ভোট-ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বয়কট ন্যায়সঙ্গত: রিজভী
ভোট ডাকাত দখলদার সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়া দেশের পণ্য বর্জন করা জায়েজ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে গুম, খুন ও পঙ্গু পরিবারের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রিজভী। এর আগেও গুম, খুন ও ছিন্নমূলের শিকার পরিবারের সদস্যরা সোচ্চার হন।
এ সময় রিজভী আরও বলেন, ২০১৪ সালে প্রতিবেশী দেশের কূটনীতিকরা এসে ভোটারবিহীন সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালেও রাতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে তারা স্বীকৃতি দিয়েছেন। এবার ২০২৪ সালে এত বড় ডামি নির্বাচন হয়েছে, তারপরও তারা প্রকাশ্যে বলছে আমরা এই সরকারের সঙ্গে আছি। যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বলছে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে, আমরা কোনো দলের পক্ষে নই। একটি ভোট ডাকাতিকারী সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে এমন দেশের পণ্য বয়কট ন্যায়সঙ্গত। তাদের বিরুদ্ধে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে আমরা তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
বিএনপি নেতারা শাল পোড়ায় কিন্তু বউদের শাড়ি পোড়ায় না- বুধবার প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন,‘আমাদের বিএনপি নেতারা ভারত থেকে শাড়িতে মন কিনে না। আমার নানার বাড়ি ভারত। বিয়ের পর একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা সেখানে থাকেন। আসার সময় আমার মিসেসকে একটি শাড়ি দিয়েছিল। আমি কয়েকদিন আগে আমার মিসেসকে জিজ্ঞেস করলাম ওই শাড়িটা কই? আমার মিসেস বলল ওটা দিয়ে তো অনেক আগেই কাঁথা সেলাই করা হয়েছে। আমাদের দেশে একটা রেওয়াজ আছে পুরাতন শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করা।’
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা আপনি দেশের স্বার্থ নিয়ে তামাশা করেন। আপনি বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেলে কারা যুদ্ধ করেছিল? যুদ্ধ করেছিলএদেশের কৃষক শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, নজরুল ইসলাম খান, সাদেক হোসেন খোকা, খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা কি আওয়ামী লীগ করেছেন?
সরকারের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম করার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তরুণদের গুম করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সরকার দখলদার সরকার, নতজানু সরকার। কারো মৃত্যু হলে তার আত্মার মুক্তিতেও শান্তি আছে। একটি নিখোঁজ পরিবার তার আত্মার জন্য ক্ষমা চাইতে পারে না। তার কবরে গিয়ে প্রার্থনা করতে পারে না, সরকার এই ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করেছে।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান। আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, যুবদলের সাহিত্য প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ভারতীয় পণ্য বয়কট’ আন্দোলন বাংলাদেশে নতুন মাত্রা পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে । সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে দেশের বাজার, মার্কেট, শপিংমল, বাণিজ্যমেলা এমনকি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই আন্দোলন গড়ে তুলছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠপর্যায়ের বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর, প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য ফ্রান্স থেকে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের নির্বাচনে দৃশ্যত জনগণের বাদ পড়ার মুখে পর্দার আড়ালে থেকে ভারতের দাদাগিরি ভোমিকার প্রতিবাদে তিনি এই আন্দোলনের ডাক দেন। পরে, সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তারা এ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছেন। বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে বিশ্বের দেশগুলোতে ভারতীয় পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশের অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলও এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। কিছু তরুণ রাজনৈতিক কর্মী ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’ লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকার রাজপথে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
যখন ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং টিভি টকশোতে তোলপাড় চলছে; তখন দেশে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষ ভারতীয় পণ্য বয়কটের আন্দোলনকে তারা নিজেদের মতো করে সমর্থন দিচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতের বয়কট আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলটির মুখপাত্র রুহুল কবিব রিজভী আহমেদ। তিনি ২০ মার্চ ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রচারে সমর্থন জানান । আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বিএনপি দেশের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। যারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে তারা দেশের জনগণের শত্রু।
এদিকে, গত সপ্তাহে বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ দলীয় কর্মসূচিতে ভারতীয় শাল ছুঁড়ে ভারতীয় পণ্য বয়কটের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এতে রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বিএনপি, জামায়াত, বাম দলসহ অর্ধশতাধিক দলের মাঠ পর্যায়ের নেতারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা শুরু করেন। তারা বাজারে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভারতীয় পণ্য বর্জন করে ক্রয়-বিক্রয় করতে উৎসাহিত করেন। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তারা ভারত ছেড়ে দেশীয় পোশাক কিনতে উদ্বুদ্ধ করেন।