ডলার সংকট কাটতে শুরু
* প্রবাসী আয়ের আলোর দিশা
* বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি
* উচ্ছ্বসিত প্রবাসীরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতি চান
* টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমছে
* নগদ ডলার কেনার প্রবণতা কমে যাচ্ছে
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে খুব খোলামেলাভাবে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন প্রবাসীরা। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, আমেরিকাসহ অনেক দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা বড় ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে প্রবাসীরা ‘নো রেমিট্যান্স’ ক্যাম্পেইন শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসে ১০ মাসের মধ্যে রেমিট্যান্স সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এরপর রেমিটেন্সের পলে নতুন হাওয়া বইতে শুরু করে । আগস্টের প্রথম তিন দিনে ৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। পরের সাত দিনে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এ কারণে দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে।
দেশের খোলা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম কমেছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৯-১২১ টাকার মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে ডলার কিনতে এসে দেখেন এক ডলারের দাম ১২৬ টাকা। কিন্তু এখন তা ১১৮ টাকায় নেমে এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্সের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রবাসীরা দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে মানি লন্ডারিং কমার পাশাপাশি নগদ ডলার কেনার প্রবণতা কমবে, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেও লাভবান হবে।
ব্যাংকাররা বলছেন, নতুন সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও আস্থা বেশি। প্রবাসীদের আস্থার কারণে বৈধ মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতাও বেড়েছে। আগামী দিনে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এভাবে দেশের ডলার সংকট কেটে যাবে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক প্রবাসী বলেন, আমরা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য আইনি মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনে আমরা খুশি। এখন থেকে আমরা নিয়মিত বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোমানিয়া থেকে এক প্রবাসী বলেন, আমি বৈধভাবে রেমিটেন্স পাঠাতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। নতুন সরকারের অধীনে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমরা প্রবাসীরা নিজেদের এবং অন্যদের উৎসাহিত করব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুলাইয়ের শেষ ১১ দিনে মাত্র ৩৮০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সরকারের পতনের পর, ৭ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে $৩৮৭.১২ মিলিয়ন। সব মিলিয়ে এই আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে ৪৮২.৭৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
প্রবাসীরা জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে $১৯১ মিলিয়ন রেমিট করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় $৬০ মিলিয়ন কম এবং গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চলতি বছরের জুনের তুলনায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩২.২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দর ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী হার নির্ধারণ করা হয় ১১৭ টাকা। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকায়। এখন তা বাড়তে শুরু করেছে। রেমিটেন্স কমে গেলে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিটেন্স আনতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে প্রায় ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স ক্রয়ের হার ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা পর্যন্ত প্রস্তাব করে।
ইন্টারনেট সেবা স্থগিত এবং বিগত সরকারের প্রতি প্রবাসীদের অবিশ্বাস ও ঘৃণার কারণে রেমিটেন্স কমেছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। এখন প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় নগদ ডলার কেনার প্রবণতা কমছে। এছাড়াও মানি লন্ডারিং রোধ করা গেলে মুদ্রা বাজার স্বস্তি পাবে।