বাসে আগুন দিতে শ্রমিক লীগ নেতার ৪ লাখ টাকার চুক্তি
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চারটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য চার লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এক ট্রাক চালক। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সোমবার সকালে লেগুনা চালক সোহেল রানাকে (৩২) আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন সন্ধ্যায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলমকে আটক করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোহেল তার জবানবন্দিতে বলেছেন, শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুলের নির্দেশে তিনি বিআরটিসি বাসে আগুন দেন। তার চার লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। অগ্রিম হিসাবে ৫০০ টাকা পান।
নগরীর -হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিসির ডিপো অবস্থিত। সরকারি বাস আছে ৯৬টি। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে ডিপোর পরিচ্ছন্নতা শেডের পাশে চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে একটি বাসের ১৬টি এবং আরেকটি বাসের আটটি আসন পুড়ে গেছে। বাকি দুটি আংশিক পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় রোববার হাটহাজারী থানায় বিআরটিসি ডিপো চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক মোঃ জুলফিকার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, কালো শার্ট ও লুঙ্গি পরা এক যুবক ডিপোর সিসিটিভি ক্যামেরায় আগুন দেয়। পরিচয় শনাক্ত করে সোমবার নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে এই যুবককে আটক করা হয়। আলামত হিসেবে তার বাড়ি থেকে একটি কালো শার্ট ও লুঙ্গিও জব্দ করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল স্বীকার করেছে, ঘটনার আগে দিদারুল আলম শুক্রবার বিকেলে নাহুনপাড়া সিএনজি স্টেশন এলাকায় ডিপোর ভেতরে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তাকে ৫০০ টাকা দেয়। কাজ শেষে আরও চার লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
ওসি আরও জানান, সোহেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে দিদারুল ও সোহেলকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল। এরপর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলম
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রহমত উল্লাহ আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করেছেন যে সোহেল রানা দিদারুলের নির্দেশে টাকার বিনিময়ে বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে পুলিশের উপস্থিতিতে সোহেল রানা বলেন, দিদারুলের নির্দেশে আমি বাসে আগুন দিয়েছি, কারণ আমাকে চার লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছিল।
তবে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলম সোহেলকে নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। আদালত চত্বরে তিনি দাবি করেন, এগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
বিআরটিসি চট্টগ্রাম ডিপো ম্যানেজার মোঃ জুলফিকার জানান, সরকারি দলের নাম ছদ্মবেশে দিদারুল ডিপোর বাসে সুপারভাইজার দেওয়াসহ নানা প্রভাব বিস্তার করতো। সে এটা করতে পারে কারণ সে আর লাভবান হতে পারে না।
ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হওয়ায় কেন সরকারি বাসে আগুন দেওয়া হলো জানতে চাইলে নগর শ্রমিক লীগের সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন গতকাল বলেন, এটা দিদারুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে। আইনগতভাবে যা প্রয়োজন তা করা হবে।
পুলিশ জানায়, দিদারুলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর নতুন পাড়া এলাকায় আব্দুল হালিম ওরফে রুবেল নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিআরটিসির একটি বাসে সুপারভাইজার নিয়োগ নিয়ে বিরোধে হালিমকে হত্যা করা হয়।