স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করেছেন ৭১ বছর বয়সী এক কবি
স্লোভাকিয়া:
স্লোভাকিয়া মধ্য ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম স্লোভাক প্রজাতন্ত্র। চেক প্রজাতন্ত্র স্লোভাকিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। উত্তরে পোল্যান্ড এবং পূর্বে ইউক্রেন। দক্ষিণে হাঙ্গেরি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অস্ট্রিয়া।
মোট আয়তন ৪৯ হাজার ৩৫ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর ব্রাতিস্লাভা। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যা ৫৬ লাখ।
স্লোভাকিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য আশ্রয়স্থল। পাহাড়, দুর্গ এবং গুহা দিয়ে ঘেরা। দেশে প্রায় ২০০ টি দুর্গ রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা দুর্গগুলো দেখতে ভিড় জমায়। এছাড়া ইউরোপের মধ্যে স্লোভাকিয়ায়ই সবচেয়ে বেশি গুহা রয়েছে। স্লোভাকিয়ার গুহাগুলো এতটাই দৃষ্টিনন্দন যে এগুলোকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়।
রাজনীতি:
স্লোভাকিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে সঞ্চালিত হয়। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইনসভার ক্ষমতা আইনসভার উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ কার্যনির্বাহী ও আইনসভা থেকে স্বাধীন। গুলিবিদ্ধ রবার্ট ফিকো ২০০৬ থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, স্লোভাকিয়ার জনসংখ্যার ৬৮.৮% ছিল খ্রিস্টান। বাকিরা অন্যান্য জাতি ধর্মের।
বুধবার রাতে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যার খবর প্রকাশিত হয়! তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। কিন্তু কেন এমন হলো, কারা ঘটিয়েছে, এর পেছনে কারা রয়েছে? তবে সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, হ্যান্ডলোভা শহরের ‘হাউস অফ কালচার’ নামে একটি বিল্ডিংয়ে একটি সরকারি সভা চলছিল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ভবনের বাইরে ৪ রাউন্ড গুলি! প্রধানমন্ত্রীর পেটে গুলি লাগে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর সংসদ স্থগিত করা হয়। স্লোভাকিয়ায় প্রেসিডেন্ট জুজানা কাপুতোভা প্রধানমন্ত্রীর ওপর নৃশংস ও নৃশংস হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি হতবাক। আমি আশা করি ফিকো দ্রুত সুস্থ হয়ে কাজে ফিরবে।”
কিন্তু এই কাজটি কে করেছে, কেন করেছে?
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে যা জানা গেল তা বিস্ময়কর। ধীরে ধীরে ‘হত্যাকারী’ পরিচয় জেনে সবাই অবাক! একজন কবি প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করেছেন। সত্তর দশকের একজন বৃদ্ধ, একজন রাজনৈতিক লেখক। তার তিনটি প্রকাশিত কবিতার বই রয়েছে। তিনি একটি সাহিত্য ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। লেখক সমিতির সদস্য। পরিচিতরা বলছেন যে লেখক সবসময় খুব শান্ত এবং ভদ্র। নীতিগত এবং আদর্শবাদীও। তিনি কিছুটা প্রতিবাদী হতে পারেন, তবে মোটেও খারাপ নয়।
তার ছেলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, তার বাবা কেন এমন ঘটনা ঘটালেন তিনি বুঝতে পারছেন না। কেন এমন পরিকল্পনা করলেন, ঠিক কী ঘটল, সে সবই অন্ধকারে! তবে, তিনি বলেছেন যে তার বাবার আইনগত নিয়ম অনুসারে একটি বন্দুক রয়েছে।
তবে বিভিন্ন খবরের বিশ্লেষণে যতটুকু বোঝা গেছে এবং জানা গেছে তা হল এই কবি-ভদ্রলোক নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর নীতির ঘোর বিরোধী। স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী রুশপন্থী, পুতিনের কাজের সমর্থক। তবে এই কবি ইউক্রেনের জনগণের ওপর রাশিয়ার নিপীড়নের বিরুদ্ধে। তিনি চান তার দেশের প্রধানমন্ত্রী মানবিক এবং রাশিয়া বা পুতিনের পথের বাইরে থাকুক। পুতিনের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুক । নির্যাতিত ইউক্রেনীয়দের সাথে সংহতি প্রকাশ করুক। কিন্তু সেটা হচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেন তিনি!
ফিকোর স্মার-এসডি দল গত সেপ্টেম্বরে স্লোভাকিয়ার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। এই পর্যায়ে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার প্রথম কয়েক মাস রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়। জানুয়ারিতে তিনি ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন। এছাড়া তিনি রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছিলেন। তিনি ভবিষ্যতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে আমন্ত্রণের বিরোধিতা করবেন বলেও ঘোষণা করছিলেন। পশ্চিমারা রবার্ট ফিকোর মস্কোপন্থী অবস্থানের সমালোচনা করে আসছে।
আরও পড়ুন
হন্ডুরাসের নারী কারাগারে ৪১ জনকে পুড়িয়ে, গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা