কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, প্রভোস্ট কমিটির বৈঠক, শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান
রাজু ভাস্কর্য বিক্ষোভে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেদিন পদ ছাড়বে সেদিন ভাইকে কেউ চিনবে না। আমি আপনাদেরকে সাধারণ ছাত্রদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। ছাত্রলীগের বন্ধুদের কাছে জানতে চাই, তোমার লেখাপড়া কতদিন? নেতাদের পিছনে না পড়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিন। সময়ের সাথে সাথে কিছুই করার থাকবে না। পদ চলে গেলে হলে সিটও থাকবে না।
প্রথম দফা সংঘর্ষের পর বিকাল ৫টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের উপর দ্বিতীয় হামলা চালায় । উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও পাথর ছোড়ায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগকে দেখা যাচ্ছে। সংগঠনের কর্মীরা লাঠি, রড, স্টাম্প, হকি স্টিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
সংঘর্ষের সময় শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা ভেতরে আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে ঢাকার চানখারপুল মোড় ও দোয়েল চত্বরের রাস্তা দখল করে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীরা। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর মধ্যে ছাত্রলীগের আরেক দল ঢাকা মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে গিয়েও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের হামলায় মেডিকেল কলেজে আতঙ্ক শুরু হয়। আহত হয় বহু ছাত্র। একই সময়ে শহীদ মিনার, ফুলার রোড ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোয়াল চত্বর দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুলিশ। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ সময় শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট মো. মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের ভেতরে যেতে অনুরোধ করেন। অন্যদিকে বহিরাগতদের সরিয়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রভোস্ট কমিটির জরুরী বৈঠকের পাঁচটি সিদ্ধান্ত হলো:
১. শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবে;
২. অধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা সার্বক্ষণিক হলের মধ্যে থাকবেন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন;
৩. হলগুলোতে বহিরাগত কেউ থাকতে পারবে না;
৪. যেকোনো ধরনের গুজব ও ভুল তথ্য থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা যাচ্ছে;
৫. সবাইকে ভাঙচুর থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। ভাঙচুরের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রভোস্ট কমিটির বৈঠক শেষে ভিসি প্রফেসর ড.এএসএম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হলের প্রভোস্টরা হলে থাকবেন। আমরা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব দিকনির্দেশনা দেব।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গভীর রাতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে:
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সহিংস হয়ে ওঠে। তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়। এ সময় তারা এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি, রাজাকারের ঘাঁটি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এক সময় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ঢাবির মাস্টারদা সূর্যসেন, বিজয় একাত্তর ও মুহসিন হলের শিক্ষার্থীদের গেটে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। পরে তাদের ছাড়িয়ে নিতে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা বিজয় একাত্তর হলের সামনে জড়ো হন। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা গেটের তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে সম্মিলিত মিছিল নিয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসীম উদ্দীন হল, শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, এফএইচ হল, একুশে হল এবং রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিএসসিতে। এ সময় তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি-বাঙালি’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
অনেক ছাত্র-ছাত্রী তখন বলেন পুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সারা বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাব অনুযায়ী ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযোদ্ধা সহকারে ২% এর বেশি নয়। তাদেরকে নিয়ে সরকার যদি বাকি ৯৮% কে রাজাকার বলে এটা প্রধানমন্ত্রীর কল্পনা প্রসূত রাগের প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
1 Comment