিডিংয়ের মধ্যে নিম্ন বা নিম্ন সংখ্যাটি ডায়াস্টোলিক চাপ। রক্ত সঞ্চালনের বিরুদ্ধে রক্তনালীগুলির বাধা থেকে এই চাপ তৈরি হয়।
রক্তচাপ মিলিমিটার (পারদের) বা mmHg এ পরিমাপ করা হয়। ধরুন আপনার রক্তচাপ হল ১২০/৮০ mmHg। তাহলে সিস্টোলিক চাপ হবে ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ হবে।
রক্তচাপ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। একজনের জন্য উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ যা অন্যের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে। ৯০/৬০ এবং ১২০/৮০ এর মধ্যে রক্তচাপকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে শারীরিক রোগের ঝুঁকি:
উচ্চ রক্তচাপ শরীরের সুস্থ অবস্থাকে ব্যাহত করে। ফলে হার্ট, মস্তিষ্কসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রক্ত সরবরাহ ঠিক না হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ ও ডিমেনশিয়াও হতে পারে।
আর যা হতে পারে:
- হৃদরোগ বা হার্ট ডিজিজ
- ব্রেন স্ট্রোক
- কথা বলতে না পারা।
- হাঁটতে অসুবিধা।
- স্বাভাবিক কাজকর্মে অসুবিধা।
- এটি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী কী?
- মাথা ও ঘাড় ব্যাথা
- বুকে ব্যথা
- মাথা ঘোরা
- অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- ঝাপসা দৃষ্টি
- অস্থিরতা
রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ:
রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার উপরে উঠার অনেক কারণ রয়েছে। অতএব, এর জন্য কোন নির্দিষ্ট কারণ দায়ী করা যাবে না। তবে কিছু কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায় বা উচ্চ রক্তচাপ হয়। সেই কারণগুলো হল:
- খাবারে অত্যধিক লবণ খাওয়া।
- মদ্যপান।
- ধূমপান
- অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি।
- পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়া।
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না (৬-৮ ঘন্টা)।
- চা, কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ের অত্যধিক গ্রহণ ।
- মা, বাবা, ভাই, বোনের মতো পরিবারের সদস্যদের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা থাকা ।
- পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ না করা।
- বয়স ষাট থেকে পঁয়ষট্টির উপরে।
অন্যান্য কারণ:
কিছু অঙ্গ আক্রান্ত হলে এই রোগও উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। যদি একটি নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়, তাকে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন বলে।
এর মধ্যে কয়েকটি কারণ হল:
- কিডনি রোগ।
- অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার।
- ধমনীর বংশগত রোগ।
- গর্ভাবস্থায় এ্যাকলাম্পসিয়া ও প্রি এ্যাকলাম্পসিয়া হলে।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যথা উপশমের দীর্ঘায়িত ব্যবহার।
- উত্তেজক ঔষধ বেশি পরিমাণে সেবন
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কী করা উচিত?
জীবনধারা পরিবর্তন করে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বংশগত হলে উচ্চ রক্তচাপ কমানো সম্ভব নয়। যাইহোক, এই ধরনের ক্ষেত্রে, নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে এমন সমস্ত উপাদানগুলিকে আরও ফোকাস করা উচিত।
- অতিরিক্ত ওজন হলে কমানো।
- খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
- খাদ্য সতর্কতা: কম চর্বিযুক্ত এবং কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।
- লবণ নিয়ন্ত্রণ: তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের চেয়ে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রতিদিন লবণের পরিমাণ ৫ গ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। বাজারজাত করা বিভিন্ন চিপস, ফাস্টফুড, টকজাতীয় খাবার, বিস্কুটে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ থাকে। তাই এ ধরনের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
- অ্যালকোহল: অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।মদকে চিরতরে ছেড়ে দেওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম: সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা, সম্ভব হলে জগিং, হালকা ব্যায়াম, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।
- ধূমপান করবেন না: ধূমপান অবশ্যই পরিহার করতে হবে। ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, বাকল, ফুল ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে। ধূমপানকে গুডবাই জানানো
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- মানসিক এবং শারীরিক চাপ মোকাবেলা করতে: নিয়মিত বিশ্রাম, সঠিক ঘুম, অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে শরীরকে বিশ্রাম দিন।
- নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত।
একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমাদের এই লেখা সমূহ পাঠকদের জন্য সতর্কতা স্বরূপ এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি কর্তার দয়ায় ভাল থাকার সম্পূরক। তবে অবস্থা বোঝে অবশ্যই কোনো না কোনো বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
আরো পড়তে
1 Comment