বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট
পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং পুলিশের বিভিন্ন বড় বড় দায়িত্বে থাকার সুবাদে তিনি অগাধ সম্পদের মালিক বনে যান। এটা গণমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় তার বিরুদ্ধেও ডাক না দিয়ে পারেননি দুর্নীতি দমন কমিশন সহকারে দেশের আইন আদালত। এবার দেখা যাক বিচার এবং নদীর পানি কোন দিকে প্রবাহিত হয়।
বেনজির আহমেদ একজন প্রাক্তন বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার যিনি পুলিশের ৩০ তম মহাপরিদর্শক ছিলেন। তিনি ১৫এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সচিব খোরসেদা ইয়াসমিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে তদন্ত চলবে।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগান। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তারা রিটের কপি পেয়েছেন। সেখানে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ রিটে দুদকের চেয়ারম্যান, সচিবসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সৈয়দুল হক সুমন। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে, যা তার আয়ের তুলনায় অসম।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ ঢাকায় বেনজির জনম আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আলোচনায় আসেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ত্রী জিশান মির্জা ও দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজির ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজিরের নামে প্রচুর সম্পদ গড়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজিরের সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে একটি অভিজাত ও দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র। এ ছাড়া তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ছয়টি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। পাঁচটি কোম্পানিতে তার বিনিয়োগ ৫০০কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকায় ঢাকার কাছে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি ও বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। বেস্ট হোল্ডিংস এবং পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানের দুই মেয়ের নামে দুই লাখ শেয়ার রয়েছে। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জুড়ে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় ২২ কোটি টাকার আরও ১০ বিঘা জমি রয়েছে।
যদিও দীর্ঘ ৩৪ বছর সাত মাসের চাকরি জীবনে বেনজীর আহমেদের মোট আয় হওয়ার কথা ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এক চিঠিতে ব্যারিস্টার সৈয়দ সৈয়দুল হক সুমনও বলেছেন, বেনজীর আহমেদ তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লেখিত সম্পত্তি অধিগ্রহণে পদের অপব্যবহার করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে ও ছোট মেয়ের নামে বিপুল সম্পদ কীভাবে অর্জিত হয়েছে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
প্রকাশিত খবরে বেনজির বিরুদ্ধে সব অভিযোগ
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম । জাতীয় দৈনিকে ‘বেনজিরের ঘরে আলাদিনের প্রদীপ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বিভিন্ন আর্থিক সম্পদের কথা তুলে ধরা হয়। বেনজিরের বিশাল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভান্নাহ ইকো রিসোর্ট নামে একটি অভিজাত ও মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ছয়টি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ঢাকার অভিজাত এলাকায় বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি ও বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানে দুই মেয়ের নামে দুই লাখ শেয়ার রয়েছে। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫কোটি টাকা। একই এলাকায় ২২ কোটি টাকার আরও ১০ বিঘা জমি রয়েছে।