November 27, 2024
দ্রুত বিচার আইনঃ সংশোধনের বিল ২৪ মিনিটের মধ্যে পাস

দ্রুত বিচার আইনঃ সংশোধনের বিল ২৪ মিনিটের মধ্যে পাস

দ্রুত বিচার আইনঃ সংশোধনের বিল ২৪ মিনিটের মধ্যে পাস

দ্রুত বিচার আইনঃ সংশোধনের বিল ২৪ মিনিটের মধ্যে পাস

লালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আপত্তি সত্ত্বেও দ্রুত বিচার আইনকে স্থায়ী করার বিল পাস করেছে সংসদ। মঙ্গলবার মাত্র ২৪ মিনিটে বিলটি পাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাপা’র তিনজন সংসদ সদস্য আইনটি বহাল রাখার বিরোধিতা করে বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ২০০২ সালে যখন এই আইন প্রথম পাস হয় তখন জাতীয় পার্টি ও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এর বিরোধিতা করে। এরপর ধীরে ধীরে আইনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও বর্তমান সরকার আইনটি স্থায়ী করার উদ্যোগ নেয়। তবে ভোটে বিরোধীদের এই আপত্তি খারিজ হয়ে যায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আইনশৃঙ্খলা অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল, ২০২৪ পাসের জন্য সংসদে উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নুসহ মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ও হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিলটি জনমত যাচাই ও সংশোধনের জন্য বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন।

আইনটি প্রথম ২০০২ সালে দুই বছরের জন্য প্রণীত হয়েছিল। ৭ দফার পর এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আইনটি ২০১৯ সালে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়েছিল এবং বাড়ানো হয়েছিল। এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ এপ্রিল। এদিকে সরকার আইনটি না বাড়িয়ে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি বিলটির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আজ সংসদে বিলটি পাস হয়। বিলটিতে আইনকে স্থায়ী করা ছাড়া আর কোনো সংশোধন করা হয়নি।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার আইন করলে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ বলেছিল এটি একটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। রাজনৈতিক কারণে বা সরকার চাইলে যে কোনো কারণে এই আইন নাগরিকদের হয়রানি করতে পারে। আপনি সেই আইন রক্ষা করেছেন। আমি জানিনা কেন কর ছেন?’

মুজিবুল হক বলেন,”যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, স্থায়ীভাবে আইনটা করবেন, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্যতো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কি এটা বলতে চান- বিএনপি যে আইনটা এনেছিল তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন।”

মুজিবুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল র‌্যাব গঠনের বিরোধিতা করেছে। যে র‌্যাব এখনো বেঁচে আছে, তারা কাজ করছে। প্রয়োজনে আইনের মেয়াদ এক/দুই বছর বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। কিন্তু দ্রুত বিচার আইনকে স্থায়ী করবেন না, যদি করেন তাহলে ভবিষ্যতে একদিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন, সেদিন আফসোস করবেন।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপির আমলে আইনটি প্রথম পাস হয়েছিল। তখন আমরা এবং আজকের সরকারের আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলাম। তারপরও আইনটি পাস হয়েছিল, আজও পাস হবে। আমার প্রশ্ন, যেই হোক। একটি গর্ত খুঁড়ে, তাকে নিজেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজ সেই গর্তে বিএনপি পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ চিরস্থায়ী আইন এনেছে, সেই দিন আর থাকবে না।” না।’ তিনি আইনটিকে স্থায়ী না করে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

পালিত এই  বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আইনটি যখন পাস হয় তখন বাংলাদেশে কোনো অনাচারের পরিস্থিতি ছিল না, ‘সে সময় অনেক ধরনের অপরাধ ছিল, তাই হয়তো আইনটি করা হয়েছিল। তারপর সরকার।” আমি মনে করি আইনের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যাতে তাৎক্ষণিক ন্যায়বিচার পায়। মূল উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেক সংসদ সদস্য আইনের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের জন্য সরকারের কাছে প্রায়ই সুপারিশ করেছেন। শুধু সংসদ সদস্যই নন, অনেকেই আমাদের কাছে আইন ব্যবহারের সুপারিশও  পাঠিয়েছেন। কারণ একটাই, যেন দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয়। সংসদ সদস্যরা কেউ আইনটি বাতিলের কথা বলেননি। কেউ বলেনি আইনের যোগ্য নয়। তারা সময় বাড়িয়ে বলেন, আইন বহাল থাকবে। আইন একই রয়ে গেছে, আমরা কোনো সংশোধন করিনি। কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না যে এই আইনে শাস্তি হয়েছে।

পরে বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সুযোগ নিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইন ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইন করেছিল তখন আপনি কেন বিরোধিতা করেছিলেন? এখন এটা ভাল! আপনি বলেছেন যারা আন্দোলন করছে তারা বলতে পারবে গালি আছে কিনা। আমরা যদি কখনো আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই, তাহলে অপব্যবহার হয়েছে কি না তা আমরা বলতে পারব।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইন যখন আনা হয়েছে তখন মূল উদ্দেশ্য ছিল না। শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইনকে স্থায়ী করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X