November 26, 2024
দুই শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে অজানা ভাইরাসের আতঙ্ক

দুই শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে অজানা ভাইরাসের আতঙ্ক

দুই শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে অজানা ভাইরাসের আতঙ্ক

দুই শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে অজানা ভাইরাসের আতঙ্ক

কুঁড়িয়ে তোলা বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং পরবর্তীতে অজানা ভাইরাসের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের অভাব আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে, নিপাহ ভাইরাস, করোনা ও ডেঙ্গুতে মৃত শিশু ও আইসোলেশনে থাকা বাবা-মায়ের পরীক্ষা নেগেটিভ আসায় চিকিৎসকরাও অজানা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। খেজুরের রস পরিহার করাসহ ফল খাওয়ায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জ্বর, বমির পর সারা শরীর কালো দাগে ভরে গেছে। এমন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুই বোন। চিকিৎসা তো দূরের কথা, রোগ নির্ণয়ের সময়ও পাননি চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা মনে করছেন তারা অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। মৃত্যুর তদন্তে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আসছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।

জানা গেছে, হঠাৎ জ্বর ও বমিতে আক্রান্ত হয়ে দুই বছরের শিশু মুনতাহা মারিশা ও তার চার বছরের বোন মুফতাউল মাশিয়া মারা যান। তাদের বাবা রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মঞ্জুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা থাকেন রাজশাহীর চারঘাটের সারদা ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে।

উপসর্গ ছিল

মারা যাওয়া দুই শিশুর হঠাৎ জ্বর ও বমি শুরু হয়। মৃত্যুর আগে ও পরে উভয় শিশুরই শরীরে কালো র‍্যাশ ছিল। আর আইসোলেশনে থাকা শিশুদের বাবা-মা এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ দেখাননি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বড় মেয়ে মাশিয়া মারা যান। আর গত বুধবার একই উপসর্গ নিয়ে মারা যান ছোট মেয়ে মারিশা। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে দুই শিশুর বাবা-মাকে হাসপাতাল থেকে বের হতে দেননি চিকিৎসকরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। আর ওইদিন বিকেলে মাশিয়ার মরদেহ স্বজনদের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়। পরে সন্ধ্যায় দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হয়। বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও একই স্থানে দাফন করা হয়।

শিশুটির মা পলি খাতুন জানান, মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের বুয়া (গৃহকর্ত্রী) কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই তুলে ওই দুই মেয়েকে খাওয়ায়। মারিশা এবং মাশিয়া সেই বরইগুলো না ধুয়ে খেয়েছে। তারা সেদিন ভালোই ছিল। পরের দিন বুধবার সকাল ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর হয়। বারবার পানি পান করছিলেন। দুপুরের পর থেকেই বমি শুরু হয়। এরপর তারা মেয়েটিকে মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথে কাটাখালী এলাকায় মারিশার মৃত্যু হয়। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে মাশিয়াও তার দুর্গাপুরের বাড়িতে একই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়াও সারা শরীরে ফুসকুড়ির দাগ হতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি করেন। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর একজন সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, দেশে নিপাহ ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ কয়েকটি ভাইরাস পরীক্ষার পদ্ধতি রয়েছে। আর কোভিড-১৯ এর সময় করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়। অন্য কোন ভাইরাস পরীক্ষার ক্ষমতা নেই। এমতাবস্থায় শিশু দুটি  কোন ভাইরাসে আক্রান্ত তা আদৌ জানা যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা নিপাহ ভাইরাস ও মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার ভয়ে ছিলাম। এই দুটি পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আমরা আশঙ্কা করছি যে দুই শিশু অপরিচিত বরই খেয়ে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। জ্বর, বমি এবং ফুসকুড়ি এবং রোগী দ্রুত মারা যাওয়ার আগে এই রোগের ঘটনা আমি কখনও দেখিনি।

ডক্টর আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এটা কী ভাইরাস তা সরকার খুঁজে বের করতে পারবে। এ জন্য মাশিয়া মারা যাওয়ার আগে তার পেট থেকে কিছু খাবার বের করে সংরক্ষণ করেছিলাম। প্যাথলজি, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাইলে আমরা তা দিতে পারি। পরীক্ষা কিছু প্রকাশ হতেও পারে।

প্যাথলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক-অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘২ শিশুর নিপাহ ভাইরাসের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তারা কী ভাইরাসে আক্রান্ত তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। এ জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থাকবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১টি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজশাহীতে পাঠানো হচ্ছে।.

নগরীর একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ দুই শিশুর মৃত্যুতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X