November 28, 2024
টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

জাহাজ; সোমালিয়ার জলদস্যদের কবলে পড়লে যে কোন দেশের নাবিকদের অবস্থা বরাবরই খারাপ হয়ে থাকে। এবং সেখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসা অতটা সহজ নয়। হয়তোবা বাংলাদেশের নাবিকদের ক্ষেত্রেও কি লেখা আছে আল্লাহই ভাল জানেন। তবে আমাদের সকলের উচিত তাদের জন্য তাদের পরিবারের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ যেন তাদেরকে মুক্ত করে নিজ পরিবারে ফেরার তৌফিক দান করেন।

জাহাজের একজন ক্রু বলেছেন“আমাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন সবকিছু আল্লাহর হাতে। মুক্তিপণ না দিলে তারা একে একে আমাদের হত্যা করবে”, একজন ক্রু বলেছেন।

স্বজনরা জানান, মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের এক এক করে হত্যার হুমকি দেয়।

জাহাজের বাংলাদেশি প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীকে পাঠানো একটি অডিও বার্তায় বলেছেন, “এই বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দিন।আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে টাকা না দিলে, তারা আমাদের একে একে হত্যা করতে বলছে।

“তারা বলছে যে যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি চলে যাবে। এই মেসেজটা সবার কাছে পৌঁছে দিন। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।”

মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জলদস্যুরা ২৩ জন নাবিককে জিম্মি করে। বুধবার সকালে আগ্রাবাদে জাহাজ মালিকের কার্যালয়ে জড়ো হন নাবিকদের স্বজনরা।

কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিং সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

নাবিকরা তাদের আত্মীয়দের ডেকে জানায় তাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য চাপ দিচ্ছে। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

জাহাজের ক্রু সদস্য নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আমার হাজবেন্ড, র‌্যাংক জিএস, নুরুদ্দিন কালকে (মঙ্গলবার) দুপুর দেড়টা বাজে কল দিয়ে বলে যে, ‘আমাদেরকে জলদস্যু অ্যাটাক করছে’। আমরা সাথে সাথে অফিসে জানাই। মাঝখানে আছরের সময় একবার উনার সাথে কথা হইছে৷ লাস্ট কথা হইছে একবার ৬টা ৪৯-এ ইফতারের পরে।

“আমাকে ভিডিও কল দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করতেছে। বলতেছে, ‘আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। আমাদেরকে সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ আমার বাচ্চাকে দেখতে চায়। আমি ভিডিওতে দেখাই। তারপর দুইটা অডিও পাঠায়। বলে যে, ‘আমাদেরকে সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন সব আল্লাহর হাতে। মুক্তিপণ যদি না দেয় আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলবে’।”

জাহাজ মালিকের কাছে পাঠানো অডিওতে জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান বলেন, “স্যার, আমাদের সব মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।  এটাই শেষ সুযোগ। আমাদের জাহাজের যে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে, ওটা যদি ওপেন রাখেন আর কি, ওখানে যে কোনো সিচুয়েশনে মেসেজ রাখার চেষ্টা করব।

“ওটা খুলে দিয়ে রাখতে বলেন, তাহলে আমরা সুযোগ মত যোগাযোগ করব।”

জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বলেন, “আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এখনো কোনো যোগাযোগ হয়নি।

“তাদের কৌশলগুলির মধ্যে একটি হল, জাহাজটি দখল করার পরে, তারা একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করে। এরপর সেখান থেকে তারা তাদের দাবি জানায় । আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার নাবিকদের মুক্ত করা। তারপর অক্ষত জাহাজটিকে উদ্ধার করা।”

এক দশকেরও বেশি সময় আগে বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মনিকে উদ্ধারের কথা উল্লেখ করে মিজানুল ইসলাম বলেন, যেহেতু জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপদে তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাই এবারও সফল হব বলে আশা করছি।

জাহাজটি কোথা থেকে জিম্মি করা হয়েছে এবং এর বর্তমান অবস্থান এমন প্রশ্নের জবাবে নাবিক বলেন, “এমভি আবদুল্লাহর আইওএস সার্ভার তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অবশ্যই, সমস্ত জাহাজ ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে এটি করে। এ কারণে জাহাজটি কোথায় তা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে হিসাব অনুযায়ী, এটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৫০থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে।

 উল্লেখ্য, নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল আমেরিকান নৌবাহিনী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত মহাসাগরের যে অবস্থান থেকে জাহাজটি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে আমেরিকান নৌবাহিনীর জাহাজ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। সোমালিয়ায় জলদস্যুদের উত্থান ঠেকাতে আমেরিকান নৌবাহিনী ওই সাগরে নিরাপত্তা দেয়। কিন্তু এখন গাজায় যুদ্ধের কারণে হুতিরা সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এ কারণে হুতিদের দমনে তৎপর মার্কিন নৌবাহিনী। এ উপলক্ষে ভারত মহাসাগরে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে সোমালি জলদস্যুরা। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জাহাজ ও নাবিকরা সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X