November 21, 2024
বাংলাদেশে স্বর্ণ-হীরে চোরাচালান: পাচার ৯১২৫০ কোটি টাকা

বাংলাদেশে স্বর্ণ-হীরে চোরাচালান: পাচার ৯১২৫০ কোটি টাকা

বাংলাদেশে স্বর্ণ-হীরে চোরাচালান: পাচার ৯১২৫০ কোটি টাকা

বাংলাদেশে স্বর্ণ-হীরে চোরাচালান: পাচার ৯১২৫০ কোটি টাকা

এমপি আনার কাণ্ড-কারখানার পর বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি অনেকটাই নেড়েচড়ে বসেছে।চোরাচালানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সীমান্তরক্ষীদের দ্বারা সোনার চালান জব্দ করার প্রায়শই খবর পাওয়া যায়। তবে চোরাচালানের পরিমাণের তুলনায় গ্রেপ্তারের পরিমাণ এক ভগ্নাংশও নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাজুস। তারা বলছেন, সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সোমবার ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সোনা ও হীরা চোরাচালান ও চোরাকারবারিদের দমনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিরুনি অভিযানের দাবি জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চোরাচালান বিরোধী ও আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত বাজুস স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. চোরাচালানের মাধ্যমে পাচারের পরিমাণ প্রকাশ করেন রিপনুল হাসান।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি মাধ্যমে সোনা আমদানি করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ বিলিয়ন ডলার জমা থাকত, যা থেকে সরকারের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় হতো।

এপিবিএনের সর্বশেষ তথ্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত কয়েক বছরে অবৈধভাবে আনা ১৩১ দশমিক ১১ কেজি সোনার বার ও অলংকার জব্দ করা হয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ টাকা। হাজার

বিভিন্ন পথ দিয়ে বাংলাদেশে আসা সোনা ভারতে পাচার হচ্ছে বলেও তথ্য দেন বাজুস নেতারা ।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ছয় জেলা মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা সোনা চোরাচালানের ‘নিরাপদ রুট’ হয়ে উঠেছে। ভারতে পাচার হওয়া সোনার একটি বড় অংশ এসব জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত কয়েক মাসে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে প্রায় ২৬ কেজি চোরাচালান করা সোনা আটক করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৬ কোটি টাকা।

রিপনুল বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১০১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও, ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত, বিজিবি সীমান্ত এলাকা থেকে ৯২৫.২১৯ কেজি চোরাচালান করা সোনা জব্দ করেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ২৭. ৭১৩ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে।

স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এক নেতা বলেন, “বাংলাদেশকে সোনা চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের দর্শনা সীমান্ত এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা। এটা কোনো কথার কথা নয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গোয়েন্দা সংস্থার নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন।”

তিনি দাবি করেন, ডলারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেপরোয়া চোরাচালানের কারণে দেশের জুয়েলারি শিল্প সংকটে পড়েছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় বুলিয়ান বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“পোদ্দারদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পাইকারি সোনার বাজার। পোদ্দারদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের একটি সিন্ডিকেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মূলত এসব চোরাকারবারিদের একাধিক সিন্ডিকেট বিদেশে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোনা চোরাচালানকারীদের ধরতে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে চিরুনি অভিযানের দাবি জানিয়ে রিপনুল বলেন, “স্বর্ণের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই। বাজুস যেসব জেলায় সোনা চোরাচালান সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে সেসব জেলায় চিরুনি অভিযান চালানোর দাবি জানাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।”

বাজুসের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে

# সোনা ও হীরা চোরাচালানের সাথে জড়িতদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযান

# স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালান রোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথক সরকারি মনিটরিং সেল গঠন

# ব্যাগেজ নিয়ম সংশোধন করে সোনার বার আনা বন্ধ করা

# করমুক্ত সোনার অলঙ্কারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা

# একই ধরনের দুইটির বেশি অলংকার আনা নিষেধ

# এছাড়াও একজন যাত্রীকে বছরে একবার ব্যাগেজ নিয়মের সুবিধা প্রদান করা

# ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার এবং অলঙ্কার আনার সুবিধার অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট এবং চোরাচালানের প্রভাব জানতে বাজুস সহ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর দ্বারা একটি জরিপ করা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুস নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ট্যারিফ ও ট্যাক্সেশন সংক্রান্ত বাজুস স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাজুসের চোরাচালান ও আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল উদ্দিন। নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বাজুস চোরাচালান বিরোধী স্থায়ী কমিটির সদস্য সচিব ও আইন প্রয়োগকারী মো আলী হোসেন, চোরাচালান বিরোধী বাজুস স্থায়ী কমিটির সদস্য শাওন সাহা।

আরও পড়ুন

তিন দেশের নাগরিক মিলে সুন্দরী নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে ফাঁদ হানিট্র্যাপ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X