November 24, 2024
পানি আগ্রাসনের অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি

পানি আগ্রাসনের অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি

পানি আগ্রাসনের অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি

পানি আগ্রাসনের অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ভারতের পানি দখলের অপরাধের আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। নদীর বাঁধ কেটে ফেনীসহ দেশের ১১টি জেলায় বন্যার প্রেক্ষাপটে তারা এ দাবি তোলেন।শুক্রবার ফেনীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘আমরা ফেনীবাসী’র ব্যানারে  “Strike for water justice” ( পানির ন্যায়বিচারের জন্য ধর্মঘট ) কর্মসূচি থেকে তারা এ দাবি জানান। এতে দেশের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

প্রফেসর ডক্টর আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এই বন্যা শুধু প্রাকৃতিক নয়, এর দায় ভারত কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এ বন্যায় ফেনীসহ ১১টি জেলার মানুষের মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। একই সঙ্গে সব নদীতে বাঁধ অপসারণের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ। ড. আহমদ  বলেন, ভারত একদিনেই বাঁধ কেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে, এই বন্যা তারই উদাহরণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন ৫৪টি নদীতে ভারত ৬৮টি বাঁধ দিয়েছে। ভারতকে প্রত্যেকটি অন্যায়ের হিসাব দিতে হবে। এই পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারত দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি। শেখ মুজিবের শাসনামলে ভারত এই বাঁধ নির্মাণ করতে সক্ষম হয়। ফেনী নদীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। শেখ হাসিনা এদেশে দিল্লির আধিপত্যের ফসল। দেশে উন্নয়ন উন্নয়ন  হাসিনার বুলি ছিল না, মোদির শেখানো বুলি ছিল। শেখ হাসিনা উন্নয়নের নামে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করেছেন।

মিহির বিশ্বাস বলেন, ফেনীর মানুষ যুদ্ধ করে টিকে থাকতে জানে। ভারতের নৌ-আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও ফেনীবাসী হারবে না। ভারতকে পানি নিয়ে বৈষম্যহীন আচরণের আহ্বান জানান তিনি।

হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, এ দেশের বন্যা যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। তিনি পানি দখলের আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি করেন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, “ভারত ‘পরিকল্পিত’ পানি  আক্রমণে লিপ্ত হচ্ছে।” তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। তারা এ দেশকে নতজানু , পরাধীন ও পর্যদুস্ত জাতি হিসেবে দেখতে চায়।

“আমরা মনে করি যে তারা (ভারত) আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে এবং কৃত্রিম বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে ‘দিল্লির গোলাম’ খুনি হাসিনার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে।

পানির ন্যায্য ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করে প্রতিবছর বর্ষাকালে পানিতে ডুবে দেয়  এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকিয়ে শুকিয়ে দে উল্লেখ করে তারা বলেন , ‘এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে অধিকার আদায় করা, এবং বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করাও উচিত।”

শুক্রবার ফেনীর শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘আমরা ফেনীবাসী’র ব্যানারে ‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ সময় ১১ দফা ঘোষণা করা হয়।

দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। এতে সভাপত্বি করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

কর্মসূচি থেকে ‘১১ দফা ফেনী ঘোষণা’ তুলে ধরেন দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শাহাদাত হোসাইন।

দাবিগুলো হলো-

১. আন্তঃসীমান্তীয় সব নদী থেকে ড্যাম/ব্যারেজ বা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তা অপসারণ করতে হবে।

২. এবারের বন্যার জন্য ফেনীর পরশুরামে ভারতের ইচ্ছাকৃত বাঁধ কেটে দেওয়া বহুলাংশে দায়ী। এজন্য জাতিসংঘের সহায়তায় ভারতকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

৩. মুহুরীর চরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের কেটে দেওয়া সুরক্ষা বাঁধটি অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

৪. বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে এবং ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন চলবে না।

৫. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি নাগরিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৬. কৃষি, মৎস, পোল্ট্রি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।

৭. শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে অতিদ্রুত তা মেরামত করতে হবে।

৮. নদীভাঙন রোধে এখনি কার্যকর ব্যবস্থা চাই। মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপ নিতে হবে।

৯. বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনেরও দায় আছে, এজন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০. উন্নয়নের নামে জলাধারে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। ভরাট করা খাল ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. নদী ও পরিবেশ দূষণ রোধ এবং বনভূমি উজাড় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।আন্তর্জাতিক, আদালত, ভারতীয়, বিচার, দাবি

আরো পড়ুন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X