জুলাই’ ২০২৪, রেমিট্যান্সে ধস
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অশান্ত হয়ে ওঠে গোটা দেশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কারফিউ জারি করেছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সরকারি অফিস-আদালতের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ সময় ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ব্যাংকিং খাত আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। এই মাসের প্রথম ১৮ দিনে, $১৪২.২ মিলিয়ন এসেছে। আর ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬ দিনে এসেছে মাত্র ৭৮ মিলিয়ন ডলার, যা একদিনের আয়ের চেয়ে কম।
এর বাইরে ২১থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১৩.৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জুলাই মাসে দেশে রেমিটেন্স কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স তেমন কম হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনে বাংলাদেশ দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
জুলাইয়ের প্রথম ১৮ দিনে দেশে দৈনিক রেমিট্যান্স গড়ে ৭.৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যাইহোক, এই ধারাবাহিকতা ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত পড়ে। এই ছয় দিনে দেশে এসেছে মোট ৭৮ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রবাসীরা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ১৯৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা এই বছরের থেকে একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস।
দেশে চলমান কারফিউর মধ্যে গত বুধবার থেকে সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ায় মাসের শেষ দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র।
এ প্রসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘রেমিটেন্সের নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (বিদেশে দেশীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট) পুরোপুরি মেলে না। তবে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের পুরো হিসাব পাওয়া যাবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ১৯থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছিল, এই সময়ে ব্যাংকগুলি শুধুমাত্র এক দিনের জন্য খোলা ছিল। এদিকে দেশে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় অনলাইন লেনদেনও বন্ধ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। মার্চ মাসে মোট রেমিট্যান্স ১৯৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর আগে, জানুয়ারিতে ২১১ মিলিয়ন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। প্রবাসীরা এপ্রিল মাসে ২০৪ মিলিয়ন ডলার এবং মে মাসে ২২৫মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। এর পরে জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ $২.৫৪ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছে, যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানা গেছে, রোববার (২৮ জুলাই) কয়েকটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকারের পক্ষ থেকে উচ্চ হারে রেমিট্যান্স ডলার কেনার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে জনগণকে আগ্রহী করে তোলাই এর মূল উদ্দেশ্য। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ রেমিটেন্স সংগ্রহকারী ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নির্দেশ দিয়েছে। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলারের রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর রোববার বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স ক্রয়ের হার ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ১১৮. ৭০ পয়সা।
দেশে চলমান কারফিউর মধ্যে গত বুধবার থেকে সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মিজবাউল হক
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের একটি অংশ আইনি মাধ্যমে তাদের রেমিটেন্স পাঠাবে না বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত সপ্তাহে রেমিট্যান্স কম এসেছে। এটা সাময়িক। এখন কম আসছে বলে ভবিষ্যতে কমবে তা বলা যাবে না।