December 18, 2024
দই: উপকারিতা, দইয়ের জন্মস্থান

দই: উপকারিতা, দইয়ের জন্মস্থান

দই: উপকারিতা, দইয়ের জন্মস্থান

দই: উপকারিতা, দইয়ের জন্মস্থান

দইয়ের কথা চিন্তা করলেই প্রথমে মাথায় আসে এটার আবিষ্কারে বাংলাদেশের কথা। তা যদি সঠিক  না হয় তাহলে চিন্তায় আসে দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়া মহাদেশের  কোনো দেশের কথা।  তাও যদি না আসে তবে চলে যেতে হয় মিষ্টি প্রেমিক মিডেলিস্টের দিকে।  কিন্তু না তার কোনটাই সঠিক নয়।  দই প্রথম আবিষ্কার হয় ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়ায়

বিশ্বের কাছে দইএর দেশ পরিচিত দেশ বুলগেরিয়া! দইয়ের রহস্য ফাটলকারী প্রথম বিজ্ঞানী বুলগেরিয়া থেকে। ডাঃ স্ট্যামেন গ্রিগোরভ। গ্রিগোরভ ১৯০৪ সালে তার বিয়ের পরপরই জেনেভা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। তখন তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এর সঙ্গে ছিল ‘রুকাটকা’ নামক মাটির পাত্রে তৈরি দই। এক বছর ধরে ল্যাবে ঘাম ঝরানোর পর, গ্রিগোরভ আবিষ্কার করেন ঠিক দুধের কোন ব্যাকটেরিয়াগুলো গাঁজন প্রক্রিয়ায়  দইয়ের জন্য দরকারি ।

গ্রিগোরভ এবং বুলগেরিয়ানদের দইপ্রীতির সম্মানে সেই বীজাণুটির নাম রাখা হয় ‘ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগেরিকুশ’। এতে দইয়ের সঙ্গে বুলগেরিয়ার সম্পৃক্তি চিরকালের জন্য  টেকসই ভিত্তি পেয়ে যায় ! ! শুধু তাই নয়, গ্রিগোরভের আবিষ্কারকে সম্মান জানাতে তার স্থানীয় বুলগেরিয়ার টার্নে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছিল—বিশ্বের একমাত্র দই জাদুঘর!

দই বা দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাবার যা দুধের ব্যাকটেরিয়া গাঁজন থেকে তৈরি হয়। ল্যাকটোজ গাঁজন ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে, যা দুধের প্রোটিনের উপর কাজ করে দইকে এর বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্বাদ এবং সুগন্ধ দেয়। মানুষ ৪৮০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দই তৈরি করে খাচ্ছে। এটি সারা বিশ্বে পরিচিত। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার হিসেবে এর সুনাম রয়েছে। দই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে, ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং লসন হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিউম্যান মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড প্রোবায়োটিকসের সভাপতি গ্রেগর রিড দাবি করেছেন যে দইয়ের মতো গাঁজনযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে উপকারী অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিকের পরিমাণ বেড়ে যায়। মানুষের শরীর, যা ঘুরে বিষাক্ত রাসায়নিক অপসারণ করতে পারে। শরীর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে।

দুধের ব্যাকটেরিয়া গাঁজন দ্বারা দই তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, বিভিন্ন প্রোবায়োটিক অণুজীবের দ্বারা দুধের ল্যাকটোজ ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। গাঁজনে জড়িত প্রজাতিগুলি পরিবেশের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে দইয়ে  পরিণত হয়।

দুগ্ধজাত খাবার। দই আসলে দুধে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর মাধ্যমে তৈরি হয়। ব্যাকটেরিয়া গাঁজন প্রক্রিয়ার সময় দুধের ল্যাকটোজ উপাদানকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করে, যা দুধের প্রোটিনের দইয়ের সাথে মিলিত হয়ে দই তৈরি করে। ল্যাকটোব্যাসিলাস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস থার্মোফিলাস মূলত দই তৈরিতে ব্যবহৃত উপকারী ব্যাকটেরিয়া। তবে, বিভিন্ন প্রজাতির বিফিডো ব্যাকটেরিয়া এবং ল্যাকটোব্যাসিলিও ব্যবহার করা যেতে পারে। দইয়ের টক স্বাদের তারতম্য মূলত ব্যবহৃত ব্যাকটেরিয়ার উপর নির্ভর করে।

দুধের মানের উপর নির্ভর করে দইয়ের স্বাদও পরিবর্তিত হয়। সাধারণত দই তৈরিতে গরুর দুধ ব্যবহার করা হয়। তবে প্রাপ্যতা ও চাহিদার বিচারে বিভিন্ন দেশে মহিষ, ছাগল, ঘোড়া, উটের দুধ থেকেও দই তৈরি হয়।

জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ দই স্বাস্থ্যকর। এই দইতে কোন চিনি বা রং বা অন্যান্য উপাদান যোগ করা হয় না। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম দই গঠনে ব্যাঘাত ঘটায়। অনেকেরই দুধে অ্যালার্জি থাকে। এক্ষেত্রে দুধের বিকল্প হিসেবে দই খাওয়া যেতে পারে। দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া হজম প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

দইয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। দই প্রোটিনেরও ভালো উৎস। দই বি-ভিটামিন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা স্বাস্থ্যকর। চর্বি এড়াতে চাইলে কম চর্বিযুক্ত দুধের দই খাওয়া যেতে পারে। খাওয়ার পর দই খাওয়ার অভ্যাস খুবই প্রচলিত। দই বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়। ঘোল, মাঠা, লাচ্ছি , বোরহানি ইত্যাদি সুস্বাদু পানীয় তৈরিতে দই ব্যবহার করা হয়।

দইয়ের  কিছু কমন উপকার জানলে, দই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করবেন।  এগুলো হলো

১. শক্তিশালী হাড় গঠননে

২. হজমের উপকারিতায়

৩. উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিতে

৪. রক্তচাপ কমায়

৫. ত্বকের জন্য উপকারী

৬. ভোজনরসিক মানুষের জন্য

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

৮. শরীরের ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে

৯. পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে

১০. ওজন কমাতে

আরো পড়তে

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X