ব্যাংক খোলা টাকা উধাও: ব্যাংক একীভূতকরণের ফল
এমনিতেই সংকটে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে ব্যাংক একীভূতকরণের ফলে আরো বিপদে পড়েছে ব্যাংকটি। চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা। এমনটাই বলছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। দুই মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাংকে টাকা তুলতে আসা গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত জেলার গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বিগ্ন ও হতাশা বাড়ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কিছু গ্রাহক চেকের পরিমাণ কমিয়ে কিছু টাকা দেওয়ার চেষ্টাও করছেন। ব্যাংকের ওই শাখায় টাকা জমা দেওয়ার পরও তা তুলতে সমস্যা হচ্ছে। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চেক ফেরত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দু-চার দিন ব্যাংকে আসা-যাওয়ার পরও টাকা তোলার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের সংখ্যা।
ডিপিএস এবং ফিক্সড ডিপোজিট সহ অন্যান্য স্কিমে অর্থ জমা করা গ্রাহকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগী গ্রাহকরা চরম হতাশার সঙ্গে বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এমন আর্থিক সংকট থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। শুধুমাত্র আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের সময় নষ্ট করা।
গ্রাহকরা বলছেন- এই শাখার কর্মকর্তাদের সার্বিক আচরণের কারণে এই ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার পথে বলে আমরা মনে করছি। আমরা এখন আমাদের জমানো টাকা কিভাবে পাবো সেই চিন্তায় দিনরাত একাকার। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুব মঙ্গলবার সকালে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫৫ হাজার টাকা তোলার চেক নিলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা তা পরিশোধ না করেই ফেরত দেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তিনি তার ফেসবুকে চেকের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন টাকা তুলতে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখায় যাই। নগদ অর্থ সংকটে ব্যাংক থেকে দিতে পারবে না। জানতে চাইলেন এই অবস্থা কতদিন? উপস্থিত গ্রাহকরা দুই মাস ধরে জানতেন। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন- আমাদের কিছু করার নেই। যত পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের এ অবস্থায় ফেলেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার লেখাটি শত শতবার শেয়ার করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক মন্তব্যও পড়েছে । অনেকেই এই ব্যাংকের দায়িত্বহীনতা ও দেউলিয়াত্ব নিয়ে নানা মন্তব্য লিখেছেন। মৌলভীবাজার শহরের ব্যস্ততম এলাকা চৌমোহনার কোর্ট রোড এলাকায় আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা। প্রতিদিন শত শত গ্রাহক টাকা তুলতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে যান। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারায় সমস্যায় পড়তে হয় অনেককে।
জানা গেছে, ঈদের দুই দিন ছুটির পরও অর্থ সংকটের কারণে ব্যাংকের এই শাখাটি বন্ধ রয়েছে। গত ৬ মে টাকার অভাবে প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে তালা খুলে অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। এখনো ব্যাংকের অর্ধেক শাটার বন্ধ এবং অর্ধেক কার্যক্রম চলছে। প্রায় দিন এভাবে বিভিন্ন সময়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরাও টাকা না পেয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। বড় ঝামেলার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে জেলা শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, টাকা না পাওয়া ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের গালিগালাজ শুনতে চাচ্ছেননা তারা। টাকার সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ রাখলে ভালো হতো। তারা জানান, এখন নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তিশালী ও দুর্বল ব্যাংকের এমন ঘোষণার পর সবাই টাকা তুলতে ছুটে আসেন। সবাই জমা না দিয়ে একসঙ্গে টাকা উত্তোলন করায় এই সমস্যা প্রকাশ আরো প্রকট হচ্ছে । কিন্তু কোনো লেনদেন যে একেবারেই হচ্ছে না তা নয়। আমরা কমবেশি গ্রাহকদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করছি। হেড অফিস আমাদের চলমান সমস্যা সম্পর্কে অবগত। তারা আমাদের আশ্বস্ত করছে যে তারা খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করবে। এই শাখায় প্রায় ৬-৭ শতাধিক গ্রাহক রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই এ সংকট কেটে যাবে বলে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেন তিনি।