উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: সর্বনিম্ন ভোটের রেকর্ড
বিগত ১৬ বছর যাবৎ বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার অসন্তোষজনক ফলাফলে বিরক্ত হয়ে গেছেন। তাই তারা ভোট দিতে চান না। যষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের এই হার গত ৫ উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে রেকর্ড কম। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা ভোটে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে ১৯৯০ সালের দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচনে এবং ১৯৮৫ সালের প্রথম উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে ওই নির্বাচনে বেশি ভোট পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কম ভোটার উপস্থিতি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, সকালের বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুমে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, এবারই প্রথম ধান কাটার মৌসুমে ভোট হচ্ছে না। এর আগে এ মৌসুমেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশি।
মূলত নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কারণে ভোটার উপস্থিতি কমেছে।
এদিকে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ পর্বে ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হলেও স্থগিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ায় ১৩৯ টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল থেকেই অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা যায়।
সকাল থেকেই বগুড়ার গাবতলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র প্রায় শূন্য, কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কক্ষে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮৮৭ ভোটের মধ্যে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭১৪টি। শতাংশ হিসাবে যা ১৮.৩৬ শতাংশ। ময়মনসিংহেও ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হালুয়াঘাট উপজেলায় ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশ, ফুলপুর উপজেলায় ১৮ শতাংশ এবং ধোবাউড়া উপজেলায় ২০ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ১৪ শতাংশ এবং জীবননগরে ১৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ডিমলা উপজেলায় ভোটার কম থাকায় কেন্দ্রের ভেতরে এক এজেন্টকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘুমন্ত এজেন্ট গণমাধ্যমকে জানান, তিনি সকাল ৮টায় কেন্দ্রে আসবেন। কখনো দুই-তিন আবার কখনো ২০ মিনিটের জন্যও ভোটার নেই। ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলতে পারব না। এছাড়া আনসার সদস্যরা রান্নাবান্নায় সময় কাটান। গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিকেলে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নারী ও পুরুষ আনসার সদস্যদের রান্নার আয়োজন করতে দেখা গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভোটকেন্দ্র ফাঁকা থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পরিদর্শনে বাইরে থেকে ফিরতে দেখা গেছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গাবতলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক দেখা গেলেও কেন্দ্রের ভেতরে ছিল ফাঁকা। কেন্দ্রের ১০টি ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার দেখা যায়নি। ভোটগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। এ সময় বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রিটার্নিং অফিসার মাহমুদ হাসান কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। পরে তারা কেন্দ্রের ভেতরে না গিয়েই ফিরে যান।
ভোটার কম থাকার কারণ হিসেবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর দ্বায়িত্বশীল ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই। ভোট দিলেও গণনা হবে কিনা তা নিয়ে ভোটারদের মনে সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক বল্লেন কাদের
বরাবরের মতোই নির্বাচন পরবর্তী ব্রিফিং এ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। নির্বাচনের পর রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সমালোচকদের বিশেষ করে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা হাস্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন হত্যা, মারামারি ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এই নির্বাচনের প্রথম পর্বে কোনো প্রাণহানি, প্রাণহানি নেই। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিছু আহত হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রাণহানি হয়নি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার। এ অবস্থায় ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক বলে আমি মনে করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বেশি জয়ী হয়েছেন। অন্য পক্ষের হিসাব পরে দিতে পারব। আমরা মনে করি ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। নির্বাচনে কোনো প্রাণহানি ঘটিনি – এটাকে শান্তিপূর্ণই বলতে হবে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন বেশ দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরাও যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। যার ফলে শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
আরও জানতে