চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩% চাকরি মেধার ভিত্তিতেঃ অনেক রক্তের বিনিময়ে আদালতের রায়
পৃথিবীর ইতিহাসে ছাত্র-জনতার ওপর এত বেশি এবং এত নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে কিনা হয়তোবা তাবৎ দুনিয়া বলতেও পারবেনা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার; স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট কায়দায় ছাত্রদের উপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এবং এক পর্যায়ে ছাত্রদের জীবনের বিনিময়ে সরকার হার মেনে আদালত থেকে রায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতেই ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে। বাকি ৭ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ব্যবস্থা মাথায় রেখে মঙ্গলবার আদালতের রায়ের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে কোটা নির্ধারণ করা হলো– মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ।
এতে বলা হয়, ‘নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।’ প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রসহ আগে জারি করা এ-সংক্রান্ত সকল পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রহিত করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। এ সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে সরকার কোটা নির্ধারণ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের রায়ে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এবং বিশ্বাস করি যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোটা সংস্কার চাওয়া হয়েছিল,সেই আন্দোলনের মাধ্যমে যে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা দূরীকরণ করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় গত শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার।যা এখনও বহাল আছে।।
গত রোববার আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে রায় দেন। রায়ের পরদিন নেতা শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুমোদন করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে, শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ ম থেকে ১৩ ম শ্রেণির (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সমস্ত কোটা বাতিল করা হয়েছিল। তবে, ১৪থেকে ২০ নম্বর গ্রেডে কোটা ছিল (মূলত ৩য় এবং ৪র্থ) । যদিও প্রতিষ্ঠান ভেদে এসব পদের কোটায় কিছু ভিন্নতা ছি।
আরও জানুন